Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সরকারি কলেজে ‘বেসরকারি কার্যক্রম’!

আগস্ট ১০, ২০২১, ১১:৪০ এএম


সরকারি কলেজে ‘বেসরকারি কার্যক্রম’!

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলেজ সরকারি হয় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা ও কলেজ সরকারিকরণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার ৫ বছর হয়ে গেলেও কাজ চলছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান'র মতো। 

জানা গেছে, এ অবস্থা সারাদেশের প্রায় তিন শতাধিক কলেজের। এসব কলেজ সরকারি করা হলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের আত্তীকরণ না করায় তারা সরকারি হতে পারেননি। ফলে সরকারি হওয়ার সুযোগ পেয়েও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বহু শিক্ষক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন। হতভাগ্য এই শিক্ষকরা সরকারি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না।

এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাঠাদানের জন্য নাম মাত্র শিক্ষক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ফেঞ্চুগঞ্জ   সরকারি কলেজ।

পাঁচ বছরেও সরকারিকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে প্রতি উপজেলায় সরকারিকৃত কলেজগুলো।

সূত্র জানায়, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে সরকারি কলেজবিহীন উপজেলায় ১ টি করে কলেজ সরকারিকরণের লক্ষ্যে ১৯৯ টি কলেজকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে সরকারিকরণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। 

এই কলেজগুলোর মধ্যে তৎকালীন ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ একটি এবং একই বছর ২৫ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চলের অধীনে কলেজের যাবতীয় তথ্যাদি যাচাই বাছাই করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকায় প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়।

কিন্তু এর পর বিসিএস (শিক্ষা ক্যাডার)- এর আন্দোলন ও হাইকোর্টে রিট মামলার প্রেক্ষিতে, অতীতের আত্মীকরণ বিধি বাদ দিয়ে প্রায় ২ বছর পর আত্তীকৃত শিক্ষকদের নন-ক্যাডার করে 'সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮' প্রণয়ন করে ০৮ আগস্ট, ২০১৮ সালে থেকে কলেজটি সরকারিকরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

কিন্তু সরকারিকরণের ৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও, আজ পর্যন্ত এলাকাবাসী, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এর যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের সুফল পায়নি। অধিকন্তু, স্বপ্নের সরকারি কলেজটির সব সুযোগ সুবিধা এখনও বেসরকারিই রয়ে গেল। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক অভিভাবকরা বলেছেন, সরকারি কলেজে পড়েও যদি বেসরকারির নিয়মে বেতন-ভাতা দিতে হয়, তাতে শিক্ষার্থীদের লাভ নেই। 

এদিকে কলেজ সূত্র জানায়, বিসিএস ক্যাডার পদে চাকরি পাওয়ায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ কলেজ থেকে চলে যান পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক সুমাইয়া ফেরদৌস। সরকারি শর্তের কারণে তার স্থলে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, সরকারীকরণের আদেশে শর্ত দেওয়া হয় যে, নতুন করে আর কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

গত ১৭ ডিসেম্বর অবসরে যান এই কলেজের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক বিপুল চন্দ্র দত্ত। এছাড়া গত ২৯ জানুয়ারি অবসরে যান বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম আরা বেগমও। তবে এসব শিক্ষকের ক্লাস নেওয়ার জন্য কোনো শিক্ষক নেই।

কলেজ সূত্র জানায়, প্রায় ২৮০০ শিক্ষার্থীর এই কলেজটি শিক্ষক সংকটে ধুঁকলেও দেখার কেউ নেই। অবসর, পদত্যাগ এর কারণে শূন্য হওয়া পদগুলো বছরের পর বছর ধরে শূন্যই থাকছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, পাঁচ বছরেও আত্তীকৃত হতে না পারায়, সরকারিকৃত ৩০৩ টি কলেজের সকল শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে সরকারি সুবিধা না পেয়ে অবসর যাওয়া ও বেতন ভাতাদি না পাওয়ায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারিকরণ স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এসব কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনের একটা নির্দেশনার দিকে থাকিয়া আছেন যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা এডহক নিয়োগ পাবেন।

এ প্রসঙ্গে ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রপ্ত) সৈয়দ নূরুজ্জামান বলেন, আমাদের কলেজে চারটি বিষয়ে অনার্স কোর্স সহ স্নাতক পাস ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠাদান করা হয়। কিন্তু শিক্ষক সংকটে একাডেমিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে শিক্ষকহীন সহ ৪১ শিক্ষক পদের বিপরীতে ১৯ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এছাড়াও কলেজ সরকারিকরণের পর থেকে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী অবসর গ্রহণ করলেও, সরকারি অথবা বে-সরকারি অবসর সুবিধা না পেয়ে মানবতর জীবন যাপন করছেন। আগামী ডিসেম্বরে আরও একজন শিক্ষক অবসর গ্রহণ করবেন। করোনাকালীন পরিস্থিতির কারণে নন-এমপিও শিক্ষকদের কলেজ থেকে বেতন-ভাতাদি দেওয়াও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।

আমারসংবাদ/এআই