Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নেত্রকোনায় কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

সাইফুল আরিফ জুয়েল

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৮:২০ এএম


নেত্রকোনায় কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

নেত্রকোনায় রনি মিয়া (১৭) নামে এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় গ্যাংস্টার হৃদয় মিয়া ওরফে ব্ল্যাক হৃদয় (২৫) ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সেটি আবার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভিডিওটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। ভিডওিতে দেখা যায়, কিরিচ দিয়ে আঘাত করার পর কোমরের বেল্ট দিয়ে বেধম প্রহার করছে হৃদয় ও তার সহযোগিরা।

ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার সদর উপজেলায় ঠাকুরাকোনার বাড়ইডহর ব্রিজের উপর।

এদিন ভুক্তভোগী কিশোর রনি মিয়াকে (১৭) ডেকে এনে অটোরিকশায় তুলে এক ব্রিজ থেকে আরেক ব্রিজে অভিযুক্তদের একজন ভিডিও ধারণ করে এবং এলাকায় ব্ল্যাক হৃদয় নামে পরিচিত হৃদয় মিয়া কোমর থেকে বেল্ট খুলে বেদম পেটায়। এ সময় ভিডিওতে শোনা যায়, বেল্ট দিয়ে আরও চারজনকে মারছি।

এ সময় হৃদয়ের অনুসারীরাও ব্যাপক কিল-ঘুষি ও লাথিও মারে ওই কিশোরকে। পরে অভিযুক্তরা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় এবং ভিকটিমকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বারহাট্টা উপজেলার দশধার গ্রামের আব্দুল কাদির শনিবার বিকেলে নেত্রকোনা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী কিশোর ঠাকুরাকোনায় একটি ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন এবং নেত্রকোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অভিযুক্তরা হলেন- জেলার সদর উপজেলার ঠাকুরকোনা গ্রামের হৃদয় মিয়া ওরফে ব্ল্যাক হৃদয়, বাইশধার গ্রামের মো. আনোয়ার মিয়ার ছেলে মো. মিজান মিয়া (১৮), চরপাড়া গ্রামের মো. নয়ন মিয়ার ছেলে লাদেন মিয়া (২০), বারহাট্টা উপজেলার সাধুয়ারকান্দা গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে রানা মিয়া (১৯) ও নওয়াপাড়া গ্রামের সুবল দাসের ছেলে পলাশ দাস (১৮)।

ভুক্তভোগী রনি মিয়া বলেন, ইটভাটায় কাজ করার সময় আলম নামে একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। আলম আমার মোবাইল দিয়ে একটি মেয়েকে ফোন দিত। আলম ভাটার কাজ ছেড়ে ঢাকায় চলে যায় এবং অন্য একজনকে বিয়ে করে সেখানে সংসার শুরু করে। ওই মেয়েটি আলমের খোঁজে মাঝে মধ্যে ফোন দিত। বেশ কিছুদিন আগে অভিযুক্তরা আলমকে পেয়ে মারধর করে একপর্যায়ে আলম আমার মোবাইল দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলত তা তাদেরকে বলে এবং আমার মোবাইল নম্বরটি অভিযুক্তদের দেয়।

রনি বলেন, গত শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য দশধার বাজারে যান রনি। আনুমানিক রাত ৯টার দিকে পাপন শীলের দোকানের সামনে থেকে ডেকে দশধার ব্রিজের দক্ষিণ পাশে আমাকে নিয়ে আসে। চোখমুখ বাঁধার সময় চিৎকার দিলে হৃদয়ের হাতে থাকা কিরিচ দিয়ে ঘাই দেয়। হাত দিয়ে ফেরাতে গিয়ে বাম হাতের তর্জনী নখ ও হাড় কেটে রক্তাক্ত জখম হয়।

পরে অটোরিকশায় তুলে বাড়ইডহর ব্রিজে এনে একজন ভিডিও ধারণ করে আর হৃদয় কোমর থেকে বেল্ট খুলে মাথা, মুখ, বুক, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি বাইরাইতে থাকে। বলতে থাকে এই বেল্ট দিয়ে চারজনকে পেটাইছি এবং তার সঙ্গে থাকা অন্যরাও অনেক লাথি ও কিল-ঘুষি মারে।

এতে আমার চোখের ভেতর রক্ত জমাট, আঙুল কাটাসহ শরীরের অন্যান্য স্থানে অসংখ্য নীলাফোলা জখম রয়েছে।

ভুক্তভোগীর বাবা আব্দুল কাদির বলেন, রাত ১২টার দিকে বাড়ইডহর ব্রিজে গোঙানো অবস্থায় উদ্ধার করি ছেলেকে।

ভুক্তভোগীর বাবার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তার মধ্যে আছেন। ব্ল্যাক হৃদয় গং-রা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ফকরুজ্জামান জুয়েল জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, অবগত হওয়ার পরপরই এসআই সালামকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। তিনি রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং যথাযথ পুলিশি পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।

আমারসংবাদ/কেএস