বিবিসি বাংলা
নভেম্বর ১৮, ২০১৮, ০৯:৫০ এএম
ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর ছড়াতে এখন নামী সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটের পুরো নকল ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে।বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি নামী সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটের আদলে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে।আসল ওয়েবসাইটের আদলে এসব নকল ওয়েবসাইটে ভুয়া খবর প্রকাশ করে সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।বেশিরভাগ পাঠক সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া এসব খবর দেখে চিনতে পারেন না কোনটি আসল, আর কোনটি নকল। তাই ফেক ওয়েবসাইট চেনার কয়েকটি উপায়:
১. কেন ফেক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শবনম আযীম বলছেন, ''একটি সংবাদ মাধ্যম নির্ভর করে তার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর। আমরা হয়তো তার লোগো বা নাম দিয়ে এরকম প্রতিষ্ঠান চিনে থাকি। তখন হয়তো এরকম প্রতিষ্ঠান অসৎ লোকদের লক্ষ্যে পরিণত হয়। সাধারণ পাঠকরা হয়তো ভালোভাবে দেখেন না। এই বিশ্বাসযোগ্যতাকে ব্যবহার করেই মিথ্যা খবর ছড়ানোই এসব ফেক ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য। তাদের আসল লক্ষ্য গুজব বা মিথ্যাকে সত্যি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে দেয়া।''
বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া খবর দেখে বিশ্বাস করা, মন্তব্য বা লাইক দেয়া বা সেটি শেয়ার করার আগে বুঝে নেয়া দরকার যে, আপনি ভুয়া খবর বা ভুয়া ওয়েবসাইটের ফাঁদে পড়ছেন কিনা। কেননা আপনার শেয়ারের কারণে হয়তো একটি মিথ্যা আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২. আপনি কি ফেক ওয়েবসাইটের ফাঁদে পড়ছেন?
আপনার সামাজিক মাধ্যমের ফিডে যদি পরিচিত সংবাদ মাধ্যম থেকে এমন খবর দেখতে পান, যা তাদের সাথে ঠিক খাপ খায় না, অথবা বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই, তখনি আপনার সতর্ক হওয়ার দরকার আছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. কাজী মুহাইমিন-আস-সাদিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''যখনই কোন সন্দেহজনক সংবাদ চোখে পড়বে, তখন উচিত ডোমেইনটির দিকে তাকানো। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে দেখা কোন খবর শেয়ার করার আগে এর উৎস প্রতিষ্ঠানটি ভালো করে দেখা নেয়া উচিত, কারণ এভাবে শেয়ারের মাধ্যমে আপনার কাছের লোকজনকেও বিভ্রান্ত করা হবে।''তখন ডোমেইনটি পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
৩. বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট মনে রাখুন
ইন্টারনেট দুনিয়ায় কখনোই একনামে দুইটি ওয়েবসাইট হতে পারে না। সুতরাং আসল ওয়েবসাইটের সঙ্গে নামের বা ইউআরএল (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর) পার্থক্য থাকবে।যেমন বিবিসি নিউজ বাংলার ওয়েবসাইট bbcbangla.com বা https://www.bbc.com/bengali হলেও, যে ভুয়া ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছিল তার ঠিকানায় রয়েছে bbc-bangla.com।মাঝখানে একটি হাইফেন বাড়তি যোগ করা হয়েছে।প্রথম আলোর ওয়েবসাইট prothomalo.com হলেও, ভুয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানায় একটি অতিরিক্ত a যোগ করা হয়েছে, যেমন prothomaalo.com।সুতরাং আপনার বিশ্বস্ত সংবাদ প্রতিষ্ঠানটি ইউআরএল বা নামটি মনে রাখুন অথবা ওয়েব ব্রাউজারে বুকমার্কিং করে রাখুন।
৪. কিভাবে চিনবেন আসল আর নকল ওয়েবসাইট?
বিশ্বের ওয়েবসাইট ঠিকানার বিষয়াদি দেখভাল করে থাকে আইক্যান (ICANN)। কোন ওয়েবসাইট নিয়ে আপনার সন্দেহ হলে, আইক্যানের ডোমেইন অনুসন্ধান পাতায় গিয়ে তাদের ওয়েবসাইট ঠিকানাটি লিখে দিন বা পেস্ট করুন।
https://whois.icann.org/en এই পাতায় গিয়ে দেখতে পাবেন, ওয়েবসাইটটি কবে তৈরি হয়েছে, কে তৈরি করেছে।
সাধারণত এরকম ভুয়া নির্মাতাদের পরিচয় লুকানো থাকে। কিন্তু আপনার পরিচিত সংবাদ মাধ্যমটি পুরনো হলে তাদের ওয়েবসাইটও হবে পুরনো।কিন্তু ফেক ওয়েবসাইট দেখা যাবে কিছুদিন আগে তৈরি করা হয়েছে। যেমন বিবিসির নামে এই ভুয়া ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়েছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে।অথচ বিবিসি নিউজ বাংলার আসল ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়েছে ২০০৫ সালে।
৫. ভুয়া ওয়েবসাইট বা ভুয়া খবর আপনার জন্য কতটা হুমকি?
গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ শবনম আযীম বলছেন, ''এটা ভয়ংকর হুমকি। তারা যখন বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে, তখন তাদের একটি মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এটা সংবাদ মাধ্যম এবং পাঠক, উভয়ের জন্যই ভয়ংকর হুমকি।''
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া সংবাদ বা ফেক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় পাঠকদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে, তারাই এর সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হবেন।সাধারণত রাজনীতি বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এ রকম খবর বেশি ছড়ানো হয়।যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে নির্বাচনের আগে আগে এরকম ফেক নিউজের বিস্তার বা বিখ্যাত সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেক ওয়েবসাইট তৈরির ঘটনা দেখা গেছে।এরকম অনেক সংবাদ ছড়ানো হয়েছে, যার কোন অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশেও সাধারণ নির্বাচনের আগে আগে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের ফেক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে এগুলোর প্রচার চালানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনকে ঘিরে গুজব বা মিথ্যা সংবাদ ছড়াতেই এরকম ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে।এসব সাইটে প্রকাশিত খবর ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম ছড়িয়ে দিয়ে সহজেই পাঠকদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ থাকে।পাঠকরা এর ফলে যেমন নিজেরা বিপদে পড়তে পারেন, তেমনি পরিচিতজনদের জন্যই সমস্যা তৈরি করতে পারেন।সুতরাং যেকোনো সংবাদ দেখে বিশ্বাস করার আগে বা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করার আগে সেটির উৎস ভালো করে যাচাই করে নেয়া উচিত।এরকম দেখা গেলে আপনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করতে পারেন।
মূলত চারটি উপায়ে এই ভুয়া খবরগুলো ছড়িয়ে থাকে।
১. ফেসবুক
২. ইউটিউব
৩. ভুয়া ওয়েবসাইট
৪. গণমাধ্যম।
আর এসব মাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া খবরগুলো ইউজারদের লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়। আবার অনেক গণমাধ্যম এসব সামাজিক মাধ্যমের তথ্য যাচাই বাছাই না করেই খবর প্রকাশ করে। ভুয়া খবর ছড়ানোর কারণ:ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার পেছনে তিনটি কারণকে তুলে ধরা হয়।
১. বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করা।
২. ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া।
৩. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল।
ভুয়া খবর সনাক্তের উপায়: পাঁচটি উপায়ে সনাক্ত করা সম্ভব ভুয়া খবর।
১. কমন-সেন্স ব্যবহার করুন।
২. খবরের কন্টেন্ট বা তথ্য নিয়ে সন্দেহ হলে যাচাই করুন।
৩. অনলাইনে সার্চ দিয়ে যাচাই বাছাই করে দেখতে পারেন।
৪. খবরের তথ্যসূত্র বা ছবি/ভিডিওর উৎস বের করুন।
৫. খবরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।