Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

অত্যাচার করে ভারতীয় বাকপ্রতিবন্ধীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেন সৎ মা

নাটোর প্রতিনিধি

এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৯:২৫ এএম


অত্যাচার করে ভারতীয় বাকপ্রতিবন্ধীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেন সৎ মা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জলপাইগুড়ি বিভাগের কোচবিহার জেলা থেকে গত ১০ এপ্রিল এক কিশোর এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর রেলস্টেশনে। 

ওই কিশোরের নাম তামিম খান (১৪)। তবে কিভাবে সে এদেশে প্রবেশ করলো, তা বলতে পারেনি বাক প্রতিবন্ধী ওই কিশোর। তবে খাতায় লিখে কিছু কথা বুঝানোর চেষ্টা করছে সে। 

 সূত্রে জানা যায়, অচেতন অবস্থায় ভারত সীমান্ত পার করে দেয়া হয় তাকে। তারপর থেকে ট্রেনে সে নাটোর পর্যন্ত আসে। ১১ এপ্রিল তামিমকে কাদামাখা অচেতন অবস্থায় এই স্টেশনে দেখতে পায় স্থানীয়রা। 

প্রথমে তাকে ভিখারী মনে হলেও পরে তার ইশারায় কাছে গেলে বুঝা যায় সে ভিখারী না, বাক প্রতিবন্ধী ৷অসহায় এই প্রতিবন্ধী কিশোরের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় কিছু তরুণ। প্লাটফর্মে তার থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। 

সেবায় নিয়োজিত তরুণদের একজন আশরাফুল আলী নোমান তামিমের লেখার বরাত দিয়ে বলেন, গত ১০ এপ্রিল সকালে রেলস্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় এক কিশোরকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাক শক্তিহীন ছেলেটি হাঁটতে না পারলেও শুনতে ও বুঝতে পারে দেখে আমরা কয়েকজন তামিমকে রাস্তা থেকে প্লাটফর্মে তুলে এনে গোসল করায়। খাবারের ব্যবস্থা করে চিকিৎসাও করি।

পরদিন তামিম কিছুটা সুস্থ হলে আমরা তার সাথে কথা বলতে চাইলে, সে কথার উত্তর না দিয়ে ইশারায় কিছু লিখতে চায়। তাকে কাগজ-কলম দেয়া হলে জানায় তার নাম তামিম খান, বাবার নাম বিল্লাল খান, বাড়ি ভারতের মেদিনীপুরে। 

বাবা কোচবিহারে ব্যবসা করতেন। সেখানে বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকতো ও স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া করতো। মায়ের মৃত্যু হলে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে।

তামিম লিখে আরও জানায়, সৎ মা ও ভাই-বোনেরা তাকে অত্যাচার করতো। সম্প্রতি বাবার মৃত্যু পরে তাকে তরল কিছু খাওয়ানো হলে সে জ্ঞান হারায়। 

পরবর্তীতে লোকমানপুর রেলস্টেশনে উদ্ধার করে নোমান আরও বলেন, ‘তামিম জানিয়েছে নিজ দেশে সে ফিরে যেতে চায় না। সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ায় বাবার মৃত্যুর পর তাকে বঞ্চিত করার জন্য সৎ মা-ভাই তাকে অচেতন করে এদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। 

স্থানীয় লোকমানপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, অসহায় কিশোরের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তারা। 

নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি প্রতি সন্ধ্যায় তাকে ইফতারি দেয়া হচ্ছে। বাগাতিপাড়া মডেল থানার ও.সি নাজমুল হক বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তামিমের বিষয়ে জেনেছি। 

বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল জানান, কিশোর তামিমকে নিয়ে কি করা যায়, তা আইনের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। 

যেহেতু সে বাংলাদেশের কেউ না বলে নিজেই জানাচ্ছে, সেহেতু বিষয়টি মানবিক দ্রুত আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তবে এখানে আপাতত তার থাকা-খাবারের কোন অসুবিধা হবে না।

আমারসংবাদ/এআই