Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪,

২ ভাইয়ের গেইম খেলাকে কেন্দ্র করে প্রাণ হারালো মা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

জুলাই ১৩, ২০২১, ০৩:২০ পিএম


২ ভাইয়ের গেইম খেলাকে কেন্দ্র করে প্রাণ হারালো মা

জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের দুই-ভাইকে মোবাইলে গেইম খেলতে দেয়ার অপরাধে মা শাহিনুর আকতার (৩০) কে মেরে হত্যা করেছে বাবা আজিবর রহমান। 

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় পৌর শহরের পাঁচশিরা-মাত্রাই সড়কের রেহেনা চাউল কল-২ নামে ধান শুকানোর চাতালে এ হত্যা ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে স্বামী আজিবর রহমান পলাতক রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শাহিনুর-আজিবর দম্পতির বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বুরুঙ্গি গ্রামে। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রায় ২০ বছর ধরে কালাই পৌর শহরের বিভিন্ন ধান শুকানো চাতালে কাজের মধ্যে বসবাস করে আসছিলেন। সংসারে দুই ছেলে আশিকুর রহমান আপন (১২) ও পরান (৮) এবং মেয়ে খুশি (২)। মঙ্গলবার বিকেলে শাহিনুর-আজিবর দম্পতির দুই ছেলে আপন ও পরান চাতালে ছোট বোন খুশিকে নিয়ে একেকজন ৪০ মিনিট করে বাবা আজিব রহমানের মোবাইল সেটে গেইম খেলছিল। এই ফাকে স্বামী-স্ত্রী মিলে ধান শুকানোর কাজ করছিল। বড় ছেলে আপন ৪০ মিনিট খেলার পর ছোট ছেলে পরানকে মোবাইল দেয়। তখন বোন খুশিকে নিয়েছিল আপন। হঠাৎ করে খুশি কান্না করতে থাকলে মা শাহিনুর কাজের ফাঁকে এসে মোবাইল সেট কেড়ে নেয় এবং দুই ছেলেকে শাসন করে। 

এমন অবস্থা দেখে বাবা আজিবর তার স্ত্রীকে গালে একটি থাপ্পর মারলে স্ত্রী শাহিনুর স্বামীর উপর রাগ করে ওই মোবাইল সেট মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। এমন দৃশ্য দেখে স্বামী আজিবর তার স্ত্রী শাহিনুরকে মারপিট করতে থাকে এক পর্যায়ে শাহিনুর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওই অবস্থায় স্বামী ও প্রতিবেশীরা মিলে শাহিনুরকে অটো ভ্যান যোগে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে করোনার রোগী ভর্তি থাকায় তাদেরকে চিকিৎসকরা পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। ওই অবস্থায় অটো ভ্যানে তার স্ত্রীকে রেখে স্বামী আজিবর রহমান পালিয়ে যায়। 

নিহত শাহিনুরের ছোট ছেলে পরান বলেন, মোবাইল ভাঙার জন্য বাবা মার বুকে লাথি মারে। তখন মা মাটিতে পরে যায়। বাবা, চাচী ও প্রতিবেশীরা মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে শুনি আমার মা মারা গেছে। 

প্রতিবেশী রেজাউল করিম বলেন, মারপিটের ঘটনার পর আমি এসে দেখি শাহিনুর মাটিতে পড়ে আছে। তখন স্বামী আজিবরসহ আমরা কয়েকজন অটোভ্যানে করে কালাই হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে করোনার রোগী ভর্তি থাকায় তাকে নিয়ে ক্ষেতলাল হাসপাতালে যাওয়ার পথে সে মারা যায়। শাহিনুর মারা যাওয়া দেখে স্বামী আজিবর টাকা ভাংতি করার কথা বলে লাশ রেখে পালিয়ে যায়। আমরা বাধ্য হয়ে লাশ নিয়ে চাতালে আসি। 

নিহত শাহিনুরের ভাই শিপন বলেন, আমার ভগ্নিপতি একজন নেশাখোর। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। আজ আমার বোনকে সামান্য একটা মোবাইল সেট ভাঙার জন্য মারপিট এবং নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি বোন হত্যার বিচার চাই। 

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বামী পলাতক রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

আমারসংবাদ/কেএস