Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

খাবার পানির সংকটে থানচিবাসী 

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি

এপ্রিল ৩০, ২০২১, ০৯:১৫ এএম


খাবার পানির সংকটে থানচিবাসী 

বান্দরবান থানচি উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ে ঝর্ণা-ঝিড়ি-ছড়া গুলোতে পাথর উত্তোলণের কারনে নেই পানি শুকিয়ে গেছে। পাওয়া যাচ্ছে না খাবার পানি। বাধ্য হয়ে কয়েক কিলোমিটার দুর থেকে কাঁধে ও মাথায় করে নিয়ে আসতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি।

পাথর উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, ছোট মাছ, ছোট চিংড়ি ও কাকড়াগুলো হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাহাড়ে ঝর্ণা-ঝিড়ি-ছড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও সম্পদ হারিয়ে হাহাকার। প্রায় ঝর্ণা-ঝিড়ি-ছড়া গুলো ইতোমধ্যে শুকিয়ে তিব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার খেতে খাওয়ার কৃষক শ্রেনির সাধারণ মানুষ। 

কিছু সংখ্যক পার্শ্ববর্তী লামা, চকরিয়া, সাতকানিয়া, আমিরাবাদ ও দোহাজারি এলাকার অসাধু ব্যবসায়ীসহ উপজেলার স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে কোন প্রকার বাধা ছাড়াই ঝিড়ি-ঝর্ণা-ছড়া হতে পাথর উত্তোলণ করে দিনরাত পাচার করেই চলেছে। স্থানীয়রা পাথর উত্তোলণের বাধা দিলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্রের হুমকিতে পাথর উত্তোলণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। বছরে অক্টোবর মাস হতে শুরু করে জুন মাস পর্যন্ত চলে পাথর উত্তোলণ। 

অন্যদিকে পাহাড়ে উপর আম, কাজুবাদাম, কলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগানে কৃষকরা পানির অভাবে বাগানে ঔষধ স্প্রে করতে পারছেন না। যার দরুন এলাকার মানুষের আয় উপার্জনও দিন দিন কমে এসেছে। পাহাড়ে খেতে খাওয়ার কৃষক শ্রেনি সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা উপর চরম দুর্বিসহ হয়ে উঠছে।  

উপজেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর্পূন এক একটা ইউনিয়ন এলাকায় দর্শণীয় স্থান রেমাক্রি মুখ,নাফাকুম, ঙাক্ষ্যং খাল, আমিয়াখুম, বেলাখুম, সাতভাইখুমসহ আশে পাশে ঝিড়িগুলো হতে পাথর উত্তোলণ চলমান রয়েছে। সদর ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড এলাকা কাইতং পাড়া, বোডিং পাড়া, কংহ্লা পাড়া, চমি পাড়া, লাকপাইক্ষ্যং পাড়া,হাব্রু হেডম্যান পাড়া, চংরই পাড়া আশে পাশে এলাকার ঝিড়ি গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পাথর উত্তোলণের কারনে এই সমস্ত পাড়ার উপরে বিরোধ প্রভাব পরেছে। আইলমারা ঝিড়ি, বালু ঝিড়ি, মাংগই ঝিড়ি, শিলা ঝিড়ি ও নাইক্ষ্যং ঝিড়ির পাথর উত্তোলনের কারনে ইতোমধ্যে পানি অভাবে পার্শ্ববর্তী অনিল, কমলা বাগান মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, ডাকছৈ, সাখৈ, মেরোওয়া ও হয়তং পাড়া জনসাধারণের মাঝে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। পাথর খেকোদের হাত থেকে রেহাই পাইনি চয়ক্ষ্যং ঝিড়ি, সালোকক্যা ঝিড়ি, থাংদয় ঝিড়ি, পদ্ম ঝিড়িসহ শতাধিক ঝিড়িগুলো। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ পানি উৎস্যে একমাত্র উপাদান ঝিড়ি পাথর আর নেই। পাহাড়ে জীব বৈচিত্র হারাতে বসেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর হুমকিতে পড়েছে থানচি। এভাবে চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যৎতে পাহাড় হবে মরুভূমি। 

এলাকার সচেতন সমাজ মনে করেন, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার অভিযান পরিচালনা করে জড়িমানা করে বসে থাকলে চলবেনা। প্রকৃতিকে বাঁচাতে পর্যটন এলাকা হিসাবে এই উপজেলাকে স্থায়ী ভাবে পাথর উত্তোলণ বন্ধ করার দরকার। তাই প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্বনয়ের প্রকৃতিকে বাঁচাতে স্থায়ীভাবে পাথর উত্তোলণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহনের সচেতন নাগরিকগণের একমাত্র দাবি।  

কমলা বাগান পাড়া কারবারী গুড়িকালা চাকমা বলেন, আমাদের পাড়ায় পানি সমস্যা। ৪/৫ বছর আগে এপ্রিল মাসেও কোন খাবার পানি সমস্যা হয়না। জিএফএস লাইনের পানি এখন খুব কম আসে, কোন কোন সময় একেবারে পানি আসে না, পানি লাইন বন্ধ থাকে। আমরা পানি জন্য সমস্যায় আছি, শুধু আমরা নয়, আশে পাশে পাড়াগুলোতেও পানি সমস্যা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান জেলা পরিদর্শক (জুনিয়র ক্যামিস্ট) মোঃ আবদুল সালাম বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ এভাবে নষ্ট করতে দেয়া হবে না, পাথর উত্তোলনকারী চোরদের সাথে কোন আপোষ নয়। তারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী, পাথর উত্তোলণকারীদের বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনারা পাথর উত্তোলণ খবর নিয়ে আমাদের জানাবেন, প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান অফিস সব সময় পাশে আছি, থাকব। 

আমারসংবাদ/কেএস