Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পুরুষ শূন্য সালথায় পাটক্ষেত রক্ষায় নারীরা

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর 

এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০১:৩৫ পিএম


পুরুষ শূন্য সালথায় পাটক্ষেত রক্ষায় নারীরা

পুলিশের ভয়ে ঘর-বাড়ি, খেত-খামারসহ সংসার ছেড়ে পালিয়েছেন পুরুষ মানুষেরা। পেঁয়াজ, রসুন আর সোনালী আঁশ পাটক্ষেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় চোখের সামনে তরতাজা ছোট ছোট পাট রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন এলাকার নারী ও শিশুরা। চৈত্রের কড়া রোদ উপেক্ষা করে পালা করে সকাল বিকেল কাজ শুরু করেছেন এসব নারীরা। 

বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর আবার মাঝে বিরতির পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজ করার এমন চিত্র দেখা গেছে গ্রামের নারীদের। সাথে সাথে শিশুদেরও লক্ষ্য করা গেছে। 

ফরিদপুরের সালথায় তান্ডবের ঘটনার পর পাঁচটি মামলায় প্রায় ১৭ হাজারের অধিক মানুষ আসামি হওয়ার পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের ভয়ে কয়েকটি এলাকাজুড়ে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় অন্য এলাকার কোন পুরুষ মানুষ এ এলাকায় কাজ করতে আসতে চায় না। ফলে কৃষকশূন্য হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি এলাকা।

সালথার ঘটনায় উপজেলার সোনাপুর, ভাওয়াল ও রামকান্তপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকাকে সরাসরি জড়িত বলে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব এলাকার কয়েকটি ফসলি জমির মাঠ ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা গ্রেপ্তারের ভয়ে পলাতক রয়েছে।

পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কয়েক নারী বলেন, ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় এজাহারভুক্ত ২৬১ জন আসামি ছাড়াও অজ্ঞাত আরো হাজার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে যে কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করার সুযোগ রয়েছে। তাই গ্রেপ্তার ও হয়রানির ভয়ে দোষি-নির্দোষি সবাই পলাতক রয়েছে। ফলে এসব এলাকা কৃষকশূন্য হয়ে পড়েছে।
কৃষকের অভাবে আমাদের প্রধান ফসল পাঠক্ষেত পরিচর্যার কাজ ঠিক সময় না করতে পেরে পাটের ছোট ছোট চারাগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এ কারণে বাধ্য হয়েই পাঠক্ষেতে নেমে কাজ করতে হচ্ছে নারীদের।

এ দিকে এসব এলাকার কৃষক পরিবারের কয়েকজন নারী হালিমা বেগম, ফুল জান, নাসরিন, পারভিন বেগম তাদের দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বাজার করার টাকা নেই। আমাদের স্বামীরা অন্যের ক্ষেতে কাজ করে সংসার চালাতো। এখন তো ভয়ে তারা সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রোজার বাজার-সদাই করতে পারেনি। বাড়িতে আমরা সন্তান নিয়ে না-খেয়ে মরার দশা।

আলেয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, কিস্তির টাকা দিয়ে ফসল চাষ করি আমরা। এ বছর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যদি ঠিকমত পাঠ চাষাবাদ না করা হয় তাহলে পাটও নষ্ট হবে। আবার চলছে লকডাউন। সব মিলে আমাদের বেঁচে থাকাই কষ্টকর। আমাদের পুরুষরা ক্ষেতে কাজ করতে পারছে না। সবসময় ভয়ে থাকে। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিলে সরকারের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকতাম।

উল্লেখ্য, লকডাউনকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে গত ৫ এপ্রিল সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ সময় দুটি সরকারি গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। এ ঘটনায় দু'যুবক নিহত হয়। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়।

এ বিষয়ে জানতে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার কে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন না ধরার কারণে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

আমারসংবাদ/কেএস