Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ন্যাচারেল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির দরপত্র নিয়ে হচ্ছেটা কী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ৫, ২০২১, ১১:৫৫ এএম


ন্যাচারেল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির দরপত্র নিয়ে হচ্ছেটা কী

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ন্যাচারেল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড। মেয়াদ শেষ হওয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রি করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

দরপত্রে দরদাতাদের জালিয়াতি ও সমস্যার কারণে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহবান করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দ্বিতীয় দরপত্রে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজের আদেশ না দিয়ে তৃতীয়বারের মত দরপত্র আহবানের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এসব মালামাল বছরের পর বছর পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি দরপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতেই এক বছর সময় লেগে যায়। এভাবে দরপত্র চলতে থাকলে বছরের পর বছর লাগবে। এর ফলে রাষ্ট্রের শত কেটি টাকার সম্পদ নষ্ট হবে ও মালামাল চুরি হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিআইসি সূত্রে জানা যায়, প্রথমবার দরপত্রে অংশগ্রহণ করে বন্দর বাজার, সিলেটের মেসার্স আতা উল্লাহ। তিনি সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন। তিনি দরপত্রে একশত তিন কোটি সাত হাজার পাঁচশত টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে কার্যাদেশও পান। কিন্তু টাকা জমা দিতে না পারায় তার কার্যাদেশ বাতিল হয়। পরবর্তীতে মিল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বান করে।

২০২০ সালে ৪৭তম এসএফসিএল কোম্পানি বোর্ডের অনুমোদনে বিলুপ্ত প্রতিষ্ঠানটির মালামাল বিক্রির জন্য ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর প্রথম উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হয়।

নির্ধারিত তারিখে টেন্ডার বক্সে ৯টি দরপত্র পাওয়া যায়। এরমধ্যে মেসার্স আতা উল্লাহ, বন্দর বাজার, সিলেট ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দর প্রদান করে সর্বোচ্চ দরদাতা হন। ডিসপোজাল কমিটির সুপারিশক্রমে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দর ও ভ্যাট-ট্যাক্স মিলিয়ে সর্বমোট ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় তার অনুকূলে বিক্রয়ের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর এসএফসিএল এর ৪৯ তম কোম্পানী বোর্ড অনুমোদন দেয়া হয়।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি মালামালের বিক্রয়মূল্য জমা না দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিক্রয় আদেশের সময়সীমা বৃদ্ধি চেয়ে রিট করেন। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ চলতি বছরের ৫ এপ্রিল শুনানীতে মেসার্স আতাউল্লাহ, বন্দর বাজার, সিলেটকে উপযুক্ত বিক্রয়মূল্য মে মাসের ৫ তারিখের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু মেসার্স আতাউল্লাহ উপযুক্ত তারিখের বিক্রয়মূল্য জমা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় আপীল বিভাগ মেসার্স আতাউল্লাহ এর বিক্রয়াদেশ বাতিল এবং পিজি বাজেয়াপ্ত করেন।

আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৫ মে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহবান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি তিনটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশের পর নির্ধারিত তারিখে টেন্ডার বক্সে ১৪টি দরপত্রের আবেদন জমা পড়ে।

পরবর্তীতে, এসভ ১৪ দরপত্রের জামানত হিসেবে পাওয়া পে-অর্ডার যাচাই বছাইয়ের জন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৮ টি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র ও জামানত হিসেবে পাওয়া পে-অর্ডার ভূয়া বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো জানায়। এ ঘটনায় দুইশ এগারো কোটি চার লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার ভূয়া দরপত্র জমা দেয়ায় মেসার্স সাইদুর রহমান এর বিরুদ্ধে ব্যাংক এশিয়া থানায় মামলা হয়েছে। এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়না জারী হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, এই ঘটনায় পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছে। এছাড়াও বাঁকি ভূয়া পে-অর্ডারসহ যে ৭ (সাত) জন দরপত্র প্রদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। নির্দেশনায় এই দরপত্র প্রদানকারীরা কেউ আগামী টেন্ডারে অংশগ্রহণ করিতে পারবে না বলেও জানানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে যেহেতু সর্বমোট ১৪টি দরপত্র প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি দরপত্র প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রেসপনসিভ এবং বাঁকী ৮টি প্রতিষ্ঠান নন-রেসপনসিভ সে কারণে রেসপনসিভ দরদাতাদের নন-রেসপনসিভ দরদাতাদের সঙ্গে এক করা হচ্ছে। যা সরকারি ক্রয় নীতিমালা পরিপন্থী।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১০ সদস্য বিশিষ্ট মূল্য নির্ধারণ কমিটি সকল মালামালের পুঙ্খানুপুঙু যাচাই বাছাই করে সর্বোচ্চ বুক ভ্যালু আটানব্বই কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। দ্বিতীয় টেন্ডারে রেসপনসিভ ৬টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আল মামুন ট্রেডাস, ঢাকা একশত একত্রিশ কোটি টাকা দরপত্র প্রদান করেন৷ সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩১ কোটি টাকা বেশি। অথচ রেসপনসিভ দরদাতা হিসাবে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স মামুন ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ প্রদান করা হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কমকর্তাদের কারসাজীর কারণে আল মামুন ট্রেডাস সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও তারা কার্যাদেশ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সূত্র জানায়, ১০ সদস্য বিশিষ্ট্য যাচাই বাছাই কমিটি মূল্য নির্ধারণের পরেও পূণরায় নতুন করে আবার ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট মূল্য নির্ধারণী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন কমিটির কারণ একেবারেই অজানা। এখন প্রশ্ন উঠেছে আগের এ কমিটি কী তবে অসততার আশ্রয় নিয়েছিলেন?

জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায় বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। দরপত্রের যে কমিটি এটি দেখভাল করছেন। ওখানে কিছু সমস্যা থাকার কারণে আবারো দরপত্র আহবান করার বিবেচনা করা হচ্ছে।

পুনরায় মূল্য নির্ধারণ ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে কাজ না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ যোগ্য হয়ে থাকেন তাকে অবশ্যই এ কাজ দেয়া হবে।

আমারসংবাদ/কেএস