Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মণিরামপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে নিহত ৫ পরিবারের খবর রাখেনি কেউ 

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি 

মে ১১, ২০২১, ০৭:৩০ এএম


মণিরামপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে নিহত ৫ পরিবারের খবর রাখেনি কেউ 

বছর পার হলেও আম্পান তাণ্ডবে নিহত যশোরের মণিরামপুর উপজেলার একই গ্রামের ৫ নারী-পুরুষের বাড়ির খোঁজ রাখেনি কেউ। হতদরিদ্র এসব পরিবারে আজও জোটেনি নিহতের স্ত্রীর বিধবা কার্ড কিংবা সরকারি বাড়ি। ঝড়ের কয়েকদিন পর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারের হাতে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তারপর কেউ আর ফিরেও তাকায়নি।

জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়ে মেলেনি সরকারি ঘর। তাদের কথার আশায় থেকে বছর পার হতে চলেছে। অনেকেই আবার ভোটের পর করে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। সোমবার নিহতদের স্বজনদের অনেকেই এসব কথা বলছিলেন আর শাড়ির আঁচল দিয়ে বোবা কান্নায় বের হওয়া চোখের পানি মুছছিলেন। 
গত বছরের ২০ মে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আম্পানে টিনের বেড়া ঘেরা বাড়ির ওপর গাছ পড়ে নিহত হন খোকন দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী বিজন দাসী (৫৫), নজরুল ইসলাম ওরফে ওয়াজেদ আলী ও তার ছেলে ইছহাক আলী (১৮) এবং বৃদ্ধা আছিয়া বেগম (৭০)। নিহতরা সকলেই উপজেলার মশ্মিমনগর ইউপির পারখাজুরা গ্রামের। ওইদিন গাছ চাপায় গুরুতর আহত উপজেলার সরসকাটি গ্রামের কামাল হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি ৪ দিন পর মারা যান।

নিহত খোকন দাস ও বিজন দাসীর বড় মেয়ে দিপালী দাস বলেন, কোন ভাই না থাকায় আমি বাড়িতে বাপ-মায়ের কাছে থাকতাম। ঝড়ের কয়দিন পরে বাবা-মার সৎকারের সময় ৪০ হাজার টাকা দিছিল। এরপর থেকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। ঘরের জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানরা শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে দিপালী দাস স্বামী-সন্তান নিয়ে বাপের ভিটায় ছনের ছাউনি ছাওয়া পলিথিন আর টিন ঘেরা বাড়িতে কোন রকম মাথা গুঁজে আছেন। গাছ চাপা পড়ে বাড়ি ভেঙে যাবার পর অর্থাভাবে আর সংস্কার করা হয়ে ওঠেনি।

নিহত ওয়াজেদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা পরের বাড়িতে ধান ঝাড়ার কাজ করছেন। স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে ওয়াজেদ আলী ও তার ছেলে ইসহাক আলী নিহত হওয়ার পর থেকে তিনিই ছোট ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকেন।

মেহেরুন্নেছা ঘোমটার মধ্যে শাড়ির আঁচল দিয়ে বোবা কান্নায় বের হওয়া চোখের পানি মুছছিলেন আর বলছিলেন, স্বামী মারা যাবার পর তিনি ছোট ছেলেটাকে নিয়ে বেকায়দায় আছেন। অভাব-অনটনের সংসারে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। বাধ্য হয়ে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজসহ শ্রমিকের কাজ করতে হয়। ছোট ছেলেটাকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। কয়কেদিন করে মেম্বারের কাছে সরকারি ঘর ও বিধবা কার্ডের জন্য গেলেও ভোটের পরে করে দিবেন বলে তাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় মশ্মিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, আম্পান ঝড়ের পর থেকে বিধবা কার্ড আসেনি। আর সরকারি বাড়ির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বলা হয়েছিল। কিন্তু কী কারণে পায়নি, তার খোঁজ নেয়া হয়নি।

আমারসংবাদ/কেএস