Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঢাকা-টু-কলকাতা জাহাজবিলাস

প্রিন্ট সংস্করণ॥আব্দুল লতিফ রানা

মার্চ ১৯, ২০১৯, ০৭:৪৭ পিএম


ঢাকা-টু-কলকাতা জাহাজবিলাস

দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের সংখ্যা। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে ভ্রমণের উদ্দীপনা বেশি লক্ষণীয়। সামপ্রতিক বছরগুলোতে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও অনেকে অবসর সময় কাটাতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে পাশের দেশ ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে যাতায়াত সুবিধা, স্বল্পখরচ, ভিসা প্রাপ্তির সহজতা সব মিলিয়ে দেশটি বাংলাদেশি বাজেট ট্রাভেলারদের বেশ পছন্দ। আগে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাসে, বিমানে এবং ট্রেনে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল। দুই দেশের মধ্যে জলপথ থাকা সত্ত্বেও এতদিন অবশ্য ছিল না নৌপথে কোনো যাতায়াত ব্যবস্থা। জলপথের আরামদায়ক ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত হওয়া ভ্রমণপ্রেমী মানুষদের জন্য সুখবর এই যে, এবার ঢাকা-কলকাতা রুটে চালু হতে যাচ্ছে জাহাজ সার্ভিস। জলে ভাসতে ভাসতে ট্রাভেলাররা পাড়ি দিতে পারবেন ঢাকা থেকে কলকাতা। গত বছর ঢাকা-কলকাতা যাত্রীবাহী জাহাজ চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা-কলকাতা নৌরুট। ঢাকা-কলকাতা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আনন্দের খবর হচ্ছে, আগামী ২৯ মার্চ ঢাকা-কলকাতা নৌরুট শুরু হবে। ওইদিন রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জ পাগলা মেরি এন্ডারসন থেকে ছেড়ে যাবে একটি জাহাজ। জাহাজের নাম এমভি মধুমতি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের নিজস্ব এই জাহাজ কলকাতায় যেতে সময় নেবে ৪৮ ঘণ্টা। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলেন, ‘ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা-কলকাতায় জাহাজ চলাচল করবে। বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি চালু হচ্ছে।’বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) প্রণয় কান্তি বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ ভারত নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের সুবিধার্থে বিআইডব্লিউটিসি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা যাত্রীবাহী জাহাজ সার্ভিস। ২৯ তারিখ শুক্রবার রাত ৭টায় কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি মধুমতি। জাহাজটি বরিশাল-মোংলা, সুন্দরবন আংটিহারা-হলদিয়া নৌরুট হয়ে রোববার আনুমানিক ১২টার দিকে কলকাতায় পৌঁছাবে। ভ্রমণপথে জাহাজে যাত্রীদের আংটিহারায় ইমিগ্রেশন কাস্টম সম্পন্ন করা হবে। আর যাত্রীদের নিজ উদ্যোগে যথানিয়মের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারতে কোন পথে যাবে এবং ভারত থেকে কোন পথে আসবেন তা উল্লেখ থাকতে হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ পাগলার মেরি এন্ডারসন ভিআইপি জেটি থেকে ৩০ জন নাবিক, একজন পাইলট ও ১০ জন ক্যাটারিং স্টাফসহ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, মেরি টাইম ইন্ডাস্ট্রি, বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, পর্যটন কর্পোরেশন, ট্যুর অপারেটরগণসহ জাহাজটি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবে। পরদিন ভোর ৫টায় বরিশাল পৌঁছাবে, বরিশাল থেকে জাহাজটি ছেড়ে যাবে সকাল ৮টায়। একই দিনে আংটিহারা পৌঁছাবে। সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে হলদিয়া বন্দর কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর হলদিয়া বন্দর কলকাতা পৌঁছাবে ১ এপ্রিল।জাহাজে ভ্রমণের সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ঢাকা-কলকাতা ভাড়ার হার হচ্ছে, ফ্যামিলি স্যুট (দুজন) ১৫,০০০ টাকা। প্রথম শ্রেণি (যাত্রীপ্রতি) ৫,০০০ টাকা, ডিলাক্স শ্রেণি (দুজন) ১০,০০০ টাকা, ইকোনমি চেয়ার (যাত্রীপ্রতি) ২,০০০ টাকা, সুলভ শ্রেণি/ডেক (যাত্রীপ্রতি) ১,৫০০ টাকা।আবার জাহাজে দুজনের ফ্যামিলি স্যুট ১৫ হাজার টাকা, প্রথম শ্রেণি কেবিন এক সিটের ৫ হাজার টাকা, রিলাক্স শ্রেণি কেবিন ২ সিটের ১০ হাজার টাকা, আর প্রথম শ্রেণি সেমি-ডাবল প্রতিজনের জন্য ৭ হাজার টাকা, ইকোনমি চেয়ার প্রতিটি ২ হাজার টাকা এবং সুলভ শ্রেণি ও ডেক যাত্রীপ্রতি ১ হাজার ৫শ টাকা। জাহাজে প্রাতঃরাস, মধ্যাহ্নভোজ, বৈকালিক নাস্তা ও নৈশভোজের ব্যবস্থা থাকবে। তবে পর্যটকগণকে খাবার তালিকা অনুযায়ী আলাদাভাবে মূল্য পরিশোধ করতে হবে বলে বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মিশা জানিয়েছেন।জানা গেছে, জাহাজটিতে খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো থাকবে বলে জানানো হয়েছে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে। আগ্রহী পর্যটকরা যারা এই ভিন্ন মাধ্যমে কলকাতায় যেতে চান, তারা রকেট রিজার্ভেশন নম্বরে (৯৬৬৭৯৭৩) ফোন করে টিকিট বুকিং দিতে হবে। বাংলামটর ফেয়ারলি হাউজ কার্যালয় থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যেতে পারে। আবার বিআইডব্লিউটিসির বাণিজ্যিক পরিচালক এনএসএম শাহাদাত আলী, ফোন নং-৯৬৩৪৯২০, মোবাইল নং-০১৭১১৩৯২৫৭০, মহাব্যবস্থাপক শেখ মু. নাসিম ফোন-৯৬৩৪২৭২ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। আন্তজার্তিক রিভার ক্রুজ ভ্রমণ অনেক দেশেই চালু রয়েছে। একাধিক দেশে নদীপথে ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতার কথা ভ্রমণপিপাসুরা জানিয়েছেন। বিলাসবহুল জাহাজে প্রায় সব ধরনের সুবিধা-সংবলিত ব্যবস্থায় পর্যটকরা ভেসে বেড়ান নৌপথে, নদী সমুদ্রের স্নিগ্ধতা উপভোগ করেন। এই ধরনের সুযোগ বাংলাদেশিদের জন্যেও অবশেষে আসলো। সরাসরি বাংলাদেশ থেকে বিলাসবহুল জাহাজে করে আন্তর্জাতিক ট্যুর দেয়ার এই সুযোগটি নিশ্চয়ই লুফে নেবেন বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুরা।