Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

নতুন শিক্ষাবর্ষের বই পাওয়া গেল স্ক্র্যাপের দোকানে

ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ, মহেশখালী

জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০৭:৫০ এএম


নতুন শিক্ষাবর্ষের বই পাওয়া গেল স্ক্র্যাপের দোকানে

চলতি শিক্ষাবর্ষ-২০২২ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেয়া সরকারি বই স্কুল-মাদ্রাসায় পৌঁছানোর পূর্বেই রাতের আধারে পাওয়া গেল স্ক্র্যাপের দোকানে। গেল ১৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর একটি স্ক্র্যাপ দোকানে পাওয়া এসব বই প্রথমে স্থানিয় গ্রাম পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার পর গত ১৭ জানুয়ারি ঘটনাস্থলে গিয়ে বইগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। 

মহেশখালীর সব স্কুল-মাদ্রাসায় শতভাগ বই না পৌঁছানোর পূর্বে নতুন বছরের বইগুলো কিভাবে স্ক্র্যাপের দোকানে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসার অধ্যক্ষরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশখালীর বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলেন, মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ফজলুল করিমের অজান্তেই এসব কিভাবে হল? যেখানে এ কর্মকর্তা আমাদের পরিপূর্ণ বই দিতে চান না সেখানে এ অফিস থেকে বই বের হলো কিভাবে? এ ছাড়াও এ কর্মকর্তাকে এসব বই চুরিকাণ্ডে পুরোটাই দুষছেন তারা। 

এদিকে তথ্য বলছে, বড় মহেশখালী ফকিরাঘোনা কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের জনৈক মোহাম্মদ ছিদ্দিক এর মালিকানাধীন একটি ভাঙারির দোকানে বিপুল সংখ্যক নতুন বই মজুদ করা হয় রাতের আধারে। রুবেল নামে একজন খুচরা ভাঙারি পণ্য বিক্রেতা ওই দোকানের মালিকের কাছে বিক্রি করার জন্য বইগুলো নিয়ে আসে। এ অবস্থায় নতুন বই দেখে দোকান মালিক ও ভাঙারি ব্যবসায়ির সন্দেহ হলে বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে জানান। পরে ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ সদস্য ওই দোকানে গিয়ে বিপুল সংখ্যক নতুন বই এর মজুদ দেখতে পান। মজুদ সব বই-ই ২০২২ সালের চলতি শিক্ষাবর্ষের। পরে বইগুলো ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের সদস্যরা নিজেদের জিম্মায় রাখেন। 

গ্রাম পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, স্ক্র্যাপের দোকানে প্রায় ৭'শ কপির মতো নতুন বই পাওয়া গেছে। বইগুলো প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জিম্মায় রাখার পরে পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।

দোকান মালিক মোহাম্মদ ছিদ্দিক জানান, বড় মহেশখালীর কুলাল পাড়া এলাকার জনৈক মনজুরের পুত্র মোহাম্মদ রুবেল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যবহৃত কাগজ হিসেবে কেজির ওজনে বিক্রির জন্য তার দোকানে বইগুলো আনে। বইগুলো মজুদ করে রুবেল দোকান থেকে সরে যায়। পরে নতুন বই দেখে তার সন্দেহ হলে বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জানান। রুবেল তার কাছে নিয়মিত ভাঙারি পণ্য বিক্রি করে বলেও তথ্য দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আব্দুল হাই দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি বই বিক্রি করাটা খুবই দুঃখজন কাজ। বইগুলো পুলিশ জব্দ করে বর্তমান থানার হেফাজতে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী রুবেল নামে এক ভাঙারিওয়ালার নাম পাওয়া গেছে। পরবর্তী অনুসন্ধান ও আইনি উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

ওসি আরও জানান, হয়ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বই বিতরণের কারণে বইগুলো ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সরকারি বই কিভাবে ওখানে গেলো তা অনুসন্ধান করা হবে। 

অন্যদিকে মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ফজলুল করিম দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, রুবেল নামে এক ভাঙারিওয়ালা বইগুলো কেজি দরে স্ক্র্যাপের দোকানে দেওয়ার খবর পেয়েছি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, সরকার বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে অত্যান্ত যত্ন ও সতর্কতার সাথে নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণের উদ্যোগ নেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সম্পদ চুরি করে বিক্রি করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য কাজ বলে মনে করেন ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো।

আমারসংবাদ/কেএস