Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রতিপক্ষ থাকলে ছাড় পাবে না বিদ্রোহীরা

প্রিন্ট সংস্করণ॥আসাদুজ্জামান আজম

মার্চ ১২, ২০১৯, ০৬:২২ পিএম


প্রতিপক্ষ থাকলে ছাড় পাবে না বিদ্রোহীরা

দলীয় ভাবে না আসলে দেড় শতাধিক উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বিএনপিনেতারা। দল থেকে বহিষ্কার হলেও প্রার্থী হিসেবে নিজেকে বহাল রেখেছেন। অন্যদিকে, ঐ সব উপজেলার অধিকাংশতেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন আ.লীগের। নিজ দলের বিদ্রোহী এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকায় ঐসব উপজেলাগুলোতে সরকার সমর্থিত নৌকার প্রার্থীর বিজয় কঠিন হয়ে পড়বে।তথ্য মতে, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিকদলগুলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করলেও আমলে নেয়নি তৃণমূল নেতারা। দলীয় সিনিয়র নেতাদের কড়াকড়ি বার্তা উপেক্ষা করেই প্রার্থী হয়েছে অনেকে। সদ্য অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে সংখ্যায় কম হলেও দ্বিতীয়, তৃতীয়সহ পরবর্তী ধাপগুলোতে অন্তত শতাধিক উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির তৃণমূলপর্যায়ের কয়েক শতাধিক নেতা। এরই মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হলেও তারা নির্বাচন থেকে সরে আসেননি। বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি বগুড়া, রাঙামাটি, বান্দরবান, নওগাঁ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জসহ বিএনপির আধিপত্য আছে, এমন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটির কয়েক শতাধিক প্রার্থী। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী হওয়ায় সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন ঐসব প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনে হবিগঞ্জের মাধবপুর, বাহুবল, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে আ.লীগের বিদ্রোহী থাকায় জয় পেয়েছে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এদিকে, মাঠে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী থাকলেও দল মনোননিত প্রার্থী ছাড় দিতে নারাজ আ.লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থী মনোপুত না হওয়ায় বা স্থানীয় রাজনীতিতে ঐ প্রার্থীবিরোধী শিবির হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে দলটির নেতারা। এ কারণে ভোটের ফলাফল নৌকার বিপক্ষে যাবার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অনেক উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সহায়তা করছেন আ.লীগের বিদ্রোহীরা। সূত্র মতে, উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় সরকার। এজন্য চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিলেও পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত রাখে আ.লীগ। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় অধিকাংশ উপজেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এ কারণে ঘোষণা না দিলেও বিদ্রোহীদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানো হয়। কেন্দ্রের নমনীয়তার সুযোগে অধিকাংশ উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে আ.লীগের বিদ্রোহীরা। যেসব উপজেলায় বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে, ঐসব উপজেলায় আ.লীগের বিদ্রোহীরা সদর্পে রয়েছে। তবে প্রতিপক্ষ আছে- এমন উপজেলাগুলোতে বিদ্রোহীদের ছাড় দেবে না আ.লীগ। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক জেলা আ.লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করেছে। তারা যদি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ায় তাহলে অন্য কৌশলও অবলম্বলন করা হতে পারে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুল উল আলম হানিফ দৈনিক আমার সংবাদ’কে বলেন, প্রতিপক্ষ আছে এমন উপজেলার বিদ্রোহীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, তবে দলের প্রার্থীর বিজয়ে বাধা হতে পারে- এমন প্রার্থীদের ব্যাপারে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।খবর নিয়ে জানা গেছে, আগামী ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে সিলেট জেলার ১২টি উপজেলার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১২টি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলে প্রার্থী রয়েছেন প্রায় শতাধিক। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় দলীয় একক প্রার্থী দিয়েছে আ.লীগ। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হয়ে মাঠে নেমেছেন আ.লীগের ১৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। একক প্রার্থী হিসেবে জকিগঞ্জে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি লোকমান উদ্দীন চৌধুরী, বালাগঞ্জে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুর ও বিশ্বনাথে সিলেট জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা এসএম নুনু মিয়া রয়েছেন। বাকিগুলোতে রয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর ১২ উপজেলার বিএনপিনেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে ৩৪ জন। এদের সকলকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হলেও বিএনপির স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় উপজেলাগুলোয় জয় পেতে বেগ পেতে হবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর। অন্যদিকে, দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়ায় ৭ প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে সিলেট আ.লীগ। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার প্রতিদ্বন্দ্বী ৯ প্রার্থীর ৬ জনই আ.লীগের। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের প্রার্থী উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। বিদ্রোহী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আ.লীগের উপদেষ্টা আব্দুল বাছিত, সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলী কালা মিয়া, আ.লীগ নেতা ইয়াকুব আলী, ইসলামপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, তার স্ত্রী জরিনা বেগম, আ.লীগ নেতা শামসুল হক। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন শামছু মিয়া চৌধুরী ও স্বতন্ত্র হিসেবে হাফিজ মাসুম আহমদ।সিলেট সদর উপজেলায় আ.লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এড. নুরে আলম সিরাজী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপিনেতা ও খাদিম পাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাজহারুল ইসলাম ডালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আছলাম হোছাইন রহমানী (মিনার),জাপার শাহজাহান সিরাজী (লাঙ্গল)।গোয়াইনঘাটে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া হেলাল। বিদ্রোহী হয়েছেন যুক্তরাজ্য আ.লীগের উপদেষ্টা গোলাপ মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। এছাড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি লুৎফুল হক খোকন ও উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বপন স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন।বিয়ানীবাজার উপজেলায় নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। বিদ্রোহী হয়ে মাঠে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব, সদস্য ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামীম আহমদ, জাপার উপজেলা সভাপতি আবুল হাসনাত নিয়ে নির্বাচন করছেন। কানাইঘাটে আ.লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী জেলার উপপ্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবুল খায়ের চৌধুরী আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে আ.লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তবে দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা নূরুল ইসলাম (কাপপিরিচ) নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপিনেতা ওহিদুজ্জামান ছুফি দোয়াত কলম নিয়ে নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আবারো নৌকা হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী। মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি রশিদ আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে) জাহির উদ্দীন।বিশ্বনাথে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের একক প্রার্থী জেলা শাখার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এসএম নুনু মিয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে আ.লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপিনেতা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী কাপপিরিচ প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন।বালাগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের একক প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। এই উপজেলা আ.লীগের জোট শরীক, জাতীয় পার্টির আব্দুর রহিম লাঙ্গল ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া ঘোড়া নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া জেলা। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় শেরপুর উপজেলায় জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, আদমদীঘি উপজেলায় উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজু ও সোনাতলা উপজেলায় জেলা আ.লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটন বিনা নির্বাচিত হয়েছেন।বাকি ৯ উপজেলায় মধ্যে ৫টি উপজেলায় নৌকার প্রার্থী বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এছাড়াও ৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বিএনপির ২৭ নেতা। যদিও এরা বিএনপি থেকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার হয়েছেন। নন্দীগ্রাম উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ দলীয় প্রার্থী হয়ে লড়ছেন রেজাউল আশরাফ জিন্না। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন একইদলের আজিজার রহমান। কাহালু উপজেলায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মোশফেকুর রহমান কাজল ও আল হাসিবুল হাসান সুরুজ। ধুনট উপজেলায় আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মাসুদুল হক বাচ্চু। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মিজানুর রহমান খান সেলিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন ফজলুল হক এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুনজিল আলী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন একইদলের শাজাহান আলী ও আব্দুস সামাদ।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বগুড়া সদর উপজেলায় বিএনপিনেতা মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, নন্দীগ্রাম উপজেলায় অ্যাডভোকেট এ রাফি পান্না, আলেকজান্ডার ও মাহফুজুর রহমান, সারিয়াকান্দি উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু মণ্ডল, অ্যাডভোকেট নূরে আযম বাবু, গাবতলী উপজেলায় একিউএম ডিফেন্স সুমন ও এহসানুল বাশার, শিবগঞ্জ উপজেলায় বিউটি বেগম, ধুনট উপজেলায় আকতার আলম সেলিম ও শাজাহনপুর উপজেলায় আবুল বাশার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে আ.লীগ একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা করবে। জেলা নেতৃবৃন্দকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দলীয় প্রার্থীয় জয় বাধাগ্রস্ত হলে ছাড় পাবে না, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।