Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ভিক্ষার টাকা জমিয়ে দু’জন দু’জনকে কিনে দিলেন ঈদের জামা

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ১৪, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম


ভিক্ষার টাকা জমিয়ে দু’জন দু’জনকে কিনে দিলেন ঈদের জামা

ভিক্ষার টাকা জমিয়ে দু’জন দু’জনকে ঈদের জন্য নতুন জামা কিনে দেন এক দম্পতি। নতুন পোশাক পরে দুপুরের খাবার খেতে যান তারা। মুরগির রোস্ট ও পোলাও খেয়ে নগর ঘুরতে বের হন ওই দম্পতি।

শুক্রবার দুপুরজুড়েই নতুন পোশাকে শারীরিক প্রতিবন্ধী দম্পতি আকাশ ও হালিমার ঈদ উদযাপনের আনন্দ আলোড়ন সৃষ্টি করে বরিশাল নদীবন্দর এলাকায়।

এর আগে সকালে খাবার হোটেল থেকে পরোটা কিনে খেয়ে ঈদের দিনের যাত্রা শুরু, এরপর স্ত্রীকে বরিশাল নদীবন্দরে রেখে নগরে এসে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে কেনা নতুন পোশাক পরেন স্বামী-স্ত্রী।

হালিমা বলেন, ভিক্ষার টাহা জোমাইয়া দুইজন দুইজনের জামা কিইন্যা দিছি। আকাশ মোরে ঈদে থ্রি-পিস কিইন্যা দিছে আর মুই পাঞ্জাবি কিইন্যা দিছি আকাশে। যা গায় দিয়া ঘুরতে বাইর হইছি। আজকে পায়ে হাইট্টাই পুরা শহর ঘুরমু। 

আকাশের বাবা-মা কেউ নেই, আর তার (হালিমার) মা থেকেও নেই জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় আমি বরিশাল নদীবন্দরে ডিম বিক্রির কাজ করতাম। তিন বছর আগে আকাশ আর প্রেমে পড়েন এবং আমার কাছাকাছি ঘুরতেন। এরপর আমাকে (হালিমাকে) যে ভালোবাসে তার প্রমাণ দিতে একবার আকাশ অটোরিকশার চাকার নিচেও মাথা দিয়েছিলেন। এরপর ঘাটের লোকজনই আমাদের বিয়ে দেয়। বিয়ের পর আমি কিছু না করলেও আকাশ ভিক্ষা করেন। যা দিয়ে তাদের দু’জনের পেট চলে যায়।  

হালিমা বলেন, সত্য কইতে আকাশ মোরে অনেক ভালো পায়। মোগো কোনো বাড়িঘর নাই, হ্যার লইগ্যা লঞ্চঘাডেই মোরা থাকতাছি। রমজানে সাংবাদিকরা প্রত্যেক রাইতে খাওন দেছে, যা খাইয়্যা দিন কাডাইছি। হ্যার লইগ্যা রোজায় কিছু রান্না না হরলেও এমনে দিনের বেলা এহানেই কোনো জায়গায় খাওন রান্দি। আবার টাহা থাকলে কোনো দিনে হোটেল দিয়া কিইন্যাও খাই, কোনো দিন কেই খাওন দেয়।  

তিনি বলেন, বিয়ার তিন বছরে দুইড্যা বাচ্চা হইছিলো। কিন্তু দুইডাই জন্মের কয়দিন পর ঠাণ্ডা লাইগ্যা মইরা গ্যাছে। কিন্তু আকাশ মোরে এত ভালো পায় যে, ঝগড়াঝাডি হইলেও মোরে ছাইড়্যা যায় ন। মুই ও অরে অনেক ভালো পাই, আকাশও মোরে অনেক ভালো পায়।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে শুক্রবার নদীবন্দরে মুরগির রোস্ট ও পোলাওয়ের ব্যবস্থা করা হয়। যা খেয়ে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাটের মেয়ে হালিমা ও তার স্বামী চাঁদপুরের আকাশের হাত ধরে হাসিমাখা মুখে চোখে চশমা হাঁকিয়ে পায়ে হেঁটে গোটা নগর ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী আকাশ স্বাভাবিকভাবে কথা না বলতে পারলেও আজকের এই ঈদের দিনে নতুন পোশাকে তার আনন্দের কোনো কমতি ছিলো না।

আমারসংবাদ/জেআই