Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সাতক্ষীরায় লকডাউনেও একদিনে রেকর্ড শনাক্ত 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 

জুন ৮, ২০২১, ০২:২০ পিএম


সাতক্ষীরায় লকডাউনেও একদিনে রেকর্ড শনাক্ত 

সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় লকডাউনের চতুর্থ দিনেও করোনা সংক্রমণের হার আরও উর্দ্ধগতি হয়েছে। সর্বশেষ ফলাফলে ১৮৭ জনের শরীরে নমুনা পরীক্ষায় ১০৩ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। যা পরীক্ষা বিবেচনায় ৫৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। যা জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ হার। এ নিয়ে জেলায় আজ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৯ জন।   

করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন এক নারী ও আপন দুই সহোদরসহ আরো ৫ জন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের মনিরা খাতুন, দেবহাটা উপজেলার বদরতলা গ্রামের সুশাংক কুমার, শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালী দু’সহোদর তোহা ও কামাল এবং সদর উপজেলার হাওয়াখালী গ্রামের আবুল হোসেন। এ নিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৩২ জন ব্যাক্তি। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৮ জন। 

এমন পরিস্থিতিতে করোনার লাগাম টানতে প্রশাসনকে কিছুটা কঠোর হতে দেখা গেছে। পুলিশ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আরও বেশী সংখ্যক চেকপোস্ট বসিয়ে সাধারনের চলাচল নিয়ন্ত্রন করছে। জেলায় বাড়ানো হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। 

গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিনদিনে ৪১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ২১৭ টি এবং এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও লকডাউনের বিধিনিষেধ প্রতিপালন না করায় ১লাখ ২৩হাজার ৫৪৩ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। 

এখনও জেলায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিছুকিছু মটরচালিত যান চলতে দেখা গেছে কিছু এলাকায়। এছাড়া সীমিত সময়ের জন্য সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলছে ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানী-রফতানি কার্যক্রম।
 
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২০ টি বেড রয়েছে। আর সদর হাসপাতালে রয়েছে ৩৫টি বেড। প্রয়োজনে সদর হাসপাতালের ১০০ বেড পুরোটাই করোনা ইউনিটে পরিণত করা হবে। মেডিকেলে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সদর হাসপাতালেও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা অচিরেই চালু করা হবে বলে জানান তিনি। 

সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানকার ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, সীমান্ত এলাকাগুলোতে প্রচুর মানুষ সর্দি-জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওই এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্ট করা হবে। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় আইইডিসিআরে। ভারত থেকে সাতক্ষীরায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৩৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জন করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। তাদের জেনেটিক স্যাম্পল পাঠানো হয়েছিল আইইডিসিআরে। তবে সেখান থেকে সরাসরি কোন উত্তর আমরা পাইনি। তবে সীমান্ত এলাকাগুলোতে র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্যাম্পল আমরা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য আইইডিসিআরে পাঠাবো।  

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সে জন্য লকডাউন সফল করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের বেপরোয়া আচরণ রুখে দিচ্ছে পুলিশ। অপ্রয়োজনে যাতে কেউ ঘরের বাইরে না আসতে পারে, সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বাইরে থেকে যেন কেউ জেলার মধ্যে অবাঁধে না আসতে পারে, তার জন্য জেলার দক্ষিণে দুই প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া জেলার তৃণমুল পর্যায়ে লকডাউন সফল করতে থানা ও ফাড়ির পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরায় উদ্বেগজনকভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৪ জুন সকাল ৬টা থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দোকান ও কাচাবাজার ছাড়া সবধরণের মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস