ঢাকা
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,
বরিশাল প্রতিনিধি
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১, ১১:২০ এএম
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন দখল করে গত চার বছর ধরে কিন্ডারগার্টেন পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। একই ভবন দখল করে কার্যালয় করেছেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। স্বাস্থ্য বিভাগের স্টাফও আছেন ভবনটির একাংশ দখল করে। পুরো ভবনের সামনে পাথরের স্তূপ করে রেখেছেন যুবলীগের স্থানীয় এক নেতা। বছরের পর বছর এভাবে সরকারি একটি ভবন বেদখল থাকলেও কিছুই জানেন না স্বাস্থ্য বিভাগ। এ যেন, ‘জোর যার, সবই তার’ এমন অবস্থা।
জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড-সংলগ্ন সদর রোডে কয়েক বছর আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বসবাসের জন্য ৩ তলা একটি ভবন নির্মাণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাজে না আসায় ধীরে ধীরে সেটি বিভিন্ন মহল দখল করে ফেলে। সর্বশেষ গত চার বছর আগে ভবনটির দ্বিতীয় তলা দখল করে কিন্ডারগার্টেন চালু করেন স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমল চন্দ্র শিবু। তবে প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় পৌর মেয়রের নামও। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত সাইনবোর্ডে মেয়রের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য বিভাগের ওই জমি ও ভবন দখল করাই ছিলো দখলকারীদের উদ্দেশ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের ওই সরকারি ভবনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অংকুর কিন্ডারগার্টেনের একটি সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। যাতে লেখা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা বাকেরগঞ্জ পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া। আর পরিচালক হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমল চন্দ্র শিবু।
বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সভাপতি ঠিকাদার খন্দকার জিয়াউর রহমান রিপন বলেন, ভবনটি মূলত ইন্টার্নি ডাক্তারদের হোস্টেল। তারা থাকেন না। কিন্ডারগার্টেন, সেক্রেটারিজ ইন্সপেক্টরসহ স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন সেখানে থাকেন।
বাকেরগঞ্জের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আ. হাকিম বলেন, জমি ও ভবন স্বাস্থ্য বিভাগের। অনেক বছর আগে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে জমিতে ৩ তলা ভবন করা হয়। শেবাচিমের শিক্ষার্থীরা বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইন্টার্ন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করবেন এবং নির্মিত ভবনটি ইন্টার্নদের আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হবে, এমনটাই কথা ছিল। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বাকেরগঞ্জে না আসায় ভবনটি অব্যবহৃত থেকে যায়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা শিবু ভবনটি দখল করে কিন্ডারগার্টেন করেছেন। কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলে তিনি জানান।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের ভবনে অবৈধভাবে স্থাপিত অংকুর কিন্ডারগার্টেন এর পরিচালক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমল চন্দ্র শিবু বলেন, ভবনটি বরিশাল মেডিকেল কলেজের আওতায় একটি প্রকল্পের জন্য করা হয়েছিল। কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা এসে মাঝে মাঝে থাকবেন এমনটাই কথা ছিল। যেটি এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে আছে। ভবনটি অবৈধভাবে দখলে ছিল অন্য একটি পক্ষের। এখনো স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য বিভাগের স্টাফরাও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ভবনের একাংশ। তিনি চার-পাঁচ বছর আগে ভবনের দ্বিতীয় তলায় কিন্ডারগার্টেন করে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এই কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া। মেয়র বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতা শিবু।
সরকারি ভবনে কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা কিন্ডারগার্টেন স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি এবং সেখানকার জমি স্বাস্থ্য বিভাগের। কিন্তু কীভাবে সেখানে কিন্ডারগার্টেন হয়েছে তা তিনি জানেন না। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে হবে।
বাকেরগঞ্জ পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ একটি প্রকল্পের জন্য ভবনটি করেছিল। পরে তা বাতিল হয়। এখন সেখানে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিস এবং নামেমাত্র একটি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের সঙ্গে আমার নামও রাখা হয়েছে বলে জেনেছি।’
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তার জানা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও তাঁকে কিছু জানাননি। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আমারসংবাদ/কেএস
