Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঝালকাঠির নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, ০৭:১০ এএম


ঝালকাঠির নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ

ঝালকাঠি ও এর আশপাশের নদ-নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুমে প্রচুর ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ছে। আকারে বেশ বড় এসব ইলিশ অন্য সময়ের চেয়ে খেতেও সুস্বাদু। মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার ছাপিয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে শহরের অলি-গলি ও বাসাবাড়িতে।

ঝালকাঠি মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের প্রতিটি ইলিশের পেটেই মিলছে ডিম।

মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এখন বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজনও বেড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং আরেকটি জানুয়ারি থেকে  ফেব্রুয়ারি। সরকার  ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ২০মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। 

এসব কারণে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারছে। জাটকা ইলিশ মা ইলিশ ভালোভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এ জন্যই এখন এত ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের দামও একটু কম। ইলিশের পেটে ডিম আসতে শুরু করেছে আরো কয়েকদিন আগে। ডিম ছাড়ার সময়ে মা ইলিশ নদীতে আসে। তাই ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ নিধন,  পরিবহন ও মজুদ সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জেল-জরিমানা শাস্তির বিধানও রয়েছে। 

ঝালকাঠির ১৭ কিলোমিটার প্রবাহমান সুগন্ধা আর বিষখালীর ৩০ কিলোমিটার মিঠা পানিতে প্রতি বছর প্রায় ১২০০ টন সুস্বাদু ইলিশ ধরা পরে।

সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়, তাই এখানকার ইলিশ দক্ষিণের বিখ্যাত বলে দাবি করেছেন জেলেরা।  সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলার উৎসব চলে বর্ষাকালে ইলিশের ভরা মৌসুমজুড়ে। সারা বছর ইলিশ ধরা পড়লেও আগস্ট মাস থেকে  নভেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ পাইকারদের মাধ্যমে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে।  দেশ ছাড়িয়ে ভারতেও রফতানি হয় ঝালকাঠির সুস্বাদু রূপালি ইলিশ।
 মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠি গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা।

 শেষ হয় বরিশালের কীর্তণখোলার পশ্চিমাংশে গিয়ে। সুগন্ধার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে বেশিরভাগ জেলেই ইলিশ শিকার করেন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদলসহ ২০টি এলাকায় শত শত জেলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন এসব এলাকায়।

জেলেদের বেশিরভাগই নদীর দুই তীরের বাসিন্দা।  ক্রেতা ও পাইকাররা অনেক সময় তরতাজা ইলিশ কিনতে নদীর তীরে এসে বসে থাকেন। জেলেরা মাছ শিকার করে বাড়ি ফেরার পথে পথেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধেকেরও বেশি। বাকি ইলিশগুলো শহর ও গ্রামের বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয়।

নদীতে বর্তমানে ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-আড়াই  কেজিরও ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২শ’ টাকা কেজি দরে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এখন এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

পুরাতন বাজার, কুমারখালী বাজারে বছরের সবসময়ই পাওয়া যায় ইলিশের দেখা। মৌসুমের সময় দাম কম থাকে এসব বাজারে। বাকি সময় দেড় হাজার  থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয় ইলিশ।

চরবহরমপুর এলাকার জেলে আবুল কালাম বলেন, সুগন্ধার ইলিশ খেতে খুবই সুস্বাদু। আমাদের আশপাশের এলাকার মানুষ সারাবছরই সুগন্ধার ইলিশ খাচ্ছেন। ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। মিঠা পানির রূপালি ইলিশ ধরতে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জোয়ারের শুরুতে জাল ফেলি। এসময় মাছগুলো একত্রিত হয়ে ছোটাছুটি করে, তাই সময়মতো জাল  ফেলতে পারলে প্রতিনৌকায় ১০-১৫ কেজি করে ইলিশ পাওয়া যায়।

ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কৃষ্ণ ঘোষ জানান, সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেব করে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

আমারসংবাদ/এআই