Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

মাশরুম চাষে ভাগ্য বদল

মোঃ শরীফুজ্জামান, বাসাইল (টাঙ্গাইল)

এপ্রিল ৮, ২০২১, ০৪:৪৫ এএম


মাশরুম চাষে ভাগ্য বদল

করোনাকালে সৌদী আরব থেকে ছুটিতে এসে পুনঃরায় কর্মস্থলে ফেরত না যেতে পারা প্রবাসী সাইফুল ইসলামের (৩০) অন্ধকার জীবনে আলো জ্বেলেছে মাশরুমের চাষ এবং মাশরুমের তৈরী বিভিন্ন খাবারের সমন্বয়ে একটি ফাষ্টফুডের দোকান। মাশরুমের চাষ করে এখন সে প্রতিদিন প্রবাস জীবনের চেয়েও বেশি উপার্জন করছে। 

পুনঃরায় সৌদিআরব যেতে না পেরে স্ত্রী-কন্যা এবং পরিবারের চিন্তা যখন তার জীবনকে ক্রমাগত অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছিলো তখন বাসাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাশরুম চাষের বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠেন। সেই থেকে সাইফুলের শুরু, এরপর বছর পার হয়ে গেছে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাইফুলকে।

উপজেলার বাসাইল সদর ইউনিয়নের রাশড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম। দুই সন্তান রেখে জীবিকার তাগিদে ২০১৮ সালে সৌদিআরব যান। দুই বছর কাজ করে তিন মাসের ছুটিতে আসেন। ছুটি কাটিয়ে আবারো সৌদি যাবার সময় দেশে পুরোদমে লকডাউনে আটকে যায় সে। 

এদিকে ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। একদিকে সংসারের খরচ অপর দিকে বিদেশ যাবার সময়ের ধার-দেনা এসব মিলিয়ে অন্ধকার নেমে আসে তার জীবনে। একটা কর্মসংস্থানের আশার দ্বারে দ্বারে ঘুরে মনমতন না পাওয়ায় শেষে কৃষির উপরই কিছু করবেন বলে মনস্থির করেন সাইফুল। 

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে সাভার জাতীয় মাশরুম ইনষ্টিটিউটে যোগাযোগ করেন এবং করোনাকালীন সময়ে মোবাইলে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে জুম সিটিং আইডি’র মাধ্যমে ১০ দিনব্যাপী একটি অনলাইন প্রশিক্ষন নেন। এরপর আরো ৭ দিন সাভারে হাতে কলমে বাস্তবমূখী অভিজ্ঞতা শেষে ওখান থেকে বীজ নিয়ে আসেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের বসত ঘরের পাশে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০ হাত একটি ঘর নির্মাণ করেন। ১২/১৫ টাকা দরে ৩৫০টি স্পুন (কাঠের ভূষি, ধানের তুষ, চুন দিয়ে তৌরী) এবং খড়ের (ধানের খড় দিয়ে তৌরী) প্যাকেটের বীজ নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। 

মাত্র ত্রিশদিন পরথেকেই মাশরুম সংগ্রহ শুরু হয় যা প্রতি সপ্তাহে একবার করে পর্যায়ক্রমে আড়াই মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। 

খামারের ফ্লোরে রাখা প্রতিটি স্পুন প্যাকেট থেকে ২৫০ গ্রাম এবং ঝুলিয়ে রাখা খড়ের প্যাকেট থেকে ৫০০ গ্রাম করে মাশরুম পাওয়া যায় প্রতিবার। 

এভাবে ৩৫০টি বীজ থেকে প্রতিবার ৫/৬ কেজি করে মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে সাইফুলের খামারে প্রতি সপ্তাহে মাশরুম সংগ্রহের মতন প্রায় ৭০০ প্যাকেট রয়েছে। 

এ ব্যাপারে মাশরুম খামারের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রবাসের বেকারত্বের অন্ধকার জীবন থেকে মাশরুমের খামার আমাকে আলোর পথ দেখিয়েছে। মাশরুমের খামার এবং মাশরুম ফাষ্টফুড বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় হাজার টাকা উপার্জন করছি। 

১২/১৫টাকার একটি খরের প্যাকেটের বীজ থেকে ৭৫ থেকে ৯০ দিনে তিন থেকে চার কেজি মাশরুম সংগ্রহ করি । বাজারে যার খচরা মূল্য দুইশত টাকা প্রতি কেজি। বাসাইলে মাশরুমের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেটা আমি একা পূরন করতে পারি না। আশা করছি দুই হাজার প্যাকেট বীজ নিয়ে চাষ করতে পারলে এই চাহিদা পূরন সম্ভব হবে। 

তিনি আরো বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে আমি খামার বৃদ্ধি করতে এবং একটি মাশরুম ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। সরকারী সহায়তা পেলে বাসাইলে একটি মাশরুম বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

বাসাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, মাশরুম একটি উপকারী, স্বাস্থ্যসন্মত খাবার। মাশরুম দিয়ে সাবান, পাউডার, স্যুপ, চপসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরি করা যায়। 

[media type="image" fid="118984" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সাভারে প্রশিক্ষণ শেষে সাইফুল ইসলাম মাশরুম খামার করেছে এবং দুই থেকে আড়াই মাস পর প্রতিদিন ৫/৬ কেজি মাশরুম উৎপাদন করতে পারছেন। 

যেকোনো পরামর্শে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময়ই তার পাশে থাকবে। বাসাইলের বেকার যুবকদের জন্য সাইফুল অনুকরণীয়। 

তাকে দেখে বেকার যুবকরা মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে তার আবেদনে সুপারিশ করে সাভারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেবে বাসাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

আমারসংবাদ/এআই