Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিতর্কিতরা চায় নৌকার মনোনয়ন

বরিশাল প্রতিনিধি

অক্টোবর ১৮, ২০২১, ০১:১৫ পিএম


বিতর্কিতরা চায় নৌকার মনোনয়ন

তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১০০৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যার মধ্যে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া, হারতা ও বামরাইল ইউনিয়ন রয়েছে। আসন্ন এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার গুঠিয়া ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনিত প্রার্থী হতে নারীসহ আবেদন করেছেন কমপক্ষে ১০ জন। 

এদের মধ্যে হত্যা মামলায় দন্ডিত ব্যক্তি, মাদক ব্যবসায়ি, চিহ্নিত ছাত্রশিবির নেতা, দলীয় নেতাকর্মীদের লাঞ্চিত-নির্যাতনকারী, ভূমিদস্যুসহ সাংবাদিক নির্যাতনকারীও রয়েছেন। এসব প্রার্থীদের নিয়ে গোটা উপজেলা জুড়ে চলছে নানামুখী সমালোচনা। 

বিপরীতে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দলীয় প্রতীক পেতে যে যার মতো করে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে দৌড়ঝাঁপ-তদবির চালাচ্ছেন। যেন মনোনয়ন বাগাতে পাড়লেই বিজয়ী। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারে চলমান এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের আসন্ন্ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনিত প্রার্থী হবার বাসনায় এবারো দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. দেলোয়ার হোসেন। যিনি যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত দল এনডিপি’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

তবে সংসদ সদস্য পদে ওই নির্বাচনে হেরে গিয়ে দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ২০০৩ সালে গুঠিয়া ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের অনুসারী হয়ে যান। এর কয়েক বছর পরেই উজিরপুর পৌরসভা স্থাপন নিয়ে গুঠিয়া ইউপির সাথে সীমানা জটিলতা দেখা দেয়। যার কারণে দীর্ঘ একযুগ ধরে গুঠিয়া ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চেয়ারম্যান হিসেবে কোন বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই দায়িত্ব পালন করেছেন  দেলোয়ার হোসেন। 

এরপর ২০০৮ সালে দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে চেয়ারম্যান পদ টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন সাবেক এনডিপি নেতা দেলোয়ার। হঠাৎ করে দেশের সরকার পরিবর্তনের পর নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০১৬ সালে গুঠিয়া ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে সংষ্কারপন্থী দেলোয়ার অর্থের প্রভাবে নৌকা প্রতীক বাগিয়ে নেন। 

কিন্তু ওই নির্বাচনে দেলোয়ারের বিগত দিনের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর কাছে তার ধরশায়ী হওয়ার শংঙ্কা দেখা দেয়। যার কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দলের প্রতীক নৌকার মান বাচাতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীকে চাপে রেখে একতরফা দেলোয়ারকে বিজয়ী করে। 

এরপর সাবেক এনডিপি নেতা দেলোয়ারকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু করেন নিজ ইউনিয়ন পরিষদে শালিসির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, ইউপি সদস্যদের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের চাল আত্মসাত, আইন বহির্ভূত সরকারি সম্পদ বিক্রয় ও সেচ্ছাচারিতা। 

তবে দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদ দখলে রেখেও বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার গুঠিয়া ইউনিয়নে আশানুরুপ উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। এদিকে গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এবারও ফের আবেদন করেছেন সাবেক ছাত্রশিবির নেতা ও বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য আওরঙ্গজেব হাওলাদার (কালু)। যার বাবা উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুস ছত্তার হাওলাদার।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, গুঠিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতার বদৌলতে তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজে যোগ দিয়ে অল্পদিনে কোটিপতি বনে যান। পরে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পড়ে ছাত্রশিবির ছেড়ে আওরঙ্গজেব আর বিএনপি ছেড়ে বাবা আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ার চেষ্টায় নেমে পড়েন। পোষ্টার সাটানো ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজি-খুশি করে একপর্যায়ে বাবা-ছেলে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় আবেদন করেছেন গুঠিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ ছত্তার মোল্লা।

যিনি আলোচিত জুলেখা হত্যা মামলার প্রধান আসামী। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রদান করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্ত রয়েছেন ছত্তার মোল্লা। মনোনয়ন পেতে থেমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা এস.এম মিন্টু। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও বিগত দিনে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা এবং এলাকার বিভিন্ন ঘটনায় শালিসের নামে সাধারণ জনগনকে জিম্মি করার কারণে বেশ বিতর্কিত। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী খান। যিনি বিএনপিতে যোগদান করে আবার দলে ফিরে এসেছেন। 

বছর দুই আগে এই নেতা নারী ও মাদকসহ গভীর রাতে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন। তবে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চেয়ে ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক শাহিন। যিনি নিজ দলীয় কু-চক্রী মহলের ইঙ্গিতে একটি অস্ত্র মামলায় ফেঁসেছিলেন। তবে ওই মামলায় তিনি বিজ্ঞ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান। 

অপরদিকে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে বেশ আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি জোট সরকারের আমলে নির্যাতিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক  ও বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডঃ সাকলান হোসেন খান। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আবেদন করেছেন, উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ন আহবায়ক মো. রফিকুল ইসলাম শিপন মোল্লা, মহিলা লীগ নেত্রী লীনা নাজনিন, নব্য আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজুল ইসলাম, আসাদ মোল্লা। 

মনোনয়নের প্রত্যাশীদের বিষয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার বলেন, বিগত দিনে গুঠিয়ায় উশৃঙ্খল রাজনীতির চর্চা দেখেছি। বিতর্কিতরা দলীয় পদবী আকরে আছে। তাদের কারণে প্রবীণদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এবারে দলীয় মনোনয়ন যেন শিক্ষিত, মার্জিত ও কর্মিবান্ধব কাউকে দেয়া হয়। 

মনোনয়ন প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এই মুহুর্তে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাদের দাবি, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এরপরে দলের হাইকমান্ড থেকে যাদেরকে নৌকার মনোনয়ন দিবেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাদের জন্যই কাজ করবেন।