ধর্ম ডেস্ক
মে ১৯, ২০২১, ০৭:৫০ এএম
মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মুসলিমদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্দেশনাই দিয়ে রেখেছেন আল্লাহ তা’আলা। কেয়ামত পর্যন্ত একজন মানুষকে কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে সমাজ চালাতে হবে, কীভাবে দেশ শাসন করতে হবে- সব বিষয়েই এই গ্রন্থে রয়েছে আদেশ-উপদেশ। এমনকি কারা মুসলিমদের শত্রু-মিত্র- সে সম্পর্কেও সুস্পষ্ট বিধান বর্ণনা করা হয়েছে, যা পৃথিবী ধ্বংসের মুহূর্ত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এরই ধারাবাহিকতায় পবিত্র কোরআনের বিশাল অংশজুড়ে আলোচনা করা হয়েছে ইহুদিদের চরিত্র। সুরা আল-মায়েদার ৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
’হে রাসুল! তাদের জন্য দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলে, আমরা ইমান এনেছি, অথচ তাদের অন্তর ইমান আনেনি। আর যারা ইহুদি তারা মিথ্যা বলার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করে। (তাদের মধ্যে) যারা আপনার কাছে আসেনি তারা অন্য দলের গুপ্তচর। তারা (আল্লাহর) কালামকে স্বস্থান থেকে পরিবর্তন (বিকৃত) করে। তারা বলে, যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও, তবে তা গ্রহণ কোরো আর যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্য আল্লাহর কাছে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। তারা এমনই যে আল্লাহ তাদের অন্তরকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য দুনিয়ায়ও রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে রয়েছে বিরাট শাস্তি।’
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছিরে বলা হয়েছে- আলোচ্য আয়াতে এবং পরবর্তী আয়াতে ইহুদিদের অনিষ্টতা ও দুশ্চরিত্রের কিছু বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে:
প্রথমত, ইহুদিরা মিথ্যা ও ভ্রান্ত কথাবার্তা শোনাতে অভ্যস্ত। তাদের পাদ্রিরা তাওরাত শরিফ বিকৃত করে যেসব বিধান ও অমূলক কিসসা-কাহিনী তাদের শোনাত, সাধারণ ইহুদিরা তা-ই মেনে নিত। দ্বিতীয়ত, ইহুদিদের শ্রেণিভুক্ত মুনাফিকরা গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল। ধর্ম অনুসরণের জন্য নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে তারা বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জেনে ইহুদিদের কাছে বলে দিত।
তৃতীয়ত, ইহুদিদের বদ অভ্যাস ছিল, ঐশী গ্রন্থের বিকৃতি সাধন। তারা আল্লাহর কালামকে যথার্থ স্থান থেকে সরিয়ে তার ভুল অর্থ করত। আর আল্লাহর নির্দেশকে বিকৃত করত। তারা আল্লাহর কালামের শব্দগত ও অর্থগত উভয় প্রকার বিকৃতিতেই অভ্যস্ত ছিল। চতুর্থত, ইহুদিদের বদ অভ্যাস ছিল, ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণ। মূলত ইহুদিদের অনৈতিক অপরাধগুলো আলোচনা করে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল-কোরআন বলছে, ইহুদিরা সবচেয়ে অভিশপ্ত ও ঘৃণিত জাতি। মুসলিমদের চরম শত্রু। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব থেকে শূকর-বানরে রূপান্তরিত হওয়া তাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস। মুহাম্মাদ (স.)-এর আগমনে যাদের শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যারা ষড়যন্ত্রের জঘন্যতম ফাঁদ পেতেছিল নবীজির জন্য। ইসলামের আলো নিশ্চিহ্ন করার জন্য আশ্রয় নিয়েছে সব ধরনের কূটকৌশলের। রক্তপিপাসু, যুদ্ধংদেহী এ জাতি সম্পর্কে কোরআন কী বলে তা আমাদের সবিস্তারে জানা থাকা উচিত। কারণ, শত্রুদের প্রকার-প্রকৃতি, চিন্তা-ভাবনা, প্রতিপক্ষের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখা বিচক্ষণতার পরিচয়।
ইহুদি জাতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থ ‘তালমুদ’। এটি তাওরাতের মতো নয়, শুধু ইহুদিদের মৌখিক আইন হিসেবে পরিচিত। এতে তারা নিজেদের সুবিধামতো বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে। ‘তালমুদ’ তার অনুসারীদের ভ্রষ্টতার সুদূর প্রান্তরে নিক্ষেপ করেছে। তাদের অন্তরে বপন করে দিয়েছে আমিত্ব ও দাম্ভিকতার আত্মঘাতী বীজ।
তারা আল্লাহর সত্তার ব্যাপারে বিকৃতির শিকার। মহান আল্লাহর ব্যাপারে তাদের বক্তব্য এমন জঘন্য, যার কারণে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়। পৃথিবী খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে। পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে, উযাইর (আ.) আল্লাহর পুত্র। (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ বলেন ‘ইহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র। এবং খ্রিষ্টানরা বলে, মাসিহ আল্লাহর পুত্র।’ (সুরা তওবা: ৩০)।
তাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। মুসা (আ.) এর সঙ্গে তাদের কথা বলার ধরন লক্ষ্য করুন ‘হে মুসা, আমরা জীবনেও সেখানে যাব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ করো; আমরা এখানেই বসে থাকব।’ (সুরা মায়েদা : ২৪)।
বিকৃত ‘তালমুদ’ তাদের শিখিয়েছে যে, আল্লাহ মানুষের মতোই। তার সঙ্গে লড়াই করা যায়। সেখানে হারজিতও আছে। আল্লাহ কাঁদেন। লজ্জিতও হন। (আল্লাহ মাফ করুন। আসমান-জমিনের মহান প্রতিপালক তাদের আরোপিত দোষত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পূতঃপবিত্র)।
নবিদের সঙ্গে তাদের নোংরা আচরণের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। ইতিহাস আস্থার সঙ্গে সব লিপিবদ্ধ করে রেখেছে। এই অভিশপ্তরা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচনা করেছে শুধু নবিদের রক্ত দ্বারা। তারা জাকারিয়া (আ.)-কে হত্যা করেছে। ইয়াহইয়া (আ.)-কে হত্যা করেছে। ঈসা (আ.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। কতবার চেষ্টা করেছে আমাদের প্রিয় নবিজি (সা.)-কে হত্যা করতে! খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেয়ার ঘটনা কি ইতিহাস ভুলে যাবে? নবীজি মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, ‘খাইবারের সেই বিষাক্ত খাবার আমাকে আজও পীড়া দিয়ে যায়। এই তো আমার ধমনি বন্ধ হওয়ার সময় চলে এসেছে!’
আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুলদের সঙ্গে তাদের কুকর্মের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘তবে কি যখনই কোনো রাসুল তোমাদের কাছে এমন কিছু নিয়ে এসেছে যা তোমাদের মনঃপূত নয়। তখনই তোমরা দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছ এবং কতককে অস্বীকার করেছ, আর কত কে হত্যা করেছ?’ (সুরা বাকারা : ৮৭)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘বলো, যদি তোমরা মুমিন হতে, তবে অতীতে কেন আল্লাহর নবিদের হত্যা করেছিলে?’ (সুরা বাকারা : ৯১)।
বিকৃত ‘তালমুদ’ তাদের শিক্ষা দেয় নবিরা হলেন বিশ্বাসঘাতক, খুনি, নেশাগ্রস্ত ও প্রতারকদের একটি দল। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের মুখনিঃসৃত বাক্যও কী সাংঘাতিক! তারা শুধু মিথ্যা বলে।’ (সুরা কাহফ: ৫)।
মূলত এই ঘৃণ্য জাতির অন্তরে আল্লাহ তায়ালা মোহর এঁটে দিয়েছেন। ফলে সেগুলো হয়ে পড়েছে কালো, রুগ্ন। পাথরের মতো শক্ত কিংবা তার চেয়েও পাষাণ্ড। ‘তারা বলে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং কুফুরির জন্য আল্লাহ তাদের লানত করেছেন। সুতরাং অল্পসংখ্যকই ঈমান আনে।’ (সুরা বাকারা : ৮৮)।
তাদের অন্তরজুড়ে হিংসা-বিদ্বেষের বসবাস। সারাক্ষণ অন্যের ক্ষতি করার ফন্দি আঁটতে ব্যস্ত। ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর আরেকটি অন্ধকার কবর যেমন, তাদের অন্তরের অবস্থাও তেমন। সেগুলোর ভেতর সর্বদা আগুন জ্বলতে থাকে। অন্যকে কষ্ট দিতে পারলেই সে আগুন কিছুটা প্রশমিত হয়! তাই তো দেখা যায়, তারা শুধু দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিখা জ্বালাতে ব্যস্ত। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোই যেন তাদের একমাত্র মহাকর্ম। আল্লাহ বলেন, ‘যতবার তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে ততবার আল্লাহ তা নির্বাপিত করেন এবং তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে বেড়ায়। আর আল্লাহ পছন্দ করেন না বিশৃঙ্খলাকারীদের।’ (সুরা মায়েদা : ৬৪)।
তারা নিজেদের মনে করে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র শ্রেষ্ঠ জাতি। শুধু তাই নয়; ‘তারা বলে, ইহুদি-খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুরা বাকারা : ১১১)। কারণ, তারা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়জন (নাউজুবিল্লাহ)।
অন্যান্য জাতি তাদের দৃষ্টিতে একেবারেই হীন ও নিকৃষ্ট। তাই অন্য কাউকে তারা তা নিজেদের ধর্মের প্রতি আহ্বান করে না। বরং তারা তো ইহুদি ছাড়া অন্যদের চতুষ্পদ জন্তু মনে করে তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের জন্য বৈধ করে নেয়। আল্লাহ বলেন, ‘এটা এজন্য যে, তারা বলে রেখেছে, উম্মিদের অধিকার বিনষ্ট করাতে আমাদের কোনো পাপ নেই।’ (সুরা আলে ইমরান : ৭৫)।
এরা এমন জাতি, যারা দুনিয়ার মোহে সর্বদা বুঁদ হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চই আপনি লক্ষ্য করবেন, তারা জীবনের প্রতি সব মানুষ; এমনকি মুশরিক অপেক্ষায়ও অধিক লোভী।’ (সুরা বাকারা : ৯৬)। এজন্য তারা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করে। ক্রয়-বিক্রয়ে চতুরতার আশ্রয় নেয়। নির্দ্বিধায় সুদ ভক্ষণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল তা ছিল) তাদের সুদ গ্রহণের জন্য। যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ হ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের, তাদের জন্য আমি মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।’ (সুরা নিসা : ১৬১)।
এতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। দুনিয়ার লোভে তারা আসমানি বিধিবিধানেও বিকৃতি সাধন করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর আয়াতগুলো তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে।’ (সুরা তাওবা : ৯)। এদের রক্তে-মাংসে মিশে গেছে মিথ্যা আর প্রতারণা। আল্লাহ বলেন, ‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অতি আসক্ত।’ (সুরা মায়েদা : ৪২)। প্রতিশ্রুতি, চুক্তি ও নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই তাদের অভিধানে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি যখনই তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে, তখনই তাদের কোনো একদল তা ভঙ্গ করেছে।’ (সুরা বাকারা : ১০০)।
তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার ধারা একদিনের নয়, বরং তা চলে আসছে যুগযুগ ধরে, বংশ পরম্পরায়। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি সর্বদা তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সবাইকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখবেন।’ (সুরা মায়েদা : ১৩)।
সুতরাং দুনিয়াপ্রীতি ও বিশ্বাসঘাতকতায় পূর্ণ এবং কাপুরুষতায় ছাওয়া এসব অন্তর কখনও আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ কিংবা শাহাদাত বরণের কথা কল্পনাও করতে পারে না। নারী কিংবা দুর্বলদের ওপরই তাদের ক্ষমতা ও দাপট সীমাবদ্ধ। প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সৎসাহস নেই তাদের আদৌ। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। তারা যুদ্ধ করবে শুধু সুরক্ষিত জনপদে অথবা দুর্গপ্রাচীরের আড়াল থেকে। তাদের পারস্পরিক যুদ্ধই প্রচণ্ড হয়ে থাকে। আপনি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করেন; কিন্তু তাদের অন্তর শতধাবিচ্ছিন্ন। এটা এ কারণে যে, তারা এক কাণ্ডজ্ঞানহীন সম্প্রদায়।’ (সুরা হাশর : ১৪)।
ইহুদিদের সম্পর্কে উল্লেখিত এসব তথ্য রূপকথার গল্প নয়। এগুলো তাদেরই কুকর্মের টুকরো অংশ। বর্ণনা করেছেন স্বয়ং তাদের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন। তাদের ব্যাপারে তার চেয়ে ভালো কে জানতে পারে?
আজ অবধি তাদের চরিত্রে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি। তারা যেমন ছিল, তেমনি আছে। যতদিন বিকৃত ‘তালমুল’ তাদের চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করবে, ততদিন পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। কারণ, তাদের অতীত ও বর্তমানের চিত্র অভিন্ন। নবীযুগে হুআই ইবনে আখতাব বলেছিল, ‘মুহাম্মদের সঙ্গে আমার শত্রুতা চলবে আমৃত্যু।’ এই উম্মতের একটা বিষাক্ত বিষফোঁড়া ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। অতীতে ইহুদিরাই তাকে জন্ম দিয়েছে। ফেতনার এমন আগুন সে উস্কে দিয়েছিল, যা উসমান (রা.) এর প্রাণ হরণ করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছে!
অতীতে তারাই বিশ্বযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে। উসমানি খিলাফতের পতন ডেকে এনেছে! এতসবের পরও আজকের ইহুদিরা কীভাবে সাধু হতে পারে? তারা তো নিকৃষ্ট পূর্বসূরির নিকৃষ্ট উত্তরসূরি! আজ পুরোনো সেই বিদ্বেষেরই পুনঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে তারা। আল্লাহ বলেন, ‘শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য।’ (সুরা আলে ইমরান : ১১৮)।
বর্তমান ইহুদিদের স্বরূপ দেখুন। ইসরাইলের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন একবার এক বক্তব্যে বলেছিল, ‘শোন হে ইহুদিরা! শত্রুদের (মুসলমানদের) নিঃশেষ না করা পর্যন্ত তোমাদের প্রশান্তি অনুভব করা উচিত নয়। যতদিন না আমরা ইসলামি সভ্যতাকে ধ্বংস করে তার বিপরীতে কোনো নবসভ্যতা দাঁড় করাতে পারছি, ততদিন তোমাদের সামান্য সহানুভূতি কিংবা নমনীয়তা প্রকাশের সুযোগ নেই।’ প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিওন বলেছে, ‘আমরা দেশের গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র কিংবা অন্য যে কোনো আন্দোলনের তোয়াক্কা করি না। আমাদের আশঙ্কাস্থল একমাত্র ইসলাম। এই উদ্ধত শক্তি দীর্ঘদিন পর আজ আবার সরব হতে শুরু করেছে!’
স্পষ্ট হয়ে গেল, আজকের ইহুদি গতকালের ইহুদির চেয়ে কোনো অংশেই ভিন্ন কিছু নয়। ভবিষ্যতেও এদের স্বরূপ এক ও অভিন্ন থাকবে। বাহ্যিক কাঠামোতে ভিন্নতা থাকলেও তাদের অন্তর সব একতাবদ্ধ। যে অপরাধ আজকের ইহুদিরা করে চলেছে, তা নতুন কিছু নয়। ‘ইসরাইল’ রাষ্ট্র গঠনের সময় ইহুদিদের যে দলটি সক্রিয় ছিল, তারাও একই অপরাধে অপরাধী। গাজায় আজ তারা ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। আজ যারা তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তাদের গুরু সেজে বসে আছে, তারা তো সেসব পূর্বসূরির মানসসন্তান, যাদের চিরায়ত অভ্যাস হলো হত্যা, লুণ্ঠন ও জবরদখল।
সুতরাং ইসরাইলের মাটিতে ইসলাম ও ইসলামের নবির সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্রগুলোর যে ঘৃণ্য আচরণ ছিল ও চলছে, তা যে সাড়ে ১৪০০ বছরের সেই ধারাবাহিক শত্রুতারই অংশবিশেষ তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। ধমনিতে যতদিন রক্তপ্রবাহ থাকবে, হৃদয়ে থাকবে স্পন্দন, তাদের সঙ্গে অব্যাহত থাকবে আমাদের শত্রুতা চিরন্তন!