রুপক চক্রবর্তী, শরীয়তপুর সদর
এপ্রিল ৩, ২০২১, ০১:১০ পিএম
সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুর জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন ধানুকা মনসাবাড়ি। এ বাড়ির বেশির ভাগ স্থাপনাই ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু পুুুরনো দালানগুলো এখনো কোনো রকমভাবে রক্ষা করে রেখেছেন বাড়ির শেষ পুরুষ শ্যামাপদ চক্রবর্তী।
শরীয়তপুর জেলায় রয়েছে বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ও বহু প্রাচীন নিদর্শন যার মধ্যে অন্যতম একটি ধানুকা মনসা বাড়ি। ধানুকা মনসা বাড়ি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ধানুকা গ্রামে অবস্থিত আছে এই প্রাচীন নিদর্শন টি। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পেছন দিকটাই ধানুকা গ্রাম। দক্ষিন দিকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হাঁটলেই চোখে পড়ে মনসা বাড়ি।
ধানুকা মনসা বাড়িতে রয়েছে পাচঁ প্রাচীন নিদর্শন। যেগুলো এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। মন্দির বাড়ির পশ্চিম সীমানার মাঝামাঝি পূর্বদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলো প্যাটার্নের দোচালা ছাদবিশিষ্ট দালান। এটাই একসময় মনসা মন্দির হিসাবে ব্যবহার করা হতো।
উওরের প্রান্তসীমায় দক্ষিণ দিকে মুখ করে অপেক্ষাকৃত বড় একটি ইমারত রয়েছে। এটি দোচালা ছাদবিশিষ্ট। এটি দূর্গা মন্দির হিসেবে চিহ্নিত। দুর্গা মন্দিরের দিকে মুখ করে একটু ভিন্ন ডিজাইনের একটি ভবন রয়েছে। ভবনটি দ্বিতল ছিল। দ্বিতল ভবনের দ্বিতীয় তালাটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত।
এর ওপরে ওঠার জন্য ইটের তৈরি সিঁড়ির কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। পশ্চিম দিকে রয়েছে কালীমন্দির। কালীমন্দিরটি ও দোতালা। দক্ষিণে অবস্থিত ইমারতের পেছন থেকে পূর্ব পশ্চিমে ধ্বংস প্রায় একটি বিশাল ভবন রয়েছে। বহু কক্ষবিশিষ্ট এ ভবনটি ছিল দোতালা। ইমারতগুলো নির্মান সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধরনা পাওয়া না গেলে ও এর নির্মানশৈলী ও নির্মান উপকরন দেখে প্রতীয়মান হয়, এগুলো মোগল আমলের নিদর্শন।
কথিত ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে বাড়ির এক কিশোরের অভ্যাস ছিল প্রতিদিন বাগানে গিয়ে ফুল কুড়ানো। একদিন ভোরে ফুল কুড়াতে গিয়ে সে দেখতে পায় বাগানে মস্তবড় এক সাপ। ভয় পেয়ে সে ঘরে ফিরে আসে। পরদিন আবার যথারীতি ওই কিশোর ফুল কুড়াতে যায় বাগানে।
সেদিনও মুখোমুখি হয় সেই সাপের। সাপটি কিশোরের পিছু পিছু বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে তাকে ঘিরে নৃত্য করতে শুরু করে। বাড়ির লোকজন প্রত্যক্ষ করে সে দৃশ্য। রাতে তাদের সামনে স্বপ্নে আর্বিভূত হয় মনসা দেবী। দেবী তাদের মনসা পূজা করার নির্দেশ দেন। এরপরই বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় মনসা মন্দির। আর সেই থেকেই ময়ূর ভট্রের বাড়ি রূপান্তর হয় মনসা বাড়িতে।
[media type="image" fid="118226" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
ধানুকা মনসা বাড়ির বর্তমান কর্তা শ্যামাপদ চক্রবর্তী বলেন, ধানুকা মনসা বাড়ি ৬০০ বছর পুরানো প্রাচীন মন্দির, এটি ধ্বংসের পথে প্রায়। মন্দিরটি যদি সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয় তাহলে রক্ষা করা যাবে। কিছুদিন পূর্বে এই ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি। তিনি এই প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন সংস্করণ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আমারসংবাদ/এআই