Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মনপুরায় জেলে ও নির্মাণ শ্রমিকদের দখলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি

জুলাই ১২, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম


মনপুরায় জেলে ও নির্মাণ শ্রমিকদের দখলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বিদ্যালয় ভবনের নিচতলায় ইলিশ জেলেরা বুনছে জাল। আবার কোথাও কোথাও স্কুলের ভবনের সামনের মাঠ জুড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শ্রেনী কক্ষে ঝুলছে তালা। আবার কোথাও শ্রেণী কক্ষ দখল করে থাকছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।

এমন চিত্র দেখা মেলে ভোলার মনপুরা উপজেলার বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনের অনেক কক্ষের দরজা কিংবা জানালা নেই বললে চলে। সাম্প্রতি ইয়াসের প্রভাবে এই সমস্ত স্কুলের জানালা নষ্ট হয়েছে বলে জানান একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

তবে দিনের বেলায় স্কুলের মাঠে দাফিয়ে বেড়ায় গরু-ছাগল। রাতে বৃষ্টি হলে স্কুল ভবনের নিচে আশ্রয় নেয় প্রভাবশালীদের গরু-ছাগল। পরিচর্যার অভাবে শেণীকক্ষে জমেছে ময়লার ভাগাড় ও মাঠে জন্মেছে বড় বড় ঘাস। প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

এদিকে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ভূইয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এই স্কুলে শিক্ষার্থী ১৮১ জন। এই বিদ্যালয়টি ভবন দুইটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে নিলামে বিক্রি করা হয়। তবে এখানে নতুন স্কুল ভবনের কাজ চলছে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি অস্থায়ীভাবে ৪ কক্ষের টিনশেডের ঘর করে দিয়েছেন। স্কুলে চালু হলে ১৮১ জন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে খুবই কষ্ট হবে বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিদা বেগম।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪৩টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮টি। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২টি। মাদ্রাসা ৬টি। কলেজ রয়েছে ৩টি।

সরেজমিনে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে স্থাপিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে ঘুরে দেখা গেছে, মনপুরা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরফৈজুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উড়ির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূইয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হারিচ রোকেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চর গোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর কৃষ্ণ প্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ জুড়ে নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ওই সমস্ত বিদ্যালয়ে কক্ষ দখল করে নির্মাণ শ্রমিকরা রাত যাপন করছে। 

এছাড়াও উত্তর সাকুচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর চরফৈজুদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সাকুচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সাকুচিয়া পেয়ারী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনপুরা আন্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাইবের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রহমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সাকুচিয়া এআর খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর সাকচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নিচ তলা দখল করে ইলিশ জেলেরা জাল বুনতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান মোল্লা জানান, প্রত্যেক স্কুল ভবন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নির্মাণ শ্রমিকরা স্কুল রুম ব্যবহার করতে পারবে না। ইলিশ জেলেরা যাতে স্কুলে জাল বুনতে না পারে সেই ব্যাপারে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি এর ব্যতয় ঘটে ওই স্কুল বা দায়িত্বরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ থাকলেও স্কুলের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু আছে। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ভবন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমারসংবাদ/কেএস