Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মুমিনের জীবনে নামাজের গুরুত্ব

মুফতী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল

নভেম্বর ২৭, ২০২০, ০৯:৩০ এএম


মুমিনের জীবনে নামাজের গুরুত্ব

সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দরুদ বা শুভকামনা, তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা, রহমত তথা দয়া বা করুণা, ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা। কর্তা, স্থান, কাল ও পাত্রভেদে সালাতের বিভিন্ন অর্থ হয়। 

সালাত শব্দটি সালয়ুন ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ হলো আগুনে পুড়ে কোনো বস্তুকে নির্ধারিত আকার দেওয়া। বিশেষ করে বেত, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তির ও ধনুকের ছিলা তৈরি করা। সালাতের এসব আভিধানিক অর্থের সঙ্গে এর অন্তর্নিহিত আবেদনের মিল রয়েছে।

সালাত শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ইবাদত সম্পাদন করা। এর মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হলো ফরজ, যথা: ফজর বা ভোরের সালাত; জোহর বা দ্বিপ্রহরের সালাত; আসর বা বিকেলের সালাত; মাগরিব বা সান্ধ্যকালিন সালাত; ইশা বা রাত্রকালিন সালাত।

প্রত্যেক মুসলমানের উপর দিবা রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। যে মুসলমান ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিবে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নামাজের শিক্ষা, গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। নামাজ আদায়ের ব্যাপারে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বিরাশি বার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

বিশ্ব নবী (সা.) অসংখ্যবার নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপযের্র কথা বর্ণনা করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। 

যদি নামাজ ঠিক থাকে তবে অন্যান্য আমলও সঠিক বলে প্রমাণ হবে। আর যদি নামাজের হিসাবে গরমিল হয়, অন্যান্য আমলও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে, (তিরমিজি-১/২৪৫)।

নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে, আখিরাতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। হজরত নাওফেল ইবনে মুয়াবিয়া (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘যার এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল তার যেন ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ও ধন-দৌলত সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হলো।’ (ইবনে হিব্বান-৪/৩৩০)।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নামাজের পাবন্দি কর- দিনের দুপ্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে। নিঃসন্দেহে সৎ কাজসমূহ অসৎ কাজসমূহকে মিটিয়ে দেয়, (সূরা হূদ, ১১৪)। নামাজের ব্যাপক কল্যাণসমূহের উল্লেখযোগ্য একটি হলো নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নামাজের পাবন্দি কর, নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, (সূরা আনকাবুত, ৪৫)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি এরূপ সৎকর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করি না, (সূরা আরাফ, ১৭০)। 

নামাজের গুরুত্ব এতটাই যে, মুসলমান ও অন্য ধর্মের লোকদের মধ্যে পার্থক্যই হলো নামাজ। হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে,  রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের শিরক এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্য নামাজ ছেড়ে দেয়া, (মুসলিম:২৪৭)। 

সকল নবীর দাওয়াতের দ্বিতীয় ধাপ স্বরূপ নামাজকে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের এছাড়া কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে এবং নামাজ কায়েম করবে, (সূরা বাইয়্যিনাহ, ৫)।
সালাত মুসলিম জীবনের অপরিহার্য একটি বিষয়, যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, বৈষয়িক, ইহলৌকিক,  পারলৌকিক, জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং স্বীয় সত্তা ও সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধ বিশেষ। 

হায়াতের প্রতিটি পরতে-পর্যায়ে ও স্তরে সালাতের সঙ্গে সময় সম্পৃক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিঃসন্দেহে সালাত বিশ্বাসীদের ওপর সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আবশ্যকীয় করা হয়েছে, (সূরা নিসা, ১০৩)।

সালাত সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা দিয়ে, দায়িত্বপরায়ণতার দীক্ষা দিয়ে, পবিত্র অনুভব ও আবেগের এমন এক স্বর্ণালি শৃঙ্খল রচনা করে, যা আপাতদৃষ্টিতে মানুষকে কেবল শৃঙ্খলিতই করে না; উপরন্তু তা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে পবিত্র দাসত্বের বন্ধনের মাধ্যমে অপরাপর সব বন্দিত্ব থেকেও মুক্তি দেয়। সালাতের প্রতিষ্ঠা দীন ও অস্তিত্বের প্রতিষ্ঠা।

যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তাদের আমলনামায় কোনো গোনাহ থাকবে না। নামাজ বান্দার আমলনামা থেকে গোনাহগুলোকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়।

 হজরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বলতো, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা উত্তরে বললেন- না, কোনো ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর রাসূল (সা:) বললেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত এমনই। এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক নামাজির সব গোনাহ মাফ করে দেন, (বুখারি:৫০৩)।

হজরত হানজালা উসাঈদী (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা:) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ পাবন্দীর সাথে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে, রুকু-সিজদা ঠিকমতো আদায় করে এবং এভাবে নামাজ আদায়কে নিজের ওপর আল্লাহ তায়ালার হক মনে করে, তবে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দেয়া হবে, (আহমাদ, ৪/২৬৭)। 

পরকালে সাফল্যে লাভের চাবিকাঠি হলো নামাজ। পরকালে নাজাত পেতে হলে, দুনিয়ার জিন্দেগিতে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। নামাজি ব্যক্তিরাই জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হবেন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ওই সব ঈমানদার সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে খুশু-খুজুর সাথে আদায় করে, (সূরা মুমিনুন:১-২)।

কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিদের প্রতিদান দেবেন। যারা দুনিয়াতে নামাজ কায়েম করেছে, জাকাত প্রদান করেছে, সে দিন তারা আনন্দ-উল্লাস করতে থাকবে। তাদের জাহান্নামের কোনো ভয় থাকবে না। আর দুনিয়ার বেনামাজিরা, সে দিন হা-হুতাশ করতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনরা নামাজ আদায় করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তার রসুলের আদেশ মেনে চলে এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন।’ (সূরা তওবা, ৭১)।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করার জন্য মহান আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন, আমীন।

লেখক : প্রভাষক (আরবী বিভাগ), চাটখিল কামিল মাদরাসা, নোয়াখালী। 

আমারসংবাদ/এআই