Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

২০ দিনে ৩ খুন, পেকুয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

শাহ জামাল, পেকুয়া

মে ৪, ২০২১, ০৭:৫৫ এএম


২০ দিনে ৩ খুন, পেকুয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

১২ এপ্রিল থেকে ২ মে। এই বিশ দিনে ঝরে গেল তাজা তিনটি প্রাণ। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি ও দারালো কিরিচের কোপে প্রাণ হারিয়েছেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার এক গৃহবধূ ও দুই যুবক। টাকার ভাগ ভাটোয়ারা, জমির বিরোধ, তুচ্ছ ঘটনা ও পূর্ব শত্রুতার জেরে সংঘটিত হয় পৃথক এ তিনটি ঘটনা।

এছাড়া প্রতিদিন ঘটছে রক্তপাতের ঘটনা। ধারলো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু সন্ধিক্ষনে দিন কাটাচ্ছে অহরহ নারী পুরুষ। বাদ যায়নি স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। আক্রান্তের শিকার হয়েছেন শিশু কিশোরও। নারী নির্যাতনও লেগেই আছে। 

এ নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন উপজেলার সচেতন মহল। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। পেকুয়া থানা পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে তুলেছেন প্রশ্ন। 

অনেকেই দাবী তুলেছেন পেকুয়া থানার ওসিকে অপসারণের। আবার অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে পেকুয়ায় আরেক জন কামরুল আজমের মত ওসি দরকার। বিশ দিনের মাথায় তিন খুনের ঘটনা এখন টক অব দ্যা পেকুয়া। ভাবিয়ে তুলেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ফুলতলা স্টেশনের একটি দোকানে গত রোববার সন্ধ্যায় চা-নাস্তা খেতে বসে সন্ত্রাসীদের গুলি এবং কিরিচের কোপে মারা যান ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন (৩৮)। 

গত ২৪ এপ্রিল রাতে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ভারুয়াখালী গ্রামে টাকার ভাগভাটোয়ারা বিরোধে নেজাম উদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। 

গত ১২ এপ্রিল একই ইউনিয়নের বুধামাঝির ঘোনা গ্রামে মধ্যরাতে জমির বিরোধে মধ্যরাতে গৃহবধূ সেলিনা আক্তারকে (৩৭) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এ তিনটি ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন আরো চার নারী-পুরুষ। কিন্তু উদ্ধার হয়নি এসব হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোনো অস্ত্র। আটক হয়নি হত্যাকারীরা।

পেকুয়া উপজেলার সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার যোগদানের পর থেকে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গত সাত মাসে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রশ্রয় পেয়ে অপরাধীরা এখন লাগামছাড়া। 

পেকুয়ার আনাচেকানাচে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। বেড়েছে চুরি, ছিনতাই ও মাদকের বিকিকিনি। বেড়েছে কিশোর গ্যাংদের অপরাধ তৎপরতা। থানায় পুলিশের সদস্যদের সেবা প্রদানে ধীরগতি, অসদাচরণ, ঘুষ লেনদেন ও পক্ষাবলম্বন বেড়েছে। এতে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। 

এসব ভুরি ভুরি অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ জণগন। আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে ইয়াবা বিকিকিনি। ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার যোগদানের পর থেকে অদ্যবতি একটা ইয়াবাও উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছেন ইয়াবাকারবারী। 

অথচ মাদকের থাবায় গ্রাস করেছে পেকুয়া। অভিযোগ উঠেছে ইয়াবাকারবারী ও অস্ত্রব্যবসায়ীদের সাথে রয়েছে গুটিকয়েক পুলিশ কর্মকর্তার গভীর সখ্যতা। উপকুলের শীর্ষ সন্ত্রাসী, পলাতক আসামীদের সাথে একসাথে বসে দাওয়াতও খান কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালন এ নীতি যেন ভুলে গেছেন পেকুয়ার প্রশাসন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা জানায়, পেকুয়ায় থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে হু হু করে বেড়েছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। খুন, চুরি-ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ও মিথ্যা মামলার প্রকোপ বেড়েছে পুরো পেকুয়া উপজেলায়। তাই আমরা উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের জানমাল হেফাজত ও নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড কমাতে পেকুয়া থানা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানাচ্ছি জেলা পুলিশের কাছে।

মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল এনাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসেম বলেন, মগনামায় বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক নেতারা খোলস পাল্টে আওয়ামী লীগের লেবাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মেতেছে। 

তাঁরা থানা পুলিশকে বগলদাবা করে রেখে সাধারণ মানুষজনদের নানাভাবে নির্যাতন করছে। পুলিশ চাইলে অল্পসময়ের মধ্যে মগনামাকে অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাস মুক্ত করতে পারে। কিন্তু তা কেন হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

পেকুয়া উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন বলেন, এ দায় প্রশাসন কোনভাবেই এড়াতে পারে না। এমতাবস্থায় প্রশাসনের উচিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা। সন্ত্রাসী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গণমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত গৃহবধূ সেলিনা আক্তারের স্বামী ফরিদুল আলম বলেন, আমার স্ত্রী সেলিনাকে হত্যার পরদিন আমি বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। 

তবে, ঘটনার পরপর আমার স্বজনের হামলায় জড়িত দুইজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল জনতা।

তবে থানা পুলিশের দাবী পেকুয়ায় হঠাৎ খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুরো প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলছে। এসব খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে রয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ সদা তৎপর। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। আইন নিজের গতিতে চলবে।

আমারসংবাদ/এআই