Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

চুয়াডাঙ্গা শহরের ইট-কাঠ-পাথরের মাঝে এক চিলতে বাগান 

ইসলাম রকিব, চুয়াডাঙ্গা

মে ৪, ২০২১, ১২:০০ পিএম


চুয়াডাঙ্গা শহরের ইট-কাঠ-পাথরের মাঝে এক চিলতে বাগান 

শহরের ইট, কাঠ ও পাথরের মাঝে এক চিলতে বাগান যে কোন রিসোর্ট বা যে কোন সৌখিন বাংলোকে হার মানাবে। দীর্ঘ ১৪ বছরের সাধনায় কাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গার রেলপাড়ার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন অপার সৌন্দর্যে ভরা ও পুষ্প-পল্লবে সোভিত বাগানবাড়িটি। মধ্যবয়স পার হলেও নিজে যেমন টিপ-টপ ও ফিট-ফাট হয়ে থাকেন তেমনি নিজের বাসা-বাড়ি ও বাড়ির আঙ্গিনাও সব সময় রাখেন পরিস্কার-পরিছন্ন। অথাৎ ভিতর-বাইরে তিনি সব সময় পরিপাটি করে। 

সৌন্দর্য্য পিপাসু ও অনেকটা প্রচার বিমুখ অবসর প্রাপ্ত এ চাকরিজীবী কাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, সখের বসে আজ থেকে ১৪ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার শোভা নার্সারীর পরিচালক ও প্রেমের কবি হেলাল হোসেন জোয়ার্দ্দারের নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী ২০০৬ সাল থেকে নিজের বাড়িতে বাগান তৈরী করার কাজ শুরু করি। প্রয়োজন ও সাধ্যমত নিজ বেতনের টাকার একটি বড় অংশ পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে অবশিষ্ট সামান্য টাকা দিয়ে প্রথম দিকে বাগান করার কাজ শুরু করলেও কখনো কখনো নিজ অফিসের আসবাবপত্র, মনোহারি  ও অফিস কন্টিজেন্টর টাকা বাঁছিয়ে ফুলগাছ, কেকটাস ও বনসাই জাতীয় গাছ ক্রয় করে বাসায় নিয়ে আসতাম। অনেকটা নিজের কাছ থেকে নিজেই টাকা চুরি করে এ কাজটি করতাম।  

[media type="image" fid="122690" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

অবশ্য আমার অফিস প্রধান বসকে বলেই এ কাজটি করতাম। আমার অফিসের বস প্রয়াত শ্রদ্ধেয় মরহুমা শাহানা হেলালী বলতেন, তুমিতো ফুলের গাছই কিনছো, নেশা তো আর করছো না। যাও বাগান তৈরী করো।  একদিন তোমার বাগান বাড়িতে আমাদের দাওয়াত দিও। আমার অফিস কলিকদেরকে বেশ কয়েকবার আমার বাগান বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্ত অবাক ব্যাপার আমার নি:স্বার্থ, পরোপকারি যিনি কখনো একটি টাকা কারো কাছ থেকে বিনিময় গ্রহণ করেননি সেই অফিস বস শাহানা হেলালী ও আমার কলিকগন আমার বাড়িতে যখন এসেছেন তখন তারা আমার জন্য যেটি সবচেয়ে বেশী পছন্দ বা প্রিয় সেই মহামুল্যবান কয়েক প্রজাতির গাছ ও পুস্প জাতীয় গাছ নিয়ে এসেছেন। এতে আমি বেশি খুশি হয়েছি। 

সৌখিন, বৃক্ষ প্রেমিক ও বাগান বিলাসী কাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার আরো বলেন, আমার একটি ছেলে,একটি মেয়ে সহ আরো একটি সন্তান আছে। সে সন্তানটি হলো আমার এ বাগান। যাকে আমি দীর্ঘ ১৪টি বছর জল, খাদ্য, ঔষুধ ও যত্ন নিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি। এ বাগান তৈরীতে আমার সহ ধর্মীনি মাসুমা নাজনীন নীলা, মেয়ে ফারহা তাবাচ্ছুম ও ছেলে তাহসিন জোয়ার্দ্দার অর্পন সহায়তা করলেও বাগানের পরিমিত খাদ্য, সার ঔষুধ, পানি ও কীটনাশক প্রয়োগ করি আমি নিজ হাতে। কারণ সামান্য ভুল বা মাত্রাতিরিক্ত ঔষুধ বা কীটনাশক প্রয়োগে আমার বাগানের একটি সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটি আমি চাই না। 

[media type="image" fid="122691" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এছাড়া বাগান যাতে নিরাপদ ও বিপদ মুক্ত থাকে তার জন্য বাগানে লাগানো হয়েছে মনিষ চন্ডালি গাছ। যে গাছ বাগানে থাকলে বিষধর সাপ বা বিষাক্ত পোকা-মাকড় ঢুকবে না। বর্তমানে আমার বাগানে ২০থেকে ৪০ প্রজাতির দেড় শতাধিক সৌন্দর্য বর্ধক ফ্লু গাছ, বন সাই, পাম্প ও কেকটাস জাতীয় গাছ রয়েছে। যার অধিকাংশ ভারতীয় ও বৃটিশ বংশোদ্ভূত। যে গাছ গুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য নিয়মিত ও পরিমিত পানি দেওয়ার পাশা-পাশি মাসিক ৫/৬’শ টাকা খরচ হয়। যে গাছের মধ্যে রয়েছে মনিরাজ, এরিকা পাম্প, ওরিয়েন্টাল রেড, ননিলা, চাইনিজ পাম্প, চাইনা টগর, সাইকাস পাম্প, ক্যাম্পব্রিট ঝাউ, ক্রিসমাস্ট ট্রি, তাল পাম্প, জিনিয়া পাম্প, এলিজিয়া, ফনিক্্র পাম্প, ফরকেরিয়া, সাম্পিয়া, প্যানেল ঝাউ, ঝরা ঝাউ, ফরকেরিয়া ফুল, তাজ গোলাপ, পাথরকুচি, মনিষ চন্ডালি সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ক্যাকটাস ও পাম্পজাতীয় গাছ। 

একান্ত আলাপ চারিতায় চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নিভৃতচারী সৌন্দর্য্য পিপাসু কাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, আমি দো-তালা বা ৫ তলা বিশিষ্ট বাড়ি তৈরী করতে পারতাম, কিন্তু সেটি না করে স্বেচ্ছায় আমি আমার পছন্দের মতো করে একতলা বাগান বাড়ি বানিয়েছি। সে বাড়ির সামনে রাখা হয়েছে খেলা-মেলা, পরিপাটি ও সারিবদ্ধ সৌন্দর্য্যবর্ধক নানা স্বাদ-গন্ধের নানান প্রজাতির গাছ-পালা। যে খানে একদন্ড দাঁড়ালে মনটা সতেজ ও সজিব হয়ে উঠবে। যেখানে ইট-কাঠ-পাথরের শহুরে সভ্যতার ভিড়ে যেন পেতে পারি ফুল, ফল, মাটি ও নানান প্রজাতির গাছের সুধা মাখা গন্ধ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন এ বাগানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারি। যেন পেতে পারি শহরের বুকে থেকে এক চিলতে বাগান বাড়ির অপরুপ সোভা ও সৌর্ন্দয্য।    

আমারসংবাদ/কেএস