Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

ঈমান রক্ষায় খাব্বাব (রা.)-এর আপোসহীন আত্মত্যাগ

ধর্ম ডেস্ক

অক্টোবর ১, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম


ঈমান রক্ষায় খাব্বাব (রা.)-এর আপোসহীন আত্মত্যাগ

খাব্বাব (রা.) ইসলামের ইতিহাসের সেই বীর, যিনি সর্বপ্রথম স্বীয় ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি তাঁর মনিব উম্মে আন্মারের কানে গেলে তিনি ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। এবং সিবা ইবনে আব্দুল উজ্জাসহ বনু খুজাআর কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে সোজা উপস্থিত হন খাব্বাবের দোকানে। তখন তিনি গভীর মনোযোগসহ কাজ করছিলেন। সিবা এগিয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, খাব্বাব, তোমার সম্পর্কে আমরা যা শুনেছি, তা কি সত্য? তিনি অকপটে জবাব দেন, হ্যাঁ, সত্য। আমি তোমাদের মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং মোহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছি। কথাগুলো বলতেই তারা তাঁর ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।

প্রচণ্ড মারধর করে দোকানের হাতুড়ি ও লোহাজাতীয় সরঞ্জাম তাঁর গায়ে ছুড়ে মারে। ফলে তিনি মুহূর্তেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর সারা শরীর রক্তে ভিজে যায়। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা ২/৮৩)

এখানেই শেষ নয়, এরপর থেকে তার ওপর শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। প্রায়-ই লোহা গরম করে তাঁর মাথায় ঠেকানো হতো। ঠিক দুপুরে আরবের মাটি যখন উত্তপ্ত হতো, তখন তারা খাব্বাব (রা.)-এর পোশাক খুলে তাঁকে লোহার বর্ম পরাত। এর পর অগ্নিঝরা রোদের মধ্যে ফেলে রাখত। প্রচণ্ড রোদে তিনি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়তেন। পাষণ্ডরা তাঁকে এক ফোঁটা পানিও দিত না। কঠিন পিপাসায় যখন তিনি ছটফট করতেন, তখন তারা তাঁকে ইসলাম ত্যাগ করার প্রস্তাব দিত। কিন্তু এমন কঠিন অবস্থায়ও তিনি দীপ্ত কণ্ঠে একত্ববাদের সত্যতা এবং পৌত্তলিকতার অসারতার কথাই বলতেন। এভাবে তারা নিত্যনতুন পদ্ধতিতে খাব্বাব (রা.)-কে নির্যাতন করত। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা : ২/৮৪-৮৫)

তাঁকে দেখে অন্য নওমুসলিমরা অনুপ্রাণিত হলো। আস্তে আস্তে অন্যরাও নিজেদের ঈমানের কথা প্রকাশ করতে শুরু করল। এতে কাফিরদের মাথাব্যথা দিন দিন বাড়তে লাগল। তাদের কাছে এখন এক খাব্বাব জাতীয় জটিল সমস্যা। কাফিররা কাবাচত্বরে পরামর্শসভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিল, মুহাম্মদের অনুসারীদের ওপর নির্যাতনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে; বরং মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। হয়তো তারা নতুন ধর্ম ত্যাগ করবে, না হয় মরে যাবে। এবং তারা তা-ই করতে শুরু করল। একদিন কাফিররা লোহা গরম করে খাব্বাব (রা.)-এর মাথায় ঠেসে ধরেছে। ঠিক ওই সময় রাসুল (সা.) তাঁর পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। নিষ্ঠুর এই আচরণ দেখে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। মোমের মতো গলে গেল তাঁর হৃদয়। চুরচুর হয়ে গেল তাঁর অন্তর। তিনি খাব্বাবকে সান্ত্বনা দিলেন, আর আকাশের দিকে দুহাত তুলে কায়মনোবাক্যে দোয়া করলেন হৃদয় উজাড় করে—হে আল্লাহ, আপনি খাব্বাবকে সাহায্য করুন। (রিজালুন হাওলার রাসুল : ১/১৭০)

নিষ্ঠুর কাফিররা ঈমানহারা করতে তাঁকে শুধু শারীরিক নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং আর্থিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমেও তাঁকে নিদারুণ কষ্টে ফেলে দিয়েছিল। তরবারি তৈরিতে তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। ইসলাম গ্রহণের কারণে দুষ্টু কাফিররা তাঁর পাওনা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাল। তিনি বলেন,

এত কিছুর পরও খাব্বাব (রা.) তাদের সঙ্গে আপস করেননি, তিনি নিজের জীবনের চেয়েও ঈমানকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আমৃত্যু ইসলামের ওপর অটল থেকেছেন।

আমারসংবাদ/আরএইচ