Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

কোটি টাকার জায়গা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ চরমে

মিরাজ আহম্মেদ, মাগুরা

এপ্রিল ১, ২০২১, ০৮:৫৫ এএম


কোটি টাকার জায়গা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ চরমে

মাগুরা পারনান্দয়ালী বসত বাড়ির জায়গা-জমি নিয়ে দুই সহোদর ভাইয়ের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। ছোট ভাইয়ের অংশ বুঝে না দিয়ে বড় ভাই ভোগ দখলে রেখে উল্টো ছোট ভাইকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ছোট ভাই বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

প্রাপ্ত অভিযোগ ও সরেজমিন সূত্রে জানা যায়, মাগুরা সদর উপজেলার পারন্দয়ালী মোল্যা পাড়া গ্রামের মৃত্য আব্দুর রশিদ মিয়ার দুই ছেলে ফখরুল ইসলাম ও অলিউল ইসলাম এর মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে আনুমানিক ১৬ বছর।

প্রাপ্ত সূত্রমতে, দুই ভাইয়ের পারনান্দয়ালী মৌজায় জেএল,নং,৩৮ রে,সা,নং ৭৮৯,খতিয়ান নং ১১৪০,দাগ নং ৭২২,১০০৯,১০৯২ অংশ অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৬০০০,৪৭৩১,০৪০০, শতাংশ। পথিমধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে দুই ভাই একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ ও পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন দপ্তরের আনিত অভিযোগের পরে বড় ভাই ফখরুল ইসলাম তুরান কাউকে না জানিয়ে অলিউল ইসলাম এর ভোগ দখলে থাকা বসতবাড়ি হতে তার প্রাপ্য ২৩.৫ শতক জমি অন্যের নিকট বিক্রি করে দেয়।

বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের ভিত্তিতে মাগুরা পৌরসভার সার্ভেয়ার মোঃ আঃ আজিজ শাহিন গত ২৮/০৮/০৫ উক্ত ভাই দের মাঝে বসতবাড়ির জমি মেপে বুঝিয়ে দেন,আর সে ভাবেই চলছে এতদিন, সাম্প্রতিক উক্ত জমি বড় ভাই বিক্রি কালে সরাসরি সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। দুস্কৃতিকারী ও আইন অমান্যকারী উল্লেখ করে ছোট ভাই অলিউল ইসলাম মাগুরা সদর থানা, সাংবাদিক, এন এস আই অনুকূলে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে আইন ও শালীস উপেক্ষা করে বড় ভাই ফকরুল ইসলাম ছোট ভাই অলিউল ইসলাম এর  প্রাপ্য জমি বুঝে না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করে আসছে বলে ছোট ভাই অলিউল সাংবাদিক এর কাছে অভিযোগ তুলেন।

অনেক সময় দেখা যায়, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এক ভাই তার সম্পত্তি অন্য ভাইকে না দিয়ে অপর গ্রামের বা দূরবর্তী কারো কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার পাশের জমির মালিক বা সহ-শরিক ন্যায্যমূল্য দিতে রাজি হলেও দূরবর্তী কেউ বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে দলিলে কম মূল্য দেখিয়ে জমি কিনে নিচ্ছেন। সহ-শরিক বা পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের এসব ক্ষেত্রে উক্ত বিক্রিতব্য সম্পত্তি কেনার এক ধরনের অগ্রাধিকারমূলক অধিকার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ কখনো মারামারি পর্যন্ত গড়াতে দেখা যায়।

কোনো সম্পত্তি বা তার অংশ কোনো সহ-শরিক বা একাধিক সহ-শরিক যদি উক্ত জমির কোনো শরিক ছাড়া অন্য কোনো আগন্তুকের কাছে বিক্রি করে, তাহলে অপর কোনো সহ-শরিক বা শরিকরা অথবা তাদের অনুপস্থিতিতে সংলগ্ন জমির মালিকরা উক্ত সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য ও নির্ধারিত হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে আদালতের মাধ্যমে তা পেতে পারেন। এটাই অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন। কৃষি এবং অকৃষি দু'ধরনের সম্পত্তির ক্ষেত্রেই অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করা যায়।

কার আগে কে অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিকরা সবার আগে এ অধিকার পাবেন। ক্রয়সূত্রে সহ-শরিক সংলগ্ন ভূমির মালিকের ওপর এবং উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিক ক্রয়সূত্রে সহ-শরিকের ওপর অগ্রাধিকার পাবে।

এ ব্যাপারে অলিউল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৩০ই মার্চ বড় ভাই ফখরুল ইসলাম, আসমাউল মালা, বিরোধ এর জমি ক্রেতা নওশের আলী, তানিয়া পারভীন, সাজেদা, শামীম রেজা, সখিনা আক্তার সহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

অলিউল ইসলাম বলেন, বিবাদীরা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষয়ক্ষতির পায়তারা করছেন। আমার ভাগের জমির অংশে যাতায়াতের জন্য পথ না রেখে আমার অংশের জমি জোরপূর্বক ভোগদখল করিতেছেন। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে প্রান নাশের হুমকি প্রদান করে, আমি কলেজ শিক্ষক হওয়ায় আইনের সহায়তা নিয়েছি।

বিষয়টি নিষ্পত্তি করার লক্ষে থানা থেকে মাগুরা এস আই জিয়ার উপর দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। তবে তারা এখনো বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেন নি বলে সরেজমিন থেকে জানা যায়।

অলিউল ইসলাম বলেন, আমি বড় ভাইকে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু সে পরের কথা মতন চলে। আমি তাকে তার প্রাপ্য আমার বসতবাড়ি সংলগ্ন ২৩.৫ শতক জমির পরিবর্তে বাজার মূল্য হিসাবে নগদ টাকা দিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু পরের কথা শুনে সে আমার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টো আমার বসতবাড়ির জমি অন্যের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন।

এখন পারনান্দয়ালী মৌজায় আমার প্রাপ্ত সম্পত্তি বুঝে না দিয়ে সে তালবাহানা করে আসছে এবং সাম্প্রতিক সে এক জন ভিন দেশির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন উক্ত জমি।

মাগুরা জেলার রেষ্টি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৮/৩/২০২১ বড় ভাই ফখরুল ইসলাম ১০০৯ নং দাগের বাস্ত ৪৭৩১ শতাংশ জমির অর্ধের মালিক ২৩.৫০ শতক জমি বিক্রি করে দেন, দলিল সূত্রে বাজার মূল্য দেখা গেছে ১কোটি ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা মাত্র।

নাম না জানা তাদের আরেক ভাই বলেন, ২৩.৫০ শতাংশ সে পাবে, তাই বিক্রি করেছে তাহলে সামনের রাস্তার জমি কোথা থেকে দিলো? 

এদিকে জমি বিক্রি বিষয় জানতে চাইলে বড় ভাই ফখরুল জানান, আমি কারো জমি বিক্রি করি নাই, জমি ঠিক আছে মাপ দিলে পাওয়া যাবে। 

তিনি আরও বলেন, আমার চাচাতো ভাই আমার দুই শতক জমি রেকর্ড করে নিয়েছে। তিনি সাংবাদিক কে উদ্দেশ্য গত করে বলেন, আপনারা আসেন এলাকায় সবার কাছে জানেন তার পর লেখেন।
তবে এ বিষয় নিয়ে গত ১৩ জুন ২০০৫ সালে গ্রামীণ বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রিপোর্ট, তা থেকে বুঝা যায় আজ ২০২১ সাল পর্যন্ত সরাসরি ভাবে এই দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চলে আসছে জমি নিয়ে বিরোধ।

ভাইদের মধ্যে বিরোধ যতই হোক নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে তা মীমাংসা করে ফেলাই উচিত। ভাইদের মধ্যে বিরোধ থাকলে এর প্রভাব তাদের সন্তানদের মধ্যেও পড়ে। যৌথ সংসার থাকলে তাতে ফাটল দেখা যায়। বাবা-মা বেঁচে থাকলে তাদেরও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দেখা দেয়। নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের কথা চিন্তা করেই বিরোধের সুষ্ঠু সমাধান করে নেওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলে সামাজিকভাবেও হেয় হতে হয়। স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার চেয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে প্রয়োজনে কিছুটা স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও সুষ্ঠু সমাধান করে নেওয়া উচিত। ভাইয়ে ভাইয়ে মামলা-মোকদ্দমা মানায় না।

আমারসংবাদ/কেএস