Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫,

দিল্লির শাহী মসজিদের প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ

সিরাত মঞ্জুর, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: 

এপ্রিল ২১, ২০২২, ১১:৩৫ এএম


দিল্লির শাহী মসজিদের প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। মোঘল স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত সমতল ভূমি থেকে প্রায় ত্রিশফুট উপরে পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত এ মসজিদ।

মূল মসজিদের নকশা অনুযায়ী এটি ১৮ গজ দৈর্ঘ্য সাড়ে ৭ গজ প্রস্থ। মসজিদের প্রতিটি দেওয়াল প্রায় আড়াই গজ প্রস্থ। পশ্চিমের দেওয়াল পোড়ামাটির এবং তিনটি দেওয়াল পাথরের তৈরি। মাঝখানে একটি বড় ও দুটি ছোট্ট গম্বুজ দ্বারা নির্মিত মসজিদটি কৌশলগত দিক থেকে দিল্লির ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদের প্রতিচ্ছবি। দিল্লির জামে মসজিদের আদলে বড় বড় পাথরের ব্যবহারে নির্মিত বলে এ মসজিদকে পাথরের মসজিদ বা জামে সংগীত মসজিদও বলা হয়।

সাহিত্যবিশারদ আব্দুল করিম তার ইসলামাবাদ বইয়ে আন্দরকিল্লা টিলার উপর অবস্থিত জামে সংগীত মসজিদ চট্টগ্রামের আদি মসজিদ বলে উল্লেখ করেন।

মসজিদটি চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুসলিম স্থাপত্য অঙ্গনে নতুনত্ব দিয়েছে। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মোঘল সম্রাজ্যের এক গর্বের ইতিহাস।

এ মসজিদের দৈনিক দুই হাজার এবং শুক্রবার ৮ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। প্রতি জুমার দিন এখানে নামাজ পড়তে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা উপস্থিত হন। তবে রমজান মাসে এ সংখ্যা বেড়ে যায় অনেক। এছাড়াও রোজা ফিতরা এবং ঈদের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামবাসি আন্তরিকভাবে মেনে চলেন।

মুসল্লিরা জানান, এটা এমন একটা মসজিদ, এখানে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ নামাজ পড়তে আসেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার যে, এখানে নামাজ পড়লে আত্মার একটা শান্তি পাওয়া যায়। অনেকে আবার শখের বসে নামাজ পড়তে আসে।

এখানে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বলেন জানান মুসল্লিরা।

মসজিদটির প্রধান ইমাম মাওলানা মো. আনোয়ারুল হক আজহারী জানান, এ মসজিদ একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে সকলের কাছে প্রসিদ্ধ। ইংরেজরা এসে মসজিদের ভিতরের উচু স্থানকে কেল্লা ও অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করেছিল অনেক দশক যাবৎ। পরে এটি শায়েস্তাখাঁর পরিবার ইংজেরদের থেকে দখল করে মুসলমাদের ইবাদতের জন্য তীর্থ স্থানে পরিণত করেন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বিজয়কে স্মরণীয় রাখতে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬৭ সালে বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেত খাঁ আন্দরকিল্লার উচ্ছ একটি স্থানে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।

ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ১৭৬১ সালে এ মসজিদটি ইংরেজদের দখলে চলে যায়। তারা প্রায় ৯৪ বছর পর্যন্ত নিজেদের দখলে রাখে মসজিদ। যার ফলে এখানে ইবাদত বন্দেগি করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান।

১৮৫৩ সালে প্রথম এবং ১৮৫৫ সালে দ্বিতীয়বার চট্টগ্রামের মুসলমানরা তৎকালীন জমিদার হামিদুল্লাহ খাঁ নেতৃত্বে মসজিদটি ফিরে পেতে সেসময়ের বঙ্গরাজ্যের গভর্নরের কাছে আবেদন জানান।

আবেদন মঞ্জুর হলে হামিদুল্লাহ খাঁ ১৮৫৬ সালে প্রয়োজনীয় মেরামত ও একটি শিলালিপি স্থাপন করে ১৩৩ বছর পর এ স্থাপত্যকে পুনরায় মসজিদে পরিণত করেন। কালের বিবর্তনে বর্তমানে এটি মুসলমানদের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন।

আমারসংবাদ/এমএস