Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

সাংসদের নিকট ছাত্রলীগ নেতার খোলা চিঠি নিয়ে অষ্টগ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি 

এপ্রিল ১২, ২০২১, ০৩:৪৫ পিএম


সাংসদের নিকট ছাত্রলীগ নেতার খোলা চিঠি নিয়ে অষ্টগ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাটি হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলায় গত ১৫ মার্চ ২২ বছর পর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষিত হয়।

উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষিত হওয়ার ৩ দিন পর ১৮ মার্চ অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিহত মীর সেলিম রেজার খবর জিয়ার করেন নবগঠিত কমিটির নেতারা।

উল্লেখ্য, বিএনপি-জামাত সরকারের সময়কালে ১৯৯২ সালের ২ জানুয়ারি তৎকালীন অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর সেলিম রেজা অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরের বড় বাজারে বিএনপির লোকদের হাতে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

কমিটি ঘোষণার ২৭ দিনের মাথায় নবগঠিত অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক শিহাবুল হাসান সৌরভ স্থানীয় সাংসদ রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকের নিকট ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেন যা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-

১৫/৩/২০২১ দীর্ঘ ২২ বছর পর আমাদের অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত আহব্বায়ক কমিঠি যেদিন ঘোষণা হয়েছিল আপনারা জানেন কি সেদিন আমাদের অষ্টগ্রাম উপজেলার একটি বাড়ি আছে যেই বাড়িটিতে রান্না-খাওয়া হয়নি, তাদের চুলায় ওইদিন উনুন ধরেনি, তারা সকলেই অশ্রুশিক্ত হয়েছিল।
আবেগ এবং কষ্ট ধরে রাখতে না পেরে ওই পরিবারের একজন আরেকজনকে ধরে জরিয়ে হাউমাউ করে কেদে তাদের সেই কয়েক যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া ভাই, কয়েক যুগ আগে খুন হওয়া সেই ছাত্রলীগের সেই সাবেক  মীর সেলিম ভাই এর আত্তাকে হয়ত পরিতুষ্টি দিচ্ছিল, হয়ত সেদিন নির্দিষ্ট কোনু একটি নামের জন্য শহীদ মীর সেলিম ভাইয়ের আত্তা এখন আর কবরে ও শান্তিতে নেই, তার বুকটা ছুয়ে দেখতে পারলে বুঝতে পারতাম।

ঠিক তার পরদিন আমরা শহীদ মীর সেলিম ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে ওনার কবরস্থানে যাই।
কবর জিয়ারত শেষে মোনাজাত শেষে আমরা যখন আাসার পথে তখন সেলিম ভাইয়ের পরিবারের একজন বলল তোমরা আসো আমার ভাল লাগে কিন্তু অন্তত খুনি পরিবারের কাউকে নিয়ে আমার ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে এসো না কষ্ট হয়, আমরা মানতে পারি না।

এদের পরিবারের এই কথা শুনে সত্যিই আমি নিতে পারছিলাম না, মনে হল আমরা সেলিম ভাইয়ের আত্মার কাছে কয়েক যুক পর ও আবার প্রশ্নবিদ্ব।

সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই যার জন্য আমরা আমাদের ছাত্রলীগের একজন সাবেক ভাইয়ের রক্ত ঝরার সাক্ষী আর সেই হাতে যদি কলম চলে তবে ছাত্রলীগে খুনি ছারা আর কিছুই জন্ম নিবে না।

এই খোলাচিঠি ফেসবুকে পোস্ট করার পর অষ্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, এই খোলা চিঠির জবাবে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অধ্যক্ষ মুজতাবা আরিফ খাঁন লিখেছেন, চিঠির লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে মিথ্যা পরাজিত হবেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এই খোলা চিঠির জবাবে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ লিখেছেন, যুগে যুগেই কিছু মানুষের জন্ম হয় সত্য সঠিক কথা বলার জন্য। সৌরভ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, তুমি আমাদের মনের কথা গুলো বলার জন্য।

অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিপ্লব হায়দারী লিখেছেন, আমার রাজপথের সহপাঠী যে কিনা তার যৌবনের বেশির ভাগ সময় বিএনপির মামলা হামলার মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এসেছে তার সন্তান তুই, আওয়ামী লীগের রক্ত তোর শরীরে, তোর পক্ষে সম্ভব এই সৎ সাহস দেখানো, সেলিমের সহপাঠী হিসেবে তোকে সালাম জানায়, এ যেন হয় অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সকলের চাওয়া।

কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি রুহুল আমিন লিখেছেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিটা তদেরকেই করতে হবে, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে।

এই খোলাচিঠি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলার নবগঠিত ছাত্রলীগের ২৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শেখ তৌফিকুল ইসলাম তারিফ, যুগ্ন আহ্বায়ক মোঃ শামসুল আলম শামীম, মোমেন শাহ্ মধু, বিল্লাল মিয়া বেলাল, শাহরিয়ার নাদিম, আহমেদ রেজুয়ান সাদ, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সামিরুল আরাফ নৌহাশ, আব্দুল সাত্তার শাওন, এস এম মুন্না হাসান এই খোলা চিঠির জবাবে লিখেছেন, খুনী পরিবারের কেউ উপজেলা ছাত্রলীগের পদে আছে এটাই অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের জন্য কলঙ্ক। আমরা চাই না সেই কলঙ্ক কে কলম দিয়ে আরও শক্তিশালী করা হোক। আশা করি আমাদের নেতা মাননীয় সাংসদ রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক মহোদয় বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবেন, হাইব্রিড মুক্ত অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হোক এটাই প্রতিটি কর্মীর প্রাণের দাবি।

খোলা চিঠির লেখক নবগঠিত অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক শিহাবুল হাসান সৌরভের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সম্প্রতি অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির দ্বিতীয় যুগ্ন আহ্বায়ক মেহেদী হাসান নইমের আপন চাচাতো ভাই অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি'র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাকির মুকুল নিহত ছাত্রলীগ নেতা শহীদ মীর সেলিম হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল এবং মেহেদী হাসান নইমের পিতা সেই হত্যাকাণ্ডের আসামি ছিল, মেহেদি হাসান নঈমের আপন ভাই ইয়ামিন অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক, সর্বমহলে পরিচিত এই বিএনপি পরিবারের মেহেদি হাসান নঈমকে নিয়ে শহীদ মীর সেলিমের কবর জিয়ারতের সময় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আক্ষেপ জানানো হয়, তাই আমি ফেসবুকের মাধ্যমে মাননীয় এমপি মহোদয়ের নিকট খোলা চিঠির মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা প্রার্থনা করছি, বিষয়টি অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী পরিবারের জন্যে অত্যান্ত দু:খজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস