Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বরিশাল মহানগর আ.লীগের সভাপতি-বিসিসি কাউন্সিলের ফোনালাপ ভাইরাল

বরিশাল ব্যুরো

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১, ১১:৪৫ এএম


বরিশাল মহানগর আ.লীগের সভাপতি-বিসিসি কাউন্সিলের ফোনালাপ ভাইরাল

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মহানগর যুবলীগ সদস্য ও বিসিসি কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের ফোনালাপের একটি অডিও রেকর্ডিং ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।

ওই ফোনালাপে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং এক সময় ‘হাসানাত মুক্ত’ বরিশাল শ্লোগানধারীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিপ্লব। 

এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কাছে অবজ্ঞা-অবমূল্যায়নের অনুযোগ করা হয় ৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপে। বলেন মরে গেলেও সাদিকের সঙ্গে আপোষ নাই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে এই ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ধারাবাহিকভাবে দলীয় কাউন্সিলর এবং নেতাকর্মীদের ফোন দেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর। এরই ধারাবাহিকতায় মহানগর যুবলীগ সদস্য ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবকেও ফোন দেন তিনি। তবে বিপ্লব ফোন ধরেননি। 

কিছুক্ষণ পর সে নিজেই কল করেন একেএম জাহাঙ্গীরকে। সালাম এবং কুশল বিনিময়ের পর বিপ্লব বলেন, যারা সার্কিট হাউজে ‘হাসানাতের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, হাসানাতমুক্ত বরিশাল চাই’ শ্লোগান দিয়েছে তাদের নিয়ে বরিশাল আওয়ামী লীগ করে সাদেক (মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ), আগামো লাগে কিসে। আমরা ৮৭ সাল হইতে এই সংগঠন করি, ও (সাদিক) ছিলো কোথায় তহন।’

উত্তেজিত কন্ঠে বিপ্লব বলেন, ‘করোনার সময় হাজার হাজার টন চাউল দেছে- কোটি কোটি টাকা দেছে সরকার; ও আমাগো এক ছটাক চাউল দেয় নাই, চাইরআনা পয়সা দেয় নাই। ও দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়। ওর সাথে বুইজ্যা খাইতে না পাড়লে বরিশাল শহরে থাকমু না। সিনিয়রগো লগে কোনদিন আমাগো সম্পর্কের অবনতি হইবে না, কিন্তু ওর লগে কোন দিন আপোস নাই, লাগলে মইর‌্যা যামু জাহাঙ্গীর ভাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় আইলে এ্যামনেও আমাগো মাইর‌্যা হালাইবে। কারণ ব্রিগেডিয়ার জিয়ার আমি ছোট ভাই। তারেক জিয়া কোনদিন ব্রিগেডিয়ার জিয়াকে ছাড়বে না।’ তোমারে কেডা মারবে জাহাঙ্গীরের এমন প্রশ্নে বিপ্লব বলেন, ‘ও (সাদিক) যে অবস্থায় আমাগো রাখছে তার চাইতে মইর‌্যা যাওয়া ভালো। জামাত-বিএনপি আইলে লাগলে বোরখা পইর‌্যা চলমু, লাগলে সুন্দরবন যামু কিন্তু আমরা দেশ ছাড়মু না। কথার এক পর্যায়ে একেএম জাহাঙ্গীর কাউন্সিলর বিপ্লবকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেন। তখন বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন আমরা আমাগো মতো পালন করমু। আমরা এই দল করি না, আমি বিএম কলেজে ৩ বার নির্বাচন করছি না?’ 

বিপ্লব মহানগর সভাপতিকে বলেন, ‘সাদেক আবদুল্লাহরে কইয়েন আমাগো এই শহর দিয়ে সরাইয়া দেতে। আমরা আমাগো ডা বুইজ্যা নেতে পারমু। বহুত সহ্য করছি ওর অপমান অপদস্থ। হাসানাত ভাইরে শুনাইয়েন এই রেকর্ডটা। জাহাঙ্গীর কল রেকর্ডিং করেন না বলে ওই সময় বলেন। তখন বিপ্লব বলেন, ‘সাড়ে ৩ বছরে লুইট্যা খাইয়া হালাইছে বরিশাল শহরডা। পোলাপানেরে একটা পয়সা দেতে পারে নাই। ও ঢাকা যাইয়া চুল কাটাইন্না লাইভ দিয়া বরিশালের উমেশ নাপিতের (নরসুন্দর) ধারে মাফ চায়। ও মাফ চাইবে সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাগো ধারে, আপনাগো সাথে বেয়াদবী করছি পা ধইরা মাফ চাইবে মাফ কইরা দেন ভাই। ওর তো ভাবসাব ছাত্রলীগ ছাইর‌্যা দেলে আমরা এই শহর দিয়া পলাইয়া যামু।’

এসময় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে বলেন, ধৈর্য্য ধর, মাথা ঠান্ডা করো। জবাবে উত্তেজিত বিপ্লব বলেন, ‘ধৈর্য্য তো সাড়ে ৩ বছর ধরছি। আমরা ধৈর্য্য ধরমু আর মাখম খাইয়া ও ফোডবে। আমরা ধৈর্য্য ধরমু আর গেস্টিক বাবু সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ঘোরবে। টুটুইল্যার মতো লোক বরিশাল শহরে চাঁদাবাজী করবে আর আমরা ধৈর্য্য ধরমু।’ এ সময় সভাপতি বলেন, ‘আমি রিক্সায় ঘুরি দ্যাহো না।’ 

বিপ্লব তখন বলেন, ‘আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালের অভিভাবক, তার চাইতেও ও (সাদিক) বড় নেতা। ওর আমাগো লাগে নিহি। ও আমার পরিবার সম্পর্কে মন্তব্য করলো কেন আমাগো এলাকায় আইস্যা। ওর এত বড় সাহস! ও বোঝে না আমরা কারা।’ এ পর্যায়ে আবারও বিপ্লবকে রাগ থামাও রাগ থামাও বলেন সভাপতি। তখন বিপ্লব বলেন, ‘ওর মেয়রের চেয়ার সেগুন কাঠের রিভলিং চেয়ার। আমার কাউন্সিলরের চেয়ারডাও সেগুন কাঠের রিভলিং চেয়ার। ও জনগণের প্রতিনিধি। আমরা কাউন্সিলররাও জনগণের প্রতিনিধি। ও সেভাবে আমাগো মূল্যায়ন করে নাই সাড়ে ৩ বছরে।’ এই পর্যায়ে সভাপতি বলেন, হ্যাঁ এইডা সত্য, একমত, একমত। ‘প্রধানমন্ত্রীর মিটিংয়ে অবশ্যই অবশ্যই যামু, হাসানাত ভাইর মিটিংয়ে। ওর যে জায়গায় দালালী, ওর যে জায়গায় গুণকীর্তন গাইতে হইবে সে জায়গায় আমি নাই। আমরা আওয়ামী লীগ করি না তো কারা আওয়ামী লীগ করে। আমাগো চাইতে বড় আওয়ামী লীগটা কারা?’ শেষে সালাম দিয়ে ফোনালাপ শেষ করেন বিপ্লব।  

ভাইরাল হওয়া ওই ফোনালাপের বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের দাওয়াত দিতে তাকে ফোন দিয়েছিলাম। সে (বিপ্লব) একটা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়া ফোনালাপ রেকর্ডিং করছে। ও যে এতডা বাজে লোক জানতাম না আমি। ও যে রেকর্ড কইর‌্যা ভাইরাল করবে তা তো আমি বুঝি নাই।