Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ওয়াসার খালে ৪০ কোটি টাকা!

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

মার্চ ১২, ২০১৯, ০৫:০৭ এএম


ওয়াসার খালে ৪০ কোটি টাকা!

বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কারে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে ঢাকা ওয়াসা। এ জন্য সরকারের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে ঢাকা ওয়াসা।মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা গতবছর ১৭টি খাল পুনঃখননে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করে। এবারো খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কারে ৬০ কোটি টাকার চাহিদা পাঠায় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে। ওই চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তারা জানায়, ওয়াসার নিজস্ব অর্থায়নে যেন খাল উন্নয়নের কাজ করে। পরে ওয়াসা ফের চাহিদা পরিবর্তন করে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র এলজিআরডিতে পাঠালে তা অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসা খাল পুনঃখনন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে যে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন আছে। অর্থ ছাড় দেয়া হবে কি না এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জানা যায়, জলাবদ্ধতা দূর করতে মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় পেলেই খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কারের কাজ শুরু করবে ওয়াসা। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে ঢাকাবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন।ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, খাল পুনঃখনন, খালের রেলিং, স্টর্ম ওয়াটার, পাম্পিং স্টেশন মেরামত ও কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই অর্থ পেলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে। তবে ঢাকা ওয়াসা খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কার করার কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, সেই পরিমাণ সুফল মেলেনি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আমার সংবাদকে বলেন, গত বছর অল্প বৃষ্টিতে মিরপুরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যদি ভারী বৃষ্টি হয় পুরো ঢাকার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ গত বছর বর্ষা মৌসুমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছরে ওয়াসার কাজের গতি বাড়াতে হবে।এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, ওয়াসার খাল পুনঃখনন ও গতবারের খালগুলো পরিষ্কারে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। যা নিয়ে কয়েক দফায় চিঠি ও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় না দিয়ে উল্টো ওয়াসার অর্থায়নে খাল পুনঃখননের কাজ করার পরামর্শ দেয়। এই পরামর্শ দিয়ে ওয়াসা কী করবে? ওয়াসার কাছে টাকা নেই। তিনি আরও বলেন, গতবছর ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কার করা হয়েছে। টাকার অভাবে বাকি খালগুলো পুনঃখনন সম্ভব হয়নি। কারণ এক কিলোমিটার খাল পুনঃখননে এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। ওয়াসার ৩৭০ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট, চারটি স্থায়ী পাম্পিং স্টেশন এবং ১৬টি অস্থায়ী পাম্পিং স্টেশন আছে।স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান খন্দকার আমার সংবাদকে বলেন, খাল পুনঃখননে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে ৪০ কোটি টাকার একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। ওই চাহিদাপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ ছাড় পেলেই ওয়াসা খাল পুনঃখনন করতে পারবে। এতে গতবছরের মতো এবারো রাজধানীবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবেন। ঢাকা ওয়াসার একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওয়াসা প্রতি বছর খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে থাকে তা সন্তোষজনক নয়। কারণ এ শহরে অসচেতনতার ফলে খালের আশপাশে বসবাসরত লোকজন ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলছে। যা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিপুল অর্থ দরকার। সেটি মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হলেও তা পাওয়া যায় না। ফলে ওয়াসা কাজ করতে পারে না।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ আলম খান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাশয় ভরাট ও অবৈধ দখলদারিত্বই জলাবদ্ধতার বড় কারণ। পানি নিষ্কাশনের জন্য রাজধানীতে দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এক. ভূ-গর্ভে পানি শোষণ করে নেয়া এবং দুই. খাল, বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। ঢাকায় এ দুটি পথের একটিও কার্যকর নেই। এ কারণে প্রতিবছর জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। উল্লেখ্য, ঢাকায় মোট ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খাল রক্ষণাবেক্ষণ করে ঢাকা ওয়াসা। বাকি খালগুলো জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন দেখভাল করে। এসব খালের ওপরে অপরিকল্পিত বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণে পানি নিষ্কাশনের পথ সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পানি নিষ্কাশন করছে ওয়াসা। এ পথও বাধাগ্রস্ত হলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে ঢাকাবাসীকে। ১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ফলে নিয়মিত নর্দমাগুলো সচল রাখা ও পরিষ্কার করার দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষা এলেই বরাদ্দ নেয়ার কথা মনে পড়ে ওয়াসার।