Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

‘আমার সংবাদ’ এ প্রতিবেদন: রাতের আঁধারে পরিত্যক্ত ঘরে মাদ্রাসা নির্মাণ

জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ১১:৪৫ এএম


‘আমার সংবাদ’ এ প্রতিবেদন: রাতের আঁধারে পরিত্যক্ত ঘরে মাদ্রাসা নির্মাণ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় অস্তিত্বহীন আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে নিয়ে ২০ জানুয়ারি ‘দৈনিক আমার সংবাদ’ এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সভাপতি মোঃ ফিরোজের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে সভাপতি তার এসব কুকর্ম ঢাকতে রাতের আঁধারে তার বাড়ির পরিত্যাক্ত একটি ঘর নির্মান করে এবং ঘরের সামনে ‘আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা’ নামে একটি সাইনবোর্ড সাটিয়ে রাখে। 

জানা যায়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ১৯৮৪ সালে একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ১৯৯২ সালে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ওই মাদ্রাসার নামে যাচ্ছে ১ম থেকে ৫ম শ্রেনীর বই। এলাকাবাসী এ বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থাই গ্রহন করেনি বরং অস্তিত্বহীন ওই মাদ্রাসায় সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক। যিনি সভাপতির স্ত্রী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পৌরসদরের আনোয়ারখালী এলাকায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। কিন্তু কোনো সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় আনোয়ারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আনোয়ারখালী উচ্চ বিদ্যালয়।

২০০৩ সালে বিএনপি সরকার থাকাকালীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিলে আবারও তড়িঘড়ি করে একটি ঘর করে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৫ সালে সরকারি সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় মাদ্রাসা ঘরসহ ফার্নিচার বিক্রি করে চলে যায় মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে ওই মাদ্রাসার নামে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রতিবছর ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত বই নিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যদিও মাদ্রাসাটির কোনো হদিস নেই।

২০১৭ ও ২০২১ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া এক অভিযোগের প্রক্ষিতে জানা যায়, উপজেলার পোড়াবাড়িয়া গ্রামের মো: নেকাব আলী, মাইজ উদ্দিন এবং কোষাকান্দা গ্রামের বিল্লাল উদ্দিন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলো। সেখানে সরকারি সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় ২০০৫ সালে ঘরসহ ঘরে থাকা ফার্নিচার বিক্রি করে চলে যায় তারা।

পরবর্তীতে ওই যায়গা কেউ কেউ বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ আনোয়ারখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবার কেউ ২০১৩ সালে নির্মিত নূরানিয়া হাফিজিয়া ও ফুরকানিয়া মাদ্রাসায় জমি দান করেছেন। যেখানে পূর্বের দেয়া জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় শত শত শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। কিন্তু ২০১৭ সালে ওই আগের যায়গায় মাদ্রাসাটি আছে মর্মে স্বাক্ষর জাল করে আবারো শিক্ষা অফিসে কাগজপত্র দাখিল করে ওই তিন শিক্ষক। তারপর থেকে প্রতিবছর বই যাচ্ছে সেই অস্তিত্বহীন মাদ্রাসাটিতে।

সম্প্রতি ১৩ জানুয়ারি ওই মাদ্রাসাটিতে নিয়োগ দিয়েছেন একজন প্রধান শিক্ষকও। যিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ফিরোজেরর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ ফিরোজ মিয়া জানান, মাদ্রাসাটি আগেই ছিলো, এটা সংস্কার করা হয়েছে। 

পাকুন্দিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম সাইফুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসা নির্মাণের ব্যাপারে তার জানা নেই। আগের অভিযোগগুলোর বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

আমারসংবাদ/এমএ