Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ডাচ বাংলা ব্যাংকের কোটি টাকা নিয়ে এজেন্ট উধাও

এস কে হাসান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: 

আগস্ট ২০, ২০২১, ১১:০৫ এএম


ডাচ বাংলা ব্যাংকের কোটি টাকা নিয়ে এজেন্ট উধাও

আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়াস্থ ডাচ-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যাংকের এজেন্ট মহিব উল্লাহ মিন্টু আত্মগোপন করেছেন। প্রতারণার শিকার শত শত গ্রাহক ও ডিপোজিতকারী টাকা উদ্ধারে ব্যাংকের সামনে গিয়ে ব্যাংক বন্ধ দেখে হতাশ হয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। 

হিজলিয়া গ্রামের মহিব উল্লাহ মিন্টু “মিন্টু টেলিকম’ নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা শুরু করেন। ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্যাংক উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে ব্যাংকে গ্রাহক সংখ্যা ১২/১৩ শত। গ্রাহকরা এখানে লক্ষ লক্ষ টাকা সঞ্চয় জমা দিয়েছেন। 

এছাড়া এ পর্যন্ত ৩৯ জন বিভিন্ন মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসাবে ২৯ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা জমা করেছেন। ব্যাংকের মালিক পিন্টু ব্যাংক পরিচালনার জন্য টেইলার পদে মমতাজ পারভিনকে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা জামানত নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া ম্যানেজার সুকান্তকে ৩ লক্ষ টাকা, অন্য অফিসার ও পিওন নাজমুছ সাকিবকে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, জোবায়ের হোসেনকে ২ লক্ষ টাকা, শিউলিকে দেড় লক্ষ টাকা ও প্রশান্তকে ১ লক্ষ টাকা জামানত নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া কলিমাখালী গ্রামের রিপন হোসেনকে ম্যানেজার পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা ও হামিদা খাতুনকে অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে দেড় লাখ টাকা জামানত নিয়েও তাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। 

এখানে গ্রাহক বা ডিপোজিতকারীদের টাকা রশিদের মাধ্যমে গ্রহণ করা হলেও টাকা গ্রাহকদের একাউন্টে জমা করা হয়নি। তাদের মোবাইলে কোন ম্যাসেজও দেওয়া হয়নি। বরং দিন শেষে মালিক মিন্টু ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক চালানোর জন্য কিছু টাকা ব্যাংকে রেখে বাকী টাকা নিজেই নিয়ে এসেছেন। এসব টাকা স্বত্ত্বাধিকারী মহিবউল্লাহ মিন্টু ও টেইলার মমতাজ পারভিনের যৌথ একাউন্টে রাখা হতো বলে জানা গেছে। তবে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে যে কোন একজনের আঙ্গুলের ছাপে টাকা উঠানো হত। 

এব্যাপারে টেইলার মমতাজ পারভিন জানান, মহিবউল্লাহ প্রতিদিন হিসাব খাতায় লিখে ব্যাংকে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা রেখে এবং টাকা গ্রাহকদের ও ডিপোজিতকারীদের একাউন্টে জমা না রেখে বাকী টাকা নিয়ে যেতেন। তার (মমতাজের) একাউন্টে বর্তমানে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৬৯ টাকা জমা রয়েছে বলে তিনি জানান।

ব্যাংকের অন্যরা ও ডিপোজিত কারীদের মধ্যে শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় শিশু কার্ডের ৮ মাসের টাকা ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান। ব্যাংকে নগদ ক্যাশ লক্ষাধিক টাকা আছে বলে তারা জানান।

আরেক আমানতকারী নাকতাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি ও জমিদাতা মথুরানন মন্ডল জানান, ক্লিনিকের কাজের জামানতের ১০ হাজার টাকা মহিলা মেম্বার তহমিনা জ্য়োর্দ্দার জমা দেন ব্যাংকে। কিন্তু তারও কোন ম্যাসেজ তারা পাননি।   

একই মালিক ডাচ-বাংলা ব্যাংক তালতলা বাজার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অফিস একই বিল্ডিংয়ের অন্য কক্ষে এনে কাজ করে আসছেন। এখানে ৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টেইলার পদে রোজিনা আক্তার (জামানত নেওয়া হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা), ম্যানেজার পদে বিপুল সানা (জামানত ৫ লক্ষ টাকা) ও আরও পদে মারুফুল ইসলাম (জামানত ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা), পিয়ন পদে আলামিন হোসেনকে নিয়োগ দিয়ে জামানত নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ইরানী নামে একজন সহকারী ম্যানেজারও আছে বলে জানা গেছে। 

এজেন্ট ব্যাংকের টেইলার মমতাজ বেগমসহ অন্যরা জানান, সাতক্ষীরা থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এস এস এম, এবি মো: মোরশেদ আলম গত ১৬ আগস্ট ব্যাংকে এসেছিলেন এবং তিনি এফডিআর বাবদ নগদ টাকা নিয়ে গ্রাহকের একাইন্টে জমা না করার কারণে ৩ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়ে যান। এরপর থেকে ব্যাংক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। 

এব্যাপারে এসএসএম, এবি মোরশেদ আলম জানান, আমি ভিজিট করেছি, ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করেছি। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ ও মোবাইলে অনেকের সাথে কথা বলেছি। অনিয়ম ধরা পড়ার পর মিন্টুকে ডাকার পর টাকা জমা দিয়েছে। কোন সমস্যা থেকে থাকলে জানলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সে ব্যাংককে ব্যবহার করার চেষ্টা করে অনৈতিক কিছু করে থাকলে তার দায় তাকেই নিতে হবে। এজন্য ব্যাংকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। 

আমারসংবাদ/এমএস