Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মাগুরা পিটিআই সুপারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

মিরাজ আহম্মেদ, মাগুরা

জানুয়ারি ১৩, ২০২১, ০২:৫৫ পিএম


মাগুরা পিটিআই সুপারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

মাগুরা প্রাইমারী ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট (পিটিআই) এর সুপারেনটেনডেন্ট বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে তিনি দুর্নীতির পাগলা ঘোড়ায় রূপান্তর হলেও ভয়ে কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্টের চেয়ারে বসে তিনি মনগড়া সব ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা উত্তোলন করেন। এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে তিনি সরকারি অর্থ লুট করেননি।

যে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ তিনি হলেন মাগুরা পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট মোসাৎ সাহিদা খাতুন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পিটিআইতে যে সকল বরাদ্দ আসে তার পুরোটাই নিজের মতো করে 'লুটেপুটে' খান।

সূত্র জানায়, মোসাৎ সাহিদা খাতুন সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে মাগুরা পিটিআই এর দায়িত্ব নেবার পর থেকে নানা রকম আর্থিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারি তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না বলে অভিযোগে প্রকাশ।

পিটিআই এর অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে যে সকল বরাদ্দ পেয়েছেন তা হলো বইপত্র সাময়িকি বাবদ ৮ হাজার টাকা স্ট্যাম্প ও সিল বাবদ ৮ হাজার টাকা, অন্যান্য মনোহরি দ্রব্যাদি ক্রয় বাবদ ৩৫ হাজার ৫শত কম্পিউটার মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ ১৯ হাজার ৫শত টাকা, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জমাদি মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ ১৬ হাজার ৩শত টাকা। 

এছাড়াও পিইডিপি-৪ এর বরাদ্দ হতে পরিবহন খাতে ৫০ হাজার টাকা, স্লিপফান্ডে ৮৫ হাজার টাকা, রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ১ লাখ টাকা, ইন্টারনেট বাবদ ৩৬ হাজার ৭শত ২০টাকা, জ্বালানী (মাইক্রোবাস) বাবদ ১ লাখ ৭০হাজার টাকা, অন্যান্য মনোহরী দ্রব্যাদি বাবদ ২২ হাজার ৮শত, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ক্রয় বাবদ ৪ হাজার ৫ শত টাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৬ হাজার টাকা। তিনি প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে কোন কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

প্রসঙ্গত, কোন ভাউচার দোকানদার কর্তৃক প্রদত্ত নয় বরং দোকনদারের নিকট থেকে সাদা ভাউচার ম্যানেজ করে নিজেরা লিখে বিল ভাউচার দাখিল করে উত্তোলিত অর্থ আত্মসাৎ করেন। মাগুরা পিটিআইতে অনুষ্ঠিত গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণ থেকে তিনি করেছেন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। তিনি প্রশিক্ষণে আসা অংশগ্রহনকারীদের নিকট থেকে আবাসন বাবদ ২৮ হাজার টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া অডিটরিয়াম ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা, অডিটরিয়াম ক্লিনিং চার্জ বাবদ ৩ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ কক্ষ ভাড়া বাবদ ১৬ হাজার টাকা, সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া বাবদ ৬ হাজার টাকা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ভাড়া বাবদ ১৬ হাজার টাকা সর্বমোট ৫১ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি কোন অডিটরিয়াম, প্রশিক্ষণ কক্ষ, সাউন্ড সিস্টেম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ভাড়া করেননি বরং পিটিআই ভেন্যুতে পিটিআই এর জিনিস দিয়ে এ সকল কাজ করেছেন অথচ এ বাবদ বিল দাখিল করে বরাদ্দকৃত সব অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষনার্থীদের জনপ্রতি প্রতিদিনের খাবার ভাতা ছিল ৮শ ২০টাকা। তিনি অংশগ্রহণকারিদের অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার খাইয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে খাবারের মূল্য ছিল সব্বোর্চ ৩ শ টাকা। খাবার বাবদ সর্বমোট বরাদ্দ ছিল ২লাখ ২৯ হাজার ৬শত টাকা। এর মধ্যে তিনি খরচ করেছেন ৭৯ হাজার ২শত টাকার। এই খাত থেকে তিনি প্রায় ১ লাখ ৫০হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

এ ব্যাপারে অভিযোগকারী প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকেরা বলেন, এর আগে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অনেক প্রশিক্ষণার্থী ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তাই সব অন্যায় তারা মুখ বুজে সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন।

পিটিআই এর মাইক্রোবাসটি দাপ্তরিক কাজে সামান্য ব্যবহার করেন অথচ জ্বালানী বাবদ বরাদ্দকৃত সমুদ্বয় অর্থ ১ লাখ ৭০হাজার টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। মোটরযান মেরামত বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ ৬৫ হাজার টাকা পেয়েছেন কিন্তু মেরামত না করে তিনি সমুদ্বয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। 

পিটিআই অফিসে ফটোকপি মেশিন থাকা সত্ত্বেও কপি অনুলিপি বাবদ প্রাপ্ত ৬ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। তিনি সরকারি বাসা ভাড়া কর্তন করেন না। সুপারিনটেনডেন্ট (চলতি দায়িত্ব) হলে সুপার কোয়ার্টারে থাকতে হবে এবং সুপার কোয়ার্টারের ভাড়া কর্তন করতে হবে। কিন্তু সুপার কোয়ার্টারের ভাড়া কর্তন না করে প্রতি মাসে বেতনের সাথে বাসা ভাড়া উত্তোলন করেন, ফলে এক বছরে তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা সরকারের ক্ষতিসাধন করছেন।

পিটিআই অভ্যন্তরীন ফান্ডসমূহের মধ্যে ম্যাগাজিন, সাহিত্য সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, কমনরুম, কৃষি, ইউটেনসিল, লাইব্রেরি ইত্যাদি। এ সকল ফান্ড থেকে তিনি অনিয়ম করে টাকা উত্তোলন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করেন, ডিপিএড প্রশিক্ষণকালে প্রত্যেক শিক্ষক কে প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি নানা অজুহাতে তাদের টাকা কম দিয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে মাগুরা পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট মোসাৎ সাহিদা খাতুন তার বিরুদ্ধে ওঠা সব বিষয় আজ ১৩ জানুয়ারি তিনি দৈনিক আমার সংবাদ কে বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে বলেন। কেনো তার সাথে কথা বলতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি নন।  

আমারসংবাদ/কেএস