Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সাভারে লকডাউনেও কারখানার শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন 

মোঃ শরিফ শেখ, সাভার

এপ্রিল ১৯, ২০২১, ১২:০৫ পিএম


সাভারে লকডাউনেও কারখানার শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন 

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে চলছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় চলমান লকডাউন শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ শে এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছিল করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে চলমান  ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গণপরিবহনসহ বন্ধ রয়েছে মার্কেট শপিংমল দোকানপাট তবে শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে কাজ করছেন। 

তবে শিল্প-মালিকরা বলছেন, কঠোর এই লকডাউনেও কারখানা সচল রাখতে চান তারা। তবে শিল্পাঞ্চল সাভারে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। তার মধ্যে ৩০ লাখ শ্রমিকের একসাথে কর্মস্থলে আগমন এবং প্রস্থানে নূন্যতম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা না হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এই বলে সর্তক করে শ্রমিকদের কঠোর স্বাস্থ্য বিধি অনুসরনে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে সাভার উপজেলা প্রশাসন।

এত মানুষের চলাচল নি:সন্দেহ করোনা প্রতিরোধের জন্যে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। তা সত্ত্বেও লক ডাউনের মধ্যে শিল্পাঞ্চল সাভার আশুলিয়ায় কল কারখানায় মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি। নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এই বিষয়ে সতর্ক করা হয় শিল্প মালিকদের।

দেশের গার্মেন্টস তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন একেএইস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবুল কাশেম এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন। বিশ্ব যখন মহামারী করোনাভাইরাস স্তব্ধ, তখন বাংলাদেশ শিল্প কারখানার সচল রয়েছে। অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে সত্য তবে আমরা থেমে নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিক নির্দেশনা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে শতভাগ গার্মেন্টস পোশাক কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বিশ্বমানের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের জন্য কাজ করছেন দেশে একের পর এক আধুনিক গ্রীন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে শ্রমিকরা উপযুক্ত বেতন পাচ্ছেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পোশাক কারখানায় কাজ চলছে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সবাইকে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার কারণে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বহু দেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পোশাক কারখানার শ্রমিক প্রবেশের সময় কারখানা শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা নিশ্চিত করে রাখা। এছাড়া রাখা হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা মাপা জীবানুনাশক দিয়ে জুতা পরিষ্কার খাদ্য ব্যবস্থা। 

এ বিষয়ে এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আঃ সালাম মুর্শেদী তার কাছে জানতে চাইলেন তিনি বলেন, কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক কারখানা চালু রাখা হয়েছে সরকারি বিধি নিষেধ মেনে পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন চলছে শ্রমিকদের হাত-পা জীবাণুমুক্ত করার পর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে। এরপর শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারা যাচ্ছেন নিজ নিজ আসনে। দুই ঘণ্টা পর পর এবং খাবার ও নাস্তার বিরতির সময়ও জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

তবে শ্রমিকদের পরিবহন ব্যবস্থায় রয়েছে ভিন্নতা। কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যারা থাকেন তারা পায়ে হেঁটে কারখানায় আসছেন। আর দূরবর্তী স্থান থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য কারখানা থেকেই পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুমি নামের একজন নারী শ্রমিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের কথা শুনে প্রথমে একটু ভয় তৈরি হয়েছিল। তবে কারখানায় আসার পর, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখে ভয় দূর হয়েছে। খুবই ভালোভাবে কাজ চলছে, বাসায় ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে একেএইস গ্রুপের পরিচালক তানভির কাশেম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের মাঝে কারখানা খোলা। এ নিয়ে আমাদের বাড়তি সতর্কতা আছে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিটি শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখা। আমাদের কারখানার শ্রমিকরা ভালো থাকলেই কারখানা ভালো থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবার আমরাও কঠোর হয়েছি। শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রাখছে কারখানা। হাত ধোয়া, পোশাক ও পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা, ফ্লোর জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে একটু পর পর। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

বিজিএমইএ কর্মকর্তা তপন কুমার বিশ্বাস মনিটর কমপ্লায়েন্স পরিদর্শক (সাভার সার্কেল) তার কাছে পোশাক কারখানা পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন আমরা পোশাক কারখানা পরিদর্শন করি ফ্লোর থেকে শুরু করে বাথরুম পর্যন্ত আমরা পরিদর্শন করে থাকি। কারখানায় ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিক কাজ করছে কিনা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সামাজিক গুরুত্ব মারা হচ্ছে কিনা এসব বিষয় তদারকি করা হয়। কোন ফ্যাক্টরি যদি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সব মিলিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ গ্রহণ করা হয়।

নুর আলম সিদ্দিক সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল বিজিএমইএ (আশুলিয়া সার্কেল)  এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার যে সব নির্দেশনা দিয়েছে পোশাক কারখানার চালানোর জন্য সেইসব নির্দেশনা কারখানা কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে পালন করছে কিনা তা তদারকি করা।  শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রাখছে কিনা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া শ্রমিকদের  পোশাক কারখানায় প্রবেশ করার সময়। সঠিকভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে কিনা থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হয় নাকি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কিনা তা প্রতিটা কারখানা পরিদর্শন করা হয়। এসব পরিদর্শন করে যে সব কারখানা এসব করতে ব্যর্থ আমরা তাদের বিরুদ্ধে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

আমারসংবাদ/কেএস