Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

চিরকুটে পেটে সন্তানের খবর জানিয়ে আত্মহত্যা: ৫ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামি

তপু সরকার হারুন, শেরপুর প্রতিনিধি

এপ্রিল ১২, ২০২১, ০৩:৫০ এএম


চিরকুটে পেটে সন্তানের খবর জানিয়ে আত্মহত্যা: ৫ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামি

শেরপুরে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করা সেই স্কুলছাত্রী রাত্রি রহমান ঋতুর মামলার আসামিদের প্রায় ৫ মাসও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ধর্ষক রাশেদ এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। 

রাশেদকে তুমি বাঁচতে দিও না আম্মু। রাশেদের বাচ্চা আমার পেটে’ এমন একটি চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে শেরপুরের ভাতশালা ইউনিয়নের স্থানীয় নতুন কুড়ি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঋতু (১৪)। রাশেদ আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। রাশেদের কারণে আমি আমার জীবন শেষ করে দিলাম।

গেলো বছর ১০ ডিসেম্বর রাতে ওই এলাকা থেকে তার মরদেহ ও একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। 

সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের কুঠুরাকান্দা পশ্চিমপাড়া এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার কুঠুরাকান্দা পশ্চিমপাড়া এলাকার ঢাকায় অবস্থানরত ব্যবসায়ী রহমতুল্লাহ’র মেয়ের সঙ্গে পূর্বপাড়া এলাকার অপর স্কুল ছাত্র রাশেদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে বন্ধুদের সহযোগিতায় ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। 

চিরকুটে লেখা অনুযায়ী, এরমধ্যে সে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। এদিকে রাশেদ প্রেমের সম্পর্ককে অস্বীকার করে। এতে দিশেহারা হয়ে লজ্জায় চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে ওই স্কুল ছাত্রী। পরে রাতেই পুলিশ তার মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

চিরকুটে আরও লেখা ছিলো, মৌসুমি, মেঘলা সাজেদা, আজাদ, খুশি, নিশি, শফিক মোশারফ ও ময়নালের সহায়তায় তার ও রাশেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এ অনৈতিক ঘটনা ঘটে। এছাড়াও রাশেদের কাকা তামজিদসহ তারা সবাই মিলে ওই স্কুল ছাত্রীর জীবনটা শেষ করে দিয়েছে বলে চিরকুটে লেখা পাওয়া যায়। তাদেরকে ক্ষমা না করার জন্য বলা হয়েছে ঐ চিরকুটে।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, রাতেই পুলিশ ওই স্কুল ছাত্রীর মরদেহ ও একটি চিরকুট উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনার পর গেলো বছর ১২ ডিসেম্বর  মা আকলিমা বেগম (শাফিয়া) বাদি হয়ে শেরপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।  মামলা নং-  সদর থানা ৮৭৮/২০২০। 

ডিসেম্বর থেকে গত ৩ মাসে কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়াই ঋতুর “মা”আকলিমা বেগম (সাফিয়া) গেলো ১৯ মার্চ বিকেলে শেরপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার মেয়ের মামলার আসামিদের পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এখনো ধরা ছোয়ার বাহিরে প্রভাবশালী প্রেমিক সেই রাশেদ ও তার সহযোগীরা।

আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছেন না। এছাড়া মেয়ে রাত্রি ওরফে ঋতু অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্টাপাল্টা করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক এসআই আনোয়ার হোসেন এর কাছে আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ঋতুর মা মুঠোফোনে জানতে চাইলে নানা অজুহাত ও তালবাহনা করে থাকেন এবং কথা শেষ না করতেই ফোন রেখে দেন। দায়িত্বে অবহেলা করার কারণেই আসামিরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি। 

শেরপুরের পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন মেয়ে হারা অসহায় সেই গার্মেন্টস কর্মী মা আকলিমা বেগম শাফি।

 ১৯ মার্চ বিকেলে শেরপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন এমন অভিযোগ করেন।

তবে এ বিষয়ে আকলিমা বেগম (শাফিয়া) বলেন, আসামিদের এখনো পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়নি। স্থানীয় একটি কুচক্রী ও দালাল চক্র অপরাধীদের পক্ষে তদবির করছে। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই ।

তবে মামলার তদন্ত অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি আসামি ধরতে।

আমারসংবাদ/এআই