মেহেদি হাসান মাসুদ, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৫:১০ এএম
সম্প্রতি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারী শিক্ষককে জুতাপেটার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সহকারী শিক্ষকের মামলায় হাজতবাস করেছেন প্রধান শিক্ষক। ঘটনাটিতে শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনাটির মূল কেন্দ্র ‘সাময়িক ছুটি’। প্রশ্ন উঠেছে সাময়িক ছুটি বলতে কোন ছুটি আছে কি?
পাটকিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় দেশ জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার পর ১১ জানুয়ারি বালিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক ছুটি নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ৮ জানুয়ারি শিক্ষক নাসিমা খাতুন তার পূর্ববর্তী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাবার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১১টায় স্কুল ত্যাগ করার জন্য সাময়িক ছুটি চান। প্রধান শিক্ষক একেএম মাহবুবুল হক উক্ত শিক্ষককে দেড় ঘণ্টা পরে স্কুল ত্যাগ করার জন্য বলেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষক বিষয়টি মেনে না নিয়ে তার সাথে বির্তকে লিপ্ত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন। এ নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি পরবর্তীতে সহকারী শিক্ষকের স্বামী ফারুক ই আজম লাইব্রেরী কক্ষে এসে প্রধান শিক্ষককে মারপিট করেন।
প্রশ্ন উঠেছে সহকারী শিক্ষককে সাময়িক ছুটি কিংবা তাৎক্ষনিক ছুটি দিতে কতটা বাধ্য প্রধান শিক্ষক? সরকারি কর্মচারী বিধিতে ১৮ প্রকার ছুটি রয়েছে। ছু্টির বিধিতে সাময়িক ছুটি বলে আদৌ কোন ছুটি নাই। এই ছুটি কেউ যদি ভোগ করে থাকেন তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অনৈতিক উপায়ে করে থাকেন। যা এক প্রকার ফাঁকি বলেই গণ্য করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, সাময়িক ছুটি নিয়ে অনেক শিক্ষক তাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কাজ করে থাকেন। ফলে ক্লাস রুটিন অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হন। প্রকান্তরে শিক্ষকদের একটা অংশ স্কুলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ওই দিনের চাকরি বৈধ করেন। আবার সাময়িক ছুটি নিয়ে তার নিজের প্রয়োজন মেটান। কেউ কেউ অফিসে কাজের কথা বলে চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। এই অনৈতিক সুবিধাটি নির্ভর করে সহকারী এবং প্রধানের সম্পর্কের ভিত্তিতে। ফাঁকির স্বীকার হোন কোমলমতি শিশুরাই।
ঘটনাটি ঘটার পর থেকে বালিয়াকান্দি উপজেলায় সাময়িক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের কোন ছুটি কেউ ভোগ করতে পারবেন না বলে মাসিক সমন্বয় সভায় শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত কোন কাজে যদি কোন শিক্ষকের ছুটির প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে তিনি ওই দিনে নৈমিত্তিক ছুটি গ্রহণ করতে পারেন।
ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর উপজেলার প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক সহকারী শিক্ষকের গায়ে হাত দিয়ে অন্যায় করেছে। তদ্রুপ সহকারী শিক্ষকের স্বামী এসে প্রধান শিক্ষককে মারপিট কর চরম অন্যায় করেছেন। এটা বালিয়াকান্দির শিক্ষকদের জন্য চরম লজ্জার। সৃষ্ট ঘটনায় উভয়ের বিরুদ্ধেই দৃশ্যমান শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষকরা। ঘটনার পরবর্তী তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা অফিস। অধিকতর গুরুত্বের সাথে নেন ক্ষোধ প্রশাসন। প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা না রেখে সহকারী শিক্ষক যে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছেন সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান শিক্ষকদের অফিসিয়াল নির্দেশনা সহকারী শিক্ষকদের একটা বড় অংশ মানতে গড়িমশি করেন।
একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলাতে এই সাময়িক ছুটি ভোগকারীর সংখ্যা নেহাত কম না। প্রতিদিনই উল্লেখ করার মতো একটা সংখ্যা এই ছুটি নিয়ে ঘুরে বেড়ান। কেউ কেউ গর্বের সাথে দাবি করেন আমি কোন নৈমিত্তিক ছুটি নেই না। এমনকি বছর শেষে কেউ কেউ একটা বড় ফিরিস্তি উল্লেখ করেন ছুটি ভোগ না করার। কিন্তু সাময়িক ছুটির নামে অলিখিত ছুটি ভোগ করলে নৈমিত্তিক ছুটির আদৌ প্রয়োজন আছে কি?
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বালিয়াকান্দি উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের বলেন, সাময়িক ছুটি নিয়ে যা ঘটেছে সেটা শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জার। প্রকৃতপক্ষে সাময়িক ছুটি বলে কোন ছুটি নেই তারপরও প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য তিনি তার প্রশাসনিক দিক দিয়ে সহকারী শিক্ষকের আচরণের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারতেন। সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে অমান্য করে বিধিভঙ্গ করেছেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অবজ্ঞা করে চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করেছেন, এমনটি হতে থাকলে অচিরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দিক দিয়ে চেইন অব কমান্ড ধংস হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষা হুমকির মুখে পড়বে। প্রত্যেককেই তার অবস্থান সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। পরবর্তীতে তার স্বামীর আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক পদক্ষেপ আশা করি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, সহকারী শিক্ষক যে সাময়িক ছুটি দাবী করেছেন আসলে সাময়িক ছুটি বলতে কোন ছুটি নাই। পাটকিয়াবাড়ী স: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমারসংবাদ/কেএস