Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

হরিরামপুরে সড়ক সংস্কারে অনিয়ম

মামুন মিয়া, মানিকগঞ্জ

মার্চ ৮, ২০২১, ১২:৩০ পিএম


হরিরামপুরে সড়ক সংস্কারে অনিয়ম

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংস্কার কাজে পিকেট কিংবা এক নম্বর ইট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার সেখানে নম্বরবিহীন ইট ও খোয়া ব্যবহার করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় স্থানীয়দের কেউ কেউ বাধাও দিয়েছেন, কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। তবে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা বলছেন, সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি।  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হরিরামপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আন্দারমানিক বাজার থেকে নয়ারহাট পর্যন্ত ৬ দশমিক ৬১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুটি প্যাকেজে ভাগ করে আহ্বান করা দরপত্রে দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ ২৫০০ মিটার থেকে ৬৬১৫ মিটার পর্যন্ত মোট ৪১১৫ মিটার সড়ক সংস্কারের প্রাক্কলিন ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৮৯ হাজার ৪৫৫ টাকা। 
তবে ৭ শতাংশ লেসে ২ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৭ লাখ টাকায় কাজটির কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস.কে টিম্বার ট্রেডাস। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিলে কাজটি শেষ হওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার।

কার্যাদেশ অনুযায়ী, ১২ ফুট প্রস্থ সড়কটিতে ৩ ইঞ্চি ডব্লিউবিএম-এর সঙ্গে ৪০ মিলিমিটার কার্পেটিং করার কথা। ডব্লিউবিএম-এ এক নম্বর ইট কিংবা পিকেট ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২৫০০ মিটার থেকে শুরু হয়ে কাণ্ঠাপাড়া বাজার পর্যন্ত অংশে ডব্লিউবিএম (খোয়া) ফেলে কার্পেটিংয়ের জন্য বেড তৈরি করা হয়েছে। সড়কের পাশে রাখা ও বেডে ব্যবহার করা খোয়ার অধিকাংশই নিম্নমানের। দেখতে অনেকটা পোড়ামাটির মতো খোয়া ফেলে তৈরি করা হচ্ছে বেড। কাণ্ঠাপাড়া বাজারের পাশে স্তুপ করে রাখা নিম্নমানের খোয়ার পাশেই রাখা হয়েছে কিছু ভালো মানের খোয়া। আর ওই খোয়াগুলোই প্রকৌশলীদের দেখানো হচ্ছে। এতে প্রকৌশলীরাও কাজের মান ভালো বলে সাফাই গাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিচারপতি নুরুল ইসলাম সরকারি কলেজের পাশের ব্রিজ থেকে বেশ কিছু অংশে বেড তৈরি করে রাখা হয়েছে। 

কলেজের কয়েক বাড়ির পরে বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, এখানে কোনো ভালো খোয়া ব্যবহার করা হয়নি। ৩ ইঞ্চি খোয়া ফেলার কথা থাকলেও কম ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও আধা ইঞ্চি খোয়াও ফেলা হয়েছে বলে জানান কাদের। যেখানে সবচেয়ে বেশি খারাপ খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রতিবেদক যখন সরেজিমন সড়কটি দেখতে যায়, তখন সেখানে রোলার মেশিন দিয়ে ডলে বেড তৈরি করা হচ্ছিল। বেড তৈরির সময় দেখা যায়, খোয়াগুলো কাঁদামাটি হয়ে রোলারের সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছে। তিন ইঞ্চি পাইপের পানি দিয়ে একজন শ্রমিক রোলার মেশিন থেকে কাঁদা ছাড়াচ্ছেন। সেখানে ঠিকাদার দুলাল সরকার উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় ২০ বছর ধরে ইটভাটায় ইট তৈরির কাজ করেন জসিম মিয়া (৪২)। সড়কে ব্যবহৃত খোয়া দেখিয়ে এর মান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব খোয়ার কোন নম্বর নেই।

সড়ক সংস্কারে ব্যবহার করা হচ্ছে একতা ও আমিন নামের দুটি ভাটার ইট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই ভাটার একাধিক শ্রমিক নিশ্চিত করেছেন সংস্কার কাজে ব্যবহৃত খোয়া নিম্নমানের। আমিন ইটভাটার মালিক স্বাধীন বলেন, সড়কটিতে একতা নামের যে ইট ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর কোনো নম্বরই নেই। তবে তার ভাটা থেকে এক নম্বর ইট দেওয়া হয়েছে।

তবে স্বাধীন ইটভাটার মালিক শীতল বালু বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ওই সড়কে ব্যবহৃত ৮০ শতাংশ ইটই নিম্নমানের। স্বাধীনের কথার সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, এখানে ভালো মানের ইট বা খোয়ার পরিমাণ খুব কম।

নিজেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার দাবি করে আমিনুল ইসলাম উজ্জল নামের এক ব্যক্তি বলেন, ভালো ইটের মধ্যে কিছু খারাপ ইট চলে আসে। এটা ইটভাটার মালিকরাই করে থাকেন। এ সময় তিনি নিজেকে হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দেন।

জানতে চাইলে কাজের গুনগত মানের সাফাই গান কাজ তদারকির দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইরাজ উদ্দিন দেওয়ান।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল হক বলেন, আমি সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেছি। সেখান থেকে সেম্পল সংগ্রহ করেছি। ল্যাব টেষ্টের পর সঠিন মান জানা যাবে।

আমারসংবাদ/কেএস