রোকন রাইয়ান
মে ৩০, ২০১৯, ১০:১৭ এএম
‘জাকাত শব্দটি এসেছে ‘তাযকিয়াতুন’ থেকে। অর্থ- পবিত্র করা, বৃদ্ধি করা, বিশুদ্ধ করা। ক্রমবৃদ্ধি ও আধিক্য অর্থেও ব্যবহৃত হয় শব্দটি।
পবিত্র, বিশুদ্ধ- এমন নামের মাহাত্ম কী?
বিশ্লেষকগণ বলেছেন, জাকাত দিলে মন শান্ত হয়, পবিত্র হয়, দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায়, সম্পদ হয় বরকতপূর্ণ, সে কারণে বিধানটিকে এমন নামে অভিহিত করা হয়েছে।
জাকাত কাকে বলে?
ইসলামের পরিভাষায় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রতি বছর তার সম্পদের যে নির্ধারিত অংশ শরিয়তের নির্দেশ মুতাবেক গরিবদের মধ্যে ব্যয় করতে বাধ্য, তাকে জাকাত বলে।
ফতোয়ায়ে শামিতে এসেছে, কোনো ফকির বা গরিবকে শরিয়ত কতৃক একটি নির্ধারিত অংশের মালিক বানিয়ে দেয়াকে জাকাত বলে। [৩য় খণ্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা]
প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নেসাব পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭)।
জাকাত কীভাবে এলো?
যদিও সব নবীর দাওয়াত, শরয়ী কারর্যক্রম ছিল ভিন্ন, কিন্তু সব নবীর রাসুলের ওপরই দীনের বিধান অবধারিত ছিল। ছিল নামাজ রোজার মতো প্রতিদিনকার পালনীয় আমল। এর পাশাপাশি সম্পদের জাকাতও।
কুরআনে যাকাতের কথা রয়েছে। একইভাবে আছে তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিলে। পবিত্র কুরআনই বিষয়টি আমাদের জানাচ্ছে। মহাগ্রন্থটিতে বর্ণিত হয়েছে, ‘এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা স্মরণ করো, সে সত্যিকার প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী রাসুল ও নবি ছিল। সে তাঁর পরিবারের লোকদের নামাজ ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং তার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন ছিল।’ [সুরা মারয়াম : ৫৪-৫৫]
সুরা তাওবার ১১ নাম্বার আয়াতেও বলা হয়েছে বিষয়টি। ‘যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে আর জাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন, নামাজ, রোজা, জাকাত শুধু উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য নয়। এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্য পালনীয় বিধান। যা পূর্ববর্তীরাও পালন করেছে। তাদেরও ওপরও এমন আবশ্যকীয় বিধানগুলো ফরজ করা হয়েছিল।
জাকাত দেওয়ার ৪টি বিশেষ সুফল
যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সময়মতো তার জাকাত আদায় করে, তারা সওয়াবের অধিকারী হবেন। আখেরাতে পাবেন প্রতিদান। আদায় হবে ফরজ বিধান।
এতো চিরন্তন। কিন্তু এসব ছাড়াও যাকাতের দুনিয়াবী সুফল রয়েছে। এর ফলে ব্যক্তি যাবতীয় সমস্যা ও বিপদাপদমুক্ত থাকবেন বলে ঘোষণা এসেছে হাদিসে।
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুল সা. কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যে ব্যক্তি নিজ সম্পদের জাকাত প্রদান করে তার ব্যাপারে আপনার রায় কী? রাসূল সা. বললেন, যে ব্যক্তি নিজ সম্পদের জাকাত প্রদান করে তার সম্পদে যত সমস্যা (বিপদ) আছে তা দূর হয়ে যাবে। [তারগিব ১ম খণ্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা]
এছাড়া জাকাতকে ইসলামের সেতুন্ধন হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাসুল সা.। আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসটিও তারগিবের ১ম খণ্ডে ৩৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, জাকাত আদায়ের বিশেষ চারটি উপকারও রয়েছে। ১. সদকা-খয়রাতের দ্বারা সম্পদে বরকত হয়। ২. জাকাত দেয়ার দ্বারা আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি দূর হয়ে যায়।
৩. কৃপণতা ও লোভের ব্যপারে জাহান্নামের যেই আযাবের কথা বলা হয়েছে জাকাত দেয়ার দ্বারা তা দূর হয়ে যায়।
৪. আসমানের ফেরেস্তাগণ জাকাত প্রদানকারীর জন্য দোয়া করে। [রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিয়া : ৭৪৯]
আরআর