Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

ইলমে হাদিসের তাৎপর্য

ধর্ম ডেস্ক

নভেম্বর ১৬, ২০২১, ০২:২৫ পিএম


ইলমে হাদিসের তাৎপর্য

একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে,পবিত্র কুরআনের পরে ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হল-রাসুল স. এর পবিত্র হাদীস। মূলত কিতাবুল্লাহ ও হাদীসে রাসুল স.দ্বীনে ইসলামের মূলভিত্তি।

এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা অর্থাৎ এ কথা বলা যে, কুরআনই দ্বীনের একমাত্র ভিত্তি, যা ইসলামের সাথে চরম শত্রুতা বৈ কিছুই নয়। অতএব,হাদীস ব্যতিত শুধু কুরআন দ্বারা ইসলামের পূর্ণরূপ বিকশিত হতে পারে না। উম্মতের ঐক্যমতে কুরআনই হল ইসলামের মূলভিত্তি এবং পূর্ণাঙ্গ সংবিধান;কিন্তু তা হল একটি সংক্ষিপ্ত কিতাব,যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। আর রাসুল স. হলেন এর ব্যাখ্যাকার এবং তাঁর কর্মবহুল জীবন হল এই কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। যেমনঃ আল্লাহ তা’লা বলেন, و أنزلناإليك الذكرلتبين للناس ما نزل إليهم ولعلهم يتفكرون
অর্থ: আমি এই কুরআন আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি,যাতে মানুষের প্রতি অবতীর্ণ বিষয় গুলো আপনি সঠিকভাবে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন।(সূরা নাহল-৪৪)

ইলমে হাদীস দুই প্রকার: ক. علم الحديث بالرواية খ. علم الحديث بالدراية ১. যে শাস্ত্র অধ্যায়ন করলে রাসুল স. এর কথা ও কাজের বর্ণনা এবং বর্ণনাগুলোর মূলপাঠ ও মূলপাঠের শব্দ লেখনরীতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় তাকে علم الحديث بالرواية বলে।

২. আর যে ইলম দ্বারা বর্ণনার বাস্তবতা, শর্তাবলী, প্রকারভেদ,রাবীর অবস্থা, রাবীর শর্তসমূহ,বর্ণনার প্রকারগুলো ও এ সম্পর্কীয় অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়,তাকে علم الحديث بالدراية বলে।(ইবনুল আকফানী রহ.) আল্লামা ইযযুদ্দীন ইবনু জামায়া রহ.(মৃ. ৭৬৭ হি.)
বলেনঃ علم الحديث بالدراية এটি এমন কতগুলি মূলনীতি ও নিয়মের নাম,যার দ্বারা হাদীসের মতন ও সনদের অবস্থা জানা যায়।(কাওয়াইদুত তাহদীস-১/২৮)

ইলমে হাদীসের গুরুত্বঃ আল্লামা ইবনুস সালাহ রহ.(মৃ. ৬৪৩ হি.) বলেন-ইলমে হাদীস হল সকল জ্ঞানের মধ্যে সর্বোত্তম জ্ঞান। এবং উপকারী বিষয় সমূহের মধ্যে সর্বাধিক উপযোগী।

এই জ্ঞানকে কেবলমাত্র উম্মতের বিজ্ঞজনরাই পছন্দ করে। আর নিম্নশ্রেণীর লোকেরাই অপছন্দ করে। এটি এমন একটি জ্ঞান যা ফুনুনাতের মধ্যে সর্বাধিক প্রবেশকারী। বিশেষ করে তা ফেকাহশাস্ত্রে মানুষের চক্ষুদৃষ্টির ন্যায় ভূমিকা রাখে।(উলূমুল হাদীস-৫)

ইমামুযযামান আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ. ৮৫২ হি.) বলেন -তামাম উলুম এর মধ্যে প্রধান যে তিনটি ইলিম রয়েছে (হাদীস,তাফসীর,ফেকাহ) তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটির অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।

যেমনঃ হাদিসের ক্ষেত্রে তো আর বলারই প্রয়োজন নেই। আর দ্বিতীয়ত হল-তাফসীর, এ বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ কথা হল আল্লাহর কালাম সর্বপ্রথম যে বিষয়সমূহের মাধ্যমে তা’বীর করা হয় তা হল আহাদীসে নাবাবীয়্যাহ। আর এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ আহাদীসের ক্ষেত্রে তার প্রমাণিকতা ও মান নির্ণয়ের জন্য দর্শকের প্রয়োজন,যে নাকি শাস্ত্রজ্ঞান সম্বন্ধে পারদর্শী হতে হবে।

কারণ শাস্ত্রজ্ঞান ছাড়া হাদীসের মান নির্ণয় করা অসম্ভব। তৃতীয়ত হল ফেক্বাহ, এ বিষয়ে সম্মানিত ফক্বিহ ও মুফতি মহোদয় দলীল দিতে হলেই নবীজী স. থেকে প্রমাণিত ও মানগত দিক দিয়ে উন্নত হাদীসই পেশ করতে হবে,নতুবা তা জনসম্মুখে প্রত্যাখ্যাত সাব্যস্ত হবে। আর এমন কাজ ইলমে হাদীস সম্পর্কীয় জ্ঞান ছাড়া অসম্ভব।(النكت الوفية ١/٢٢٧)

এছাড়া হাফিজ ইরাকী রহ.(মৃ. ৭২৫ হি.) তিনি বলেন-ইলমে হাদীস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষরিত বিষয়,যার রয়েছে অসীম উপযোগীতা,এবং ইহার উপরই অধিকাংশ বিধানাবলীর নির্ভরতা। পাশাপাশি এই জ্ঞানের মাধ্যমে হালাল-হারাম ও ওয়াজিবাত জানা যায়। (التبصرة والتذكرة ١/٩٧)
অতএব বলা যায় যে,সমস্ত জ্ঞান এর মধ্যে ইলমে হাদীস আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ট। কারণ ইহার দ্বারাই পবিত্র কালামের সঠিক মর্ম জানা যায়, এবং নবীজি স. এর অবস্থা, তাঁর চরিত্র সম্পর্কেও অবগত হওয়া যায়।

আমারসংবাদ/আরএইচ