জহির খান, বরিশাল
ডিসেম্বর ৫, ২০২১, ০৬:৫৫ এএম
শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ও নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ভ্রমণপিয়াসী সেইসব মানুষের সময় এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় তৈরি করা হয়েছে ‘মোল্লা পার্ক এন্ড পিকনিক স্পট’।
পৌর নগরীর ৭নং ওয়ার্ডস্থ উজিরপুর বাজারের টার্মিনাল রোডের পশ্চিম পার্শ্বে উপজেলার একমাত্র এই বিনোদন কেন্দ্রটির অবস্থান। প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চাইলে এর চেয়ে আদর্শ আর কোনো জায়গা হতে পারে না।
বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে উজিরপুর পৌরসভার উজিরপুর বন্দর বাজার সংলগ্ন নান্দনিক সৌন্দর্য্য এবং প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এই বিনোদন কেন্দ্রটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।
স্থানীয় সমাজসেবক আহম্মেদুল কবির বিপ্লব মোল্লা এই বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পটটি নির্মাণ করেছেন। আর এটিই উজিরপুর উপজেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র।
প্রায় ২ দশমিক ৫০ একর জায়গা নিয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে এই অসাধারণ পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। এতে আপনি আপনার পরিবার পরিজন বা আপনার প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিয়ে পিকনিক করতে পারবেন।
পার্কের নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ আপনাকে সতেজ করবে। সন্ধ্যা হলেই রঙিন বাতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে পার্কের নানা স্থাপনা। পার্কটিতে রয়েছে- জলপরী, বাঘ, সিংহ, হরিণ, ডাইনোসর, কুমীর, প্রজাপতি, বক, উটপাখি, গরিলা (বন মানুষ), জিরাফ ও সাড়শ পাখিসহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন পশু পাখির অবিকল ভাস্কর্য, স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা বিশিষ্ট ডলফিন মাছ ও সুপারম্যানের অবিকল ভাস্কর্য।
আছে সুবিশাল ভ‚তের গলি ও রাক্ষুসে গেইট। যার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে মাটির নিচ থেকে হাঁত-পা ও মাথা বের হওয়া বিশাল আকৃতির এক মানুষের অবিকল ভাস্কর্য। এখানে সকল বয়সীদের জন্য রয়েছে- হাঁটাপথ, ফ্যামিলি দোলনা, সিঙ্গেল দোলনা, ইলেকট্রিক দোলনা (সুইং চেয়ার), বসার জন্য বেঞ্চ ও ছায়ার জন্য ছাতা। নৌ ভ্রমণের জন্য পার্কের দক্ষিন পার্শ্বে দিঘীতে রয়েছে স্পিড বোট ও প্যাডেল বোট।
এছাড়া দিঘীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দিঘীর মধ্যখানে রয়েছে একটি বৈঠকখানা। যেখান থেকে আবার সিঁড়ি দিয়ে দিঘীর পানিতেও নামা যাবে। তাছাড়া সন্ধ্যার পরও যাতে স্থানীয় লোকজন সময় কাটাতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মোল্লা পার্ক এন্ড পিকনিক স্পট নামের এই বিনোদন কেন্দ্রের সবকিছুই অত্যন্ত পরিপাটি, সাজানো-গোছানো। পার্কটির অতিরিক্ত সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রবেশ গেইটে রয়েছে নীলকন্ঠ ও বাসরলতা গাছ।
পার্কটিতে আপেল, কমলা, মাল্টা, বাদাম, আমলকি, আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচু, বড়ই, পেয়ারা, জামরুল ও সুপারি গাছসহ হরেক রকমের বড়-ছোট গাছ রয়েছে। পুরো পার্কটি গাছপালায় সমৃদ্ধ। গাছগুলোকে না কেটেই হাঁটাপথ তৈরির মূল কাজ শেষ করা হয়েছে। পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি ক্যান্টিন রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পার্কে চলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা।
তবে বিকেলের দিকেই সবচেয়ে বেশি ভিড় জমান বিনোদন প্রেমিরা। শিশুদের আনন্দের জন্য এই পার্ককে বলা যেতে পারে ‘শিশু স্বর্গ’। কারণ এখানে শিশুদের জন্য সেরকম আয়োজনই রাখা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-খেলাধুলার জন্য এই পার্কে রয়েছে- দোলনা, স্লিপার, ঢেঁকিকল, রাউন্ড হর্সসহ নানান রাইড।
পার্কটিতে ইতোমধ্যে প্রচুর দর্শনার্থী আসছে, তাদের জন্য আপাতত টিকিট মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে মোল্লা পার্ক এন্ড পিকনিক স্পটের প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবক আহম্মেদুল কবির বিপ্লব মোল্লা জানান, আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল উজিরপুরে একটি ভালো মানের বিনোদন পার্ক গড়ে তুলবো। যেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’দণ্ড ঘুরে বেড়াবে মানুষ, শিশুরা পাবে বিনোদন। যেখানে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ বেড়াতে আসবে।
[media type="image" fid="152385" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
তিনি আরও বলেন, এখানে বিনোদনের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এলাকার মানুষের সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি শিশু-কিশোররা যাতে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে, এটাই এই পার্ক নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য। জায়গা ছোট হলেও দৃষ্টিনন্দন করেই এটি সাজানো হচ্ছে।
আমারসংবাদ/এআই