মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
নভেম্বর ৪, ২০২১, ০৫:০০ এএম
মাগুরা জেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সহিংসতা ৪ হত্যাকাণ্ডের পরে আবার গ্রামে চলছে চুরি, লুটপাট। এমন অভিযোগ তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী ঐ পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (৩ নভেম্বর) সকালে জগদল ইউনিয়নের সৈয়দ রুপাটি গ্রামে দেখা যায়, কয়েকটি বাড়ির, গেট, দরজা, জানালা এবং কিছু আসবাবপত্র নিয়ে গেছেন, কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিরা। তবে গ্রামটিতে পুরুষ শুন্য থাকলেও কিছু ঘনবসতিতে রয়েছে ভুক্তভোগীদের আত্মীয় স্বজন নারী সদস্যসহ শিশু।
ঘটনা স্থান থেকে সরাসরি দেখা যায়, ভবনের পাস থেকে কিছু লোহার গেইট, জানালা, দরজা ইটের গাঁথুনি ভেঙে নিয়ে গেছে অজ্ঞাতনামারা। এ সময় উপস্থিত আলাল, ছবদুল, আছুবার এবং ওবায়দুর এর বাড়ির নারী সদস্যরা এমন অভিযোগ তুলেন গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে। তারা এ ঘটনা কে পরিবারের সদস্যদের না থাকায়, গভীর রাতে চুরি বলে মনে করেন।
অপর দিকে বাদী পক্ষের অভিযোগ, প্রকাশ্য দিবালোকে ১৫ তারিখে জগদল পুকুর পাড়ে তিন জন ব্যাক্তিকে হত্যা করে মেম্বার এর লোকজন। তাদের উদ্দেশ্য অপক্ষমতা দখলের পায়তারায় জগদল ইউনিয়ন ঘিরে, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার দাঁড়ানো নিয়ে শুরু করে প্রথম সূত্রপাত। আর এই হত্যা মামলা হালকা করতে এ সব নিত্য নতুন নাটক রচয়িতা করে যাচ্ছেন, আসামি পক্ষের ব্যাক্তিরা। বিচার চাই আইনের প্রতি।
তবে এ ঘটনায় মাগুরা সদর থানা অধিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে পাঁচটি টিম আকারে। এ সময় উপস্থিত কর্মরত মাগুরা সদর থানা পুলিশ বলছেন, সর্বক্ষণ এলাকার জনগণের জান মাল রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন মাগুরা জেলা পুলিশ। ঘটনাস্থান এই ইউনিয়ন পরিষদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সক্রিয় ভাবে টহল নজরদারিতে রয়েছে পুলিশ। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। সবাই কে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। বসতি বাড়ির আসবাবপত্র চোর সিন্ডিকেট দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তবে বিষয়টি দ্রুত ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। অবশ্য সনাক্ত করণ সম্ভব।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী মিস্তিরি মোঃ নবা' তার স্ত্রীর সাক্ষাৎ কালে তিনি বলেন, এটা কেউ গভীর রাতে অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের এলাকায় ঘটনা টি কেন্দ্র করে সব সময় পুলিশ থাকে। কিছু লোহার দরজা গেইট, আগে মালামাল লুটপাট হলেও এখনো বন্ধ আছে, এখন গভীর রাতে মালামাল চুরি হচ্ছে। কারণ ঐ সকল ব্যাক্তিদের বাড়িতে কোন লোকজন নেই। তাছাড়া তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে, আসামিদের ধান আসামিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছেন মাঠ থেকে। কেউ বাঁধা দেয়নি, এখনো ধান কাটছেন।
মাগুরা সদর উপজেলার জগদল গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে উভয় পক্ষের মোট ৪ জন ব্যাক্তির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ১৫ অক্টোবর বিকালে, মাগুরায় সদর উপজেলার জগদল গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সহিংসতা নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে প্রকাশ্য দিবালোকে একই পরিবারের কবির মোল্যা, সবুর মোল্যা, রহমান মোল্যা এবং পাশের গ্রামের ইমরান নামে এক যুবক নিহত হয়। এ সহিংসতা
ঘটনার তিনদিন পর মাগুরা সদর থানায় জগদল ইউনিয়নের বর্তমান মেম্বর নজরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে নিহতদের ভাই আনোয়ার হোসেন ৬৮ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
মাগুরা আসাদুজ্জামান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মাগুরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের আনুমানিক ২৫০জন চেয়ারম্যান,এবং মেম্বর, প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসাররা অংশ নেয়া এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, মাগুরায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রতিশ্রুতির কথা।
জগদল ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা অবশেষে চার হত্যার ঘটনা মাগুরা পুলিশের তদন্ত চলা কালিন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার গাবতলি এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মাগুরা জেলা জদগল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সহিংসতা নিহত মামলার মূল আসামি নজরুল মেম্বরসহ আগে পরে সব মিলিয়ে ৫ জনকে।
এ দিকে জগদল ইউনিয়নে সহিংসতা চার জন নিহতের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী কালিন সোমবার দুপুর দু'টা এিশ মিনিটে মাগুরা জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার দুদিন আগে নজরুল মেম্বরের বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাগুরা জেলা পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত, রামদা, ছ্যানদা ও সড়কি উদ্ধার করেছেন। আসামিদের জবানবন্দিতে এ সকল গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পান মাগুরা জেলা পুলিশ।
চারহত্যা মামলা আসামিদের মঙ্গলবার আটকের এক পর্যায়ে মাগুরা আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বুলবুল আহমেদের আদালতে শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে 'রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন'। এ সময় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বুলবুল আহমেদ দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে মাগুরা জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।
মাগুরা জেলা কারাগারে আসামিদের প্রেরণের বিষয় জানতে দৈনিক আমার সংবাদ এর এক সাক্ষাৎ কারে মাগুরা জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আখিরুল ইসলাম বলেন, জগদল ইউনিয়নের চার হত্যা মামলার আসামিদের ইতোমধ্যে মাগুরা জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে।
নির্বাচন সহিংসতা চার জন নিহত আহত একাধিক, ঘটনা কবলিত এলাকা জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এর সাথে সাক্ষাৎ কার এর জন্য একাধিক বার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি অন্যকে দিয়ে ফোন রিসিভ করান এবং নিজের ব্যাস্ততা থাকার বিষয় বুঝাতে চেষ্টা করেন।
তার সাক্ষাৎ কার তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য দিতে চান না বলে ধারণা করা হয়েছে। আরও ধারণা করা হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডে তিনি মুখ খুলতে নারাজ।
আমারসংবাদ/কেএস