দহগ্রাম থেকে ফিরে
ডিসেম্বর ২, ২০২১, ১০:৪৫ এএম
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা সীমান্ত এলাকায় দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতীয় অবৈধ গরু। এতে দেশীয় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জানা যায়, সীমান্তের ওপারে হাজার হাজার ভারতীয় গরু বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসছেন স্থানীয় চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা। পাচার হয়ে আসা গরুগুলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট দিয়ে বৈধ করে বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে অনেক। চোরাই পথে আসা গরুগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে দুইটি গরুর জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে স্লিপ সংগ্রহ করে বৈধতা পায়। যাকে বলে চোরাইভাবে করিডোর পথে আসা গরুর বৈধতার ছাড়পত্র। দহগ্রাম ইউনিয়ন থেকে প্রতি সপ্তাহে ৬০টি গরু হাটে আসার অনুমতি আছে। দহগ্রামবাসীকে গরু বিক্রির জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্লিপ নিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান কামাল সবদিকের গরুই নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত থেকে যখন গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হালপ্রতি (একজোড়া) ১ হাজার টাকা করে নেয়। আবার সেই গরুই যখন নদী পথে দহগ্রামের বাইরে যায় তখনও তিনি পান আবারও হালপ্রতি ১ হাজার টাকা। সেই গরুই আবার করিডোর হয়ে পাটগ্রামে গেলে হালপ্রতি তিনি পান ১৫ হাজার টাকা। এই অবৈধ ব্যবসা করে পাঁচ বছরে কামাল চেয়ারম্যান হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।
আরও জানান, তিনবিঘা করিডোর দিয়ে প্রতি হাটে ৩০টি গরু নিয়ে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও অনেক সময় কামাল চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত স্লিপ দিয়ে থাকেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, সুজন, জামাল, ফরিদুলসহ অনেকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী গরুর সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট খোলা সীমান্তের ভারতীয় অংশ থেকে গরু পারাপার করে। কোনো কোনো সময় চোরাকারবারীরা নদী পথে ভারতীয় গরুর বড় বড় চালান পাচার করে আসছে। এসব গরু অবৈধ ভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় গরু খামারীরা।
আরও জানা যায়, ওই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে চোরাই পথে আসা গরুর স্লিপ বাণিজ্য ও সীমান্তে চোরাচালান বাণিজ্য করে আসছে। গরু পাচারের নিরাপদ রুট নামে পরিচিত দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা বছরের পর বছর গরু পাচার করে হয়েছে কোটি কোটি টাকার মালিক। ওইসব গরুর স্লিপ দিয়ে প্রতি গরুরহাটে আয় করছে লাখ লাখ টাকা।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল হোসেনসহ একটি সিন্ডিকেট ভারতীয় গরুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তারই নিয়ন্ত্রণে অবৈধ ভাবে গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সারাদেশে সরবরাহ হয়। আর এই অবৈধ আয়ে তিনি করেছেন পাটগ্রামে আলিশান বাড়ি।
এদিকে বুধবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে ওই ইউনিয়নের হাড়িপাড়া এলাকা হয়ে অবৈধ গরু তিনবিঘা দিয়ে পার করার সময় অঙ্গরপোতা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার দুইটি গরু আটক করেন। এ সময় গরুর মালিক দাবিকৃত রবিউল ইসলাম ও নাজিমুল ইসলাম নামের গরু বিক্রিয়ের ইউপি চেয়ারম্যান কামাল সাক্ষরিত দুইটি সার্টিফিকেট দেখালে সেগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরে রবিউল ইসলাম দাবি করেন সার্টিফিকেট গুলো তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অনিছুর রহমানেন কাছ থেকে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আনিছুর রহমান বলেন, রবিউল ও নাজিমুল তাদের ওয়ার্ডের সনাক্তকারি মেম্বারের আবেদনের প্রেক্ষিতেই আমি স্লিপ গুলো দিয়েছি। এ বিষয়ে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রশিমুদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, আমি কোনো গরুর সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নই। সামনে নির্বাচন তাই প্রতিপক্ষ সুবিধা নেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গরুর স্লিপের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি আর কথা বলতে রাজি হয়নি।
পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর ফারুক জানান, আমরা সীমান্তের বিষয়টা দেখি না। এ মুহূর্তে গরু চোরাচালান সিন্ডিকেট সংক্রান্ত কোন তথ্য আমাদের জানা নেই তার পড়েও আমরা খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আমারসংবাদ/কেএস