Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

উলিপুরে একটি নামের আত্মকাহিনী

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৮:৪০ এএম


উলিপুরে একটি নামের আত্মকাহিনী

দুঃখের সাথে বেড়ে ওঠা সংসারে জন্ম নেয় সেলাই মেশিন সার্ভিস মিস্ত্রি ‘বিদেশী’। বাবা কৃষক, মা গৃহিনী। দেশ ভাগ হয়নি তখনো, একটা ভারত একটা পাকিস্তান মধ্য সীমানায় ১২০০ মাইল পুর্বে পূর্ব পাকিস্তান। 

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরেই ৭১’এ দেশে গন্ডগোল দেখা দিলে শরণার্থীদের ভিড়ে তার মা-বাবা ভারতের দিনহাটায় চলে যায়। সেখানে একশত বছর আগে চলে যাওয়া বোনের বাড়িতে ঠাই জোটে তাদের। সেখানেও সংকট ও দৈন্যতা, খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটে তাদের। 

দু'বছর পরেই অভাবি সংসারে জন্মনেয় বর্তমান ৪৮ বছরের ‘বিদেশী’ নামের এই মানুষটি। তখন তার নাম ছিলো রঞ্জিত। জয়বাংলা স্বাধীন হওয়ার খবর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে বিদেশীর মা কাঞ্চা রানীও খবর পায় জয় বাংলা স্বাধীন হয়েছে। ভারতের চেয়ে জয় বাংলাকে গুরত্ব দিয়ে জয় বাংলায় চলে আসার জন্য অস্থির হয়ে পরে। পাসপোর্ট ভিসা এমনকি কোন রকমের কাটাতার না থাকায় সহজেই আবার একটু ভালো থাকবার আশায় জয়বাংলায় পা রাখে কাঞ্চা রানী। তখন এই বিদেশীর বয়স দুই বছর। দেশে চলে আসার সময় তার মা সমতুল্য মামি শখ করে নাম দেয় বিদেশী। তখন থেকেই আজও বিদেশী নামেই পরিচিত।

বিদেশী দুই সন্তান স্বামী-স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বসবাস করছে কুড়িগ্রামের উলিপুরে রামদাস ধনিরাম গ্রামে। উলিপুর বাজারের থানামোড়ে দীর্ঘদিন থেকে বিদেশীর দোকান। থানামোড়সহ হাজারো মানুষের ভক্ত এই মানুষটি। প্রাইমারী গন্ডি পেরুবার আগেই কর্ম জীবনে চলে আসতে হয় অভাবের সাথে সংগ্রাম করতে। পাঁচ বছর বয়সেই লোহাকে আগুনে তাপ দিয়ে পিটিয়ে মানুষের প্রয়োজনে লোহাকে নানা মডেলে ঈদে পূঁজায় বা বিভিন্ন সময় দা, কুড়াল, বটি, কাচি, সাপোল, বানিয়ে দিয়ে সামান্য আয়ে জীবন বাঁচাত। 

লোহার উপর হাম্বুল মারতে গিয়ে বুকে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে কামারের কাজটা ছেড়ে দেয় বিদেশী। এরপর বাইসাইকেল, রিক্সা মেরামতের কাজ করতে থাকে। কিছুদিন মোটর সাইকেল মেরামতের কাজও করে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচবার আশায় উলিপুর থানামোড়ে ছোট্ট একটি খুপড়ি দোকানে সারাদিন সেলাই মেশিন সার্ভিসের কাজ করছে সঙ্গে কাঁচি ধারের কাজও করছে। গ্রাহকের সাথে কখনোই মনমালিন্য নেই তার। সারাদিন কাজ আর বিনোদনের মধ্য দিয়েই চলে যায় বিদেশীর। 

আশে-পাশের দোকানীরা জানালেন, বড্ড মজার মানুষ বিদেশী মেকার। বেলা শেষে দু'চার পয়শা যাই পায় তাই দিয়ে পরিবারের সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করেই যায়। বিদেশী নামে দোকান দেয়ায় প্রতিদিন শত মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় তাকে।

করোনার কথা জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, ‘হামাক মারি ফেলা বুদ্দি বের কইচ্চে’। এক বছর থাকি ঋণ করি করি চলি কেবলে একনা ভালো চলা শুরু হইলো ফিরো হামাক মারা বুদ্দি বাড়াইচে। হামার খাবার নিশ্চিত কর হামরা লকডাউন মাইনমো।

আমারসংবাদ/কেএস