Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

কালিহাতীতে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায়

শরিফুল ইসলাম, কালিহাতী (টাঙ্গাইল)

মার্চ ১৫, ২০২১, ০২:১০ পিএম


কালিহাতীতে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায়

আদিমকাল থেকে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের সঙ্গে বাঙালির অস্থিত্ব জড়িয়ে আছে। হাজার বছর ধরে  টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মৃৎশিল্প গড়ে উঠেছে। এক সময়ের অন্যতম এই শিল্প এখন মৃতপ্রায়। বাজারের প্লাস্টিকের তৈরি বাহারি জিনিসপত্রের কাছে নত স্বীকার করেছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রগুলো। সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের কালিহাতীতেও শিল্পটি টিকে রয়েছে কোনরকম। তবে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যের এই পেশা এখনো ধরে রেখেছে কালিহাতীর কয়েকশত কুমার পরিবার। এখনো তাদের নিপুন হাতে গড়ছেন মাটির বাসন-কোসন, সরা, সুরাই, হাঁড়ি-পাতিল, পেয়ালা, মটকা, পিঠা তৈরির ছাঁচ ইত্যাদি। 

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কালিহাতী পৌরসভার উত্তর বেতডোবা, কোকডহরা ইউনিয়ন, নারান্দিয়া ইউনিয়ন, বল্লা ইউনিয়ন, নাগবাড়ী ইউনিয়নে এখনো কয়েকশত কুমার পরিবার এই শিল্পটাকে ধরে রেখেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাটির তৈরি তৈজসপত্রকে যুগোপযোগী করে তুলতে পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে পরিবেশের উপর প্লাস্টিকের যে বিরূপ প্রভাব তা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  এখনো কালিহাতী উপজেলার কালিহাতী পৌরসভার উত্তর বেতডোবার ৪০টি পরিবার, কোকডহরা ইউনিয়নের ৫০টি পরিবার, নারান্দিয়া ইউনিয়নের পালিমা ও পাথালিয়া গ্রামে প্রায় ১০০টি পরিবার, বল্লা ইউনিয়নের বল্লা পাল পাড়ায় ৯০টি পরিবার, নাগবাড়ী ইউনিয়নের ঘোনাবাড়ীতে ১৬টি কুমার পরিবার বসবাস করে আসছেন। 

কুমারপাড়ার মোহন পালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কুমারদের। 

এই শিল্পটিতে টিকে থাকা কুমাররা বলছেন, এ সম্প্রদায়ের লোকজনেরা মাটির তৈরি করা পাকপাতিল, ঠিলা, কলসি, পুতুল, কুয়ার পাট, খেলনার সামগ্রী, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি হাট বাজারে বা গ্রামে গ্রামে বড় ঝাঁকা বোঝাই করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। ছয়মাস ধরে তারা মৃৎশিল্প তৈরি করে আর ছয়মাস বিভিন্ন কায়দায় বিক্রি করতেন। দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে আধুনিকতা। আর এই আধুনিকতা বাড়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পপণ্যগুলো।

কালিহাতী উপজেলার উত্তর বেতডোবার সুরেশ পাল জানান, ব্যবসা মন্দার কারণে আমাদের এখানকার মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী শতাধিক পরিবার পৈত্রিক ভিটা পর্যন্ত ছেড়ে চলে গেছে। প্রায় ৪০০ পরিবারের মতো অন্য পেশায় চলে গেছে। এখন বাপ-দাদার এই পেশা ধরে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার।

কোকডহরা ইউনিয়নের বাড্ডা পাল পাড়া মুন্টু পাল (৮০) এবং খুশিমোহন পাল (৭০) বলেন, ‘আমি ছোট সময় থেকেই মাটি তৈরী শিল্পের কাজ করছি, আমাদের এলাকায়  ৫০টি পরিবার এই কাজই করে। বর্তমানে কাঠের ও মাটির দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’ বাজারে মাটির পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের এ ব্যবসা এখন হুমকির মুখে। ভবিষ্যতে এ পেশা থাকবে কি না তা নিয়ে নিজেরাই রয়েছেন সংশয়ে। 

তারপরও তাদের ধারণা, সরকারের বিসিক বা অন্য কোন সংস্থা যদি সহযোগিতা করে তাহলে তারা আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

আমারসংবাদ/কেএস