Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ফেনীতে কালের সাক্ষী ৪শ’ বছরের কড়ই গাছ

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, ফেনী 

অক্টোবর ৬, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম


ফেনীতে কালের সাক্ষী ৪শ’ বছরের কড়ই গাছ

ফেনী শহরের দাউদপুর ব্রিজের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো একটি গাছ। শহরের প্রবেশমুখে হওয়ায় বিশাল আকৃতির এ গাছটি যে কারো নজর কাড়ে। তপ্ত রোদে শীতল ছায়া দেয়া এ গাছটি স্থানীয়দের কাছে ‘বোট কড়ই গাছ’ নামে পরিচিত।

চলার পথে গাছটি দেখেই এর বিশালতা ও ইতিহাস জানতে অনেকের কৌতুহল জাগে। প্রতি সন্ধ্যায় এ গাছে হরেক রকম পাখির কলরবে মুখর হয়ে উঠে পুরো এলাকা। গাছটি রক্ষায় এর আশপাশে সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিচর্যা করা হলে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ১৮০০ শতকের দিকে তৎকালীন ফেনী মহকুমার প্রথম প্রশাসক কবি নবীন চন্দ্র সেন এই কড়ই গাছের নিচে বসে কবিতা লিখেতেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তখনও গাছটির বয়স শতবর্ষ অতিক্রম করেছিল। সে অনুযায়ী গাছটির বর্তমান বয়স প্রায় চারশত বছরের কাছাকাছি হতে পারে। জেলা পরিষদ এ গাছটির রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করছে। 

স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলার প্রথম রাজা শেরশাহ এই গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বৃটিশ শাসনামলে গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড তৈরির সময় ইংরেজরা এ গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিতেন। 

শহরের পশ্চিম উকিল পাড়ার বাসিন্দা শতবর্ষী মো. এছহাক জানান, জন্মের পর থেকে গাছটিকে এভাবেই দেখে আসছি। এ গাছ নিয়ে দাদা-নানাদের মুখে অনেক গল্প শুনেছি। তবে কেউ গাছটির ডাল-পালা কাটার সাহস পেত না। অনেক আগে জনৈক কাঠুরিয়া ডাল কাটতে এসে অচেতন হয়ে পড়েন।

গাছটির নিচে অর্ধশত বছর ধরে ব্যবসা করছেন অভিলাষ কর্মকার। এ গাছ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যবসার শুরু থেকেই গাছটি এ রকমই দেখছি। একটা সময় এ এলাকায় দোকানপাট তেমন ছিল না। এখন মানুষ বাড়ছে, শহর বড় হয়েছে। কালের পরিক্রমায় অনেক কিছু এখন হারিয়ে গেছে। 

সাংবাদিক জসিম মাহমুদ বলেন, ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এ কড়ই গাছটিতে পরগাছায় ছেয়ে গেছে। এতে অযত্নে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে গাছটির ডাল-পালা। অগাছা দ্রুত পরিস্কার করা না হলে কালের সাক্ষী এ গাছটি হারিয়ে যাবে।

ফেনীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাকসুদ আলম এ গাছটির পাশে আরেকটি রেইনটি রোপণ করার গুরুত্বারোপ করে আমার সংবাদকে জানান, কোন এক সময় গাছটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলেও নতুনটি এর স্মৃতি বহন করবে। এ ক্ষেত্রে স্থান চিহ্নিত করা হলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মরণীয় করে রাখতে আমরা এখানে একটি রেইন টি চারা রোপণ করবো।

জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল বশর মজুমদার তপন আমার সংবাদকে বলেন, মানুষের অক্সিজেন সরবরাহ ও বিভিন্ন ধরণের পাখির বাসস্থান এ গাছটি জেলার ঐতিহ্য বহন করে। বিশাল আকৃতির এ গাছটি ছায়া দান করছে। এজন্য এটি কখনো কাটা হয়নি। এ গাছের কারণে কারো অসুবিধা হচ্ছে না বরং শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। 

আমারসংবাদ/কেএস