Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

কালিহাতীতে পাচিং পদ্ধতিতে পোকা দমনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৃষকরা

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 

মার্চ ৮, ২০২১, ০৭:৩৫ এএম


কালিহাতীতে পাচিং পদ্ধতিতে পোকা দমনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৃষকরা

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বোরো ধান ক্ষেতের পোকা দমন করার পাচিং পদ্ধতিতে। ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে রোপা ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। সাধারণত এ অঞ্চলের কৃষকরা দুই ধরনের পাচিং ব্যবহার করছে। 

লাইভ পাচিং ও ডেথ পাচিং। এ প্রযুক্তি প্রয়োগে ধান ক্ষেতে বালাইনাশক প্রয়োজন হয় না। একর প্রতি ক্ষেতে ১২ থেকে ১৫ টি কাঠ দিয়ে টি খুঁটি বানিয়ে কিংবা গাছের ডাল পুতে দিতে হয়। এ পাচিংয়ের (খুঁটি) উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলে।

এর ফলে জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া কৃষকরাও এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষিবিদরা মনে করছেন। 

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামগঞ্জের কৃষকদের ক্ষেতে সবুজের সমারোহ। বাতাসে সবুজ শিষ দুলছে। ক্ষেতের মধ্যে কাঠ দিয়ে টি খুঁটি বানিয়ে ও গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পাচিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েল সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। তবে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দৃর্যোগ না হলে চলতি বছর বাম্পার ফলন পাওয়ার উজ্জল সম্ভাবনায় কৃষকের চোখে মুখে উচ্ছলতা ফুটে উঠেছে। 

কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, মৌসুমে উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে আমাদের লক্ষ মাত্রা আঠারো হাজার ২৫০ হেক্টর ছাড়িয়ে বর্তমানে আঠারো হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে।

কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, ক্ষেতের ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় এ পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেকটা কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। উপজেলার সকল কৃষকের মাঝে এ পাদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

উপজেলার কালিহাতী পৌরসভার ছিলিমপুর গ্রামের হেলাল জানান, চলতি বছরে আমি ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে কোনো খরচ নেই। 

পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ২১০ শতাংশ জমিতে কাঠ দিয়ে টি খুঁটি বানিয়ে এবং বাড়ীর গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুতে দিয়েছি। ঐ ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলেছে। এতে যেমন আর্থিক উপকার হচ্ছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে। 

অত্র ইউনিয়নের শিহরাইল গ্রামের কৃষক মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, আমি ১০০ শতাংশ জমিতে একই পদ্ধতি ব্যবহার করছি। 

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, ক্ষেতের ক্ষতিকারক ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় এ পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেকটা কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। উপজেলার সকল কৃষকের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার জানান, চলতি বছরে পাচিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সকল কৃষকদের পাচিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য আমরা কৃষকদের নিয়ে কাজ করছি। কোনো খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করওেত পারবে কৃষকরা। বর্তমানে উপজেলায় প্রায় শতভাগ কৃষক এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আমারসংবাদ/কেএস