Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে মাকে হাসপাতালে নেয়ার ছবি ভাইরাল

আমার সংবাদ ডেস্ক

এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৯:৫৫ এএম


পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে মাকে হাসপাতালে নেয়ার ছবি ভাইরাল

লকডাউনে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে মাকে বাঁচাতে নিজের পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেল নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন ছেলে। শনিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে।

ছবিটি বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে তোলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসুস্থ ওই নারীর নাম রেহানা পারভিন। তার করোনাভাইরাস পজেটিভ এসছে। তিনি ঝালকাঠী জেলার নলসিটি পৌর শহরে থাকেন। আর তার ছেলে জিয়াউল হাসান কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠী শাখার কর্মকর্তা।

রেহানা পারভিনের বোনের ছেলে নাঈম হোসেন জানান, নলসিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রেহানা পারভিন তার খালা। বয়স ৫৭ বছর।

কয়েক দিন আগে তার শরীরে করোনাভাইরাসে উপসর্গ দেখা দেয়। নমুনা পরীক্ষার জন্য নলসিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তারা নমুনা সংগ্রহ করে কিন্তু এক সপ্তাহেও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

ফলে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় নমুনা দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার তার করোনাভাইরাস পজেটিভ আসে।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কমে আসায় সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হয়। কিন্তু শনিবার বিকেলে তার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলেন তিনি।

জিয়াউল হাসানের বরাত দিয়ে নাঈম জানান, লকডাউনের কারণে এমনিতেই সড়কে যানচলাচল খুবই সীমিত। আর রেহানা পারভিন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাকে কেউ হাসপাতালে নিতে চাচ্ছিলেন না।

তিনি বলেন, কোথাও ফোন করে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। তাই তাকে মোটরসাইকেলে নিয়েই রওয়ানা হন জিয়াউল হাসান। তার মা যাতে পথে অক্সিজেনের অভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে না পড়ে এজন্য তিনি পিঠের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে নেন। তার মা অক্সিজেন মাস্ক পরা ছিলেন।

রেহানা পারভীনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তার বোনের ছেলে নাঈম হোসেন।

জিয়াউল হাসান বলেন, নলছিটিতে চিকিৎসকদের তেমন কোনো সহায়তা না পেয়ে বরিশালে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা থ্রি হুইলারও ম্যানেজ করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে আমার মোটরসাইকেলে মাকে নিয়ে রওয়ানা দেই। সেই সময় কোনো ধরনের রিস্ক না নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে পিঠের সঙ্গে সিলিন্ডারটি বেঁধে মায়ের মুখে মাস্কটি লাগিয়ে কৃত্রিম অক্সিজেন সিস্টেমও চালু রাখি।

তিনি বলেন, আমার বড় ভাই মেহেদী হাসান খুলনাতে পুলিশের চাকরি করেন, বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ছিল। সে আরেকটি মোটরসাইকেলে চেপে আমার পাশে পাশে সারা পথ এসেছে। তখন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিলো যে, মাকে যেভাবেই হোক হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে, অন্য কিছু মাথায় আনিনি। হাসপাতালে আসার পথে পুলিশের চেকপোস্টে বেশ কয়েক জায়গাতে দাঁড়াতে হয়েছে, তাও আবার ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে হেলমেট না থাকার কারণে। তবে পুলিশ সদস্যদের খুলে বলার পর ছেড়ে দিয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মেট্রো পুলিশের সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডারটি দেখতে পেয়েই আমাকে ছেড়ে দেয়।  

জিয়াউল হাসান আরও বলেন, হাসপাতালে আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে সাহায্যের জন্য বলে রেখেছিলাম। তাই আসার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের জন্য একটি বিছানা পেয়ে গেছি। আমার মায়ের চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়।

ভাইরাল হওয়া ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদ মোর্শেদ টুটুল।

[media type="image" fid="120358" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তিনি জানান, এদিন দুপুরে তার ডিউটি ছিল বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায়। দুপুর ৩টার দিকে তিনি দেখতে পান মোটরসাইকেলে এক ব্যক্তি এক নারী আরোহীকে নিয়ে যাচ্ছেন। মোটরসাইকেল চালকের পিঠের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাঁধা। আর আরোহী নারীর মুখে মাস্ক পরানো। সিলিন্ডার থেকে নল দিয়ে নারী আরোহী অক্সিজেন নিচ্ছেন। এ দৃশ্য দেখার পর তিনি মোটরসাইকেলটিকে না থামিয়ে চলে যাওয়ার সঙ্কেত দেন। দৃশ্যটি তিনি তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেন। এরপর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ছবিটি তিনি ফেসবুকে তার আইডি থেকে পোস্ট করেন।

ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদ মোর্শেদ টুটুল বলেন, করোনা নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে তিনি ওই ছবি পোস্ট করেছেন। এর কয়েকঘণ্টার মধ্যে ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।

তিনি জানান, তার পোস্ট করা ছবিটি অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। অনেকে করোনা থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য সেখানে মন্তব্য করেছেন।

তৌহিদ মোর্শেদ আরও বলেন, ছবিটি পোস্ট করার পর পরিচিত-অপরিচিত অনেকে মোটরসাইকেল আরোহী দুজনের পরিচয় জানতে চেয়েছেন।

আমারসংবাদ/জেআই