Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজপথের আন্দোলনে সবাই সফল শুধু বিএনপি নয়!

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

মার্চ ২২, ২০১৯, ০৬:১০ পিএম


রাজপথের আন্দোলনে সবাই সফল শুধু বিএনপি নয়!

বিএনপির আন্দোলনে প্রধান বাধা ক্ষমতাসীন দল! রাজপথে আন্দোলনে নামলেই বিএনপিকে হামলা-মামলা, নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা বিএনপির এ অভিযোগে হাসে ক্ষমতাসীন দলও! কারণ এ সরকারের আমলেই হেফাজতের দাবিতে গ্রিক মূর্তি অপসারণ, নূরদের আন্দোলনে কোটা বাতিল, শিশুদের দাবিতে সড়ক আইন পাস, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, আন্দোলনে এমপিওভুক্ত হয়েছেন শিক্ষকরাও, পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে মজুরি নির্ধারণ, মানুষের মুখে কালি মেখে শ্রমিক আন্দোলনে থমকে গিয়েছিল পুরো দেশ! এ ছাড়াও ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নজিরবিহীন আন্দোলনে সরকারকে ধাক্কা, ২০১৩-১৪ সালে টানা জামায়াত শিবিরের অরাজকতা। রামপাল নিয়ে বামপন্থিদের আন্দোলনও ছিলো উল্লেখযোগ্য। শুধু আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি! এ নিয়ে বিএনপির ওপরও ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতারা। দলের প্রধান নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের বছর পূর্ণ হলেও কিছুই করতে পারেনি দলটি। কালো পতাকা মিছিল ও প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে মানবন্ধন ছাড়া দিতে পারেনি কোনো জোরালো কর্মসূচিও। হাইকমান্ডের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও অনেক নেতা দলীয় পরিচয় মুছে ফেলছে। কারণ আইনি প্রক্রিয়ায় ও আন্দোলনে খালেদার মুক্তির আশা প্রায় ছেড়ে দিয়ে এখন বিএনপিতে চলছে পুনর্গঠন। যদিও ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করে সাংগঠনিকরূপে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিএনপি। সমপ্রতি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে বিএনপি। ইঙ্গিত রয়েছে চলতি সপ্তাহে আসতে পারে কয়েক ডজন কমিটির ঘোষণা।সমপ্রতি মাঠপর্যায়ের নেতারা প্রকাশ্যে আন্দোলন চাইলেও ক্ষমতাসীন দলের বাধার ইঙ্গিত দিয়ে বারবার সটকে পড়ছেন অন্যতম এ রাজনৈতিক দলটির নীতিনির্ধারকরা। ডাকসু নির্বাচন ও নিরাপদ সড়ক দাবিতে দেশজুড়ে নাড়িয়ে দেয়া আন্দোলনের পর প্রশ্ন উঠেছে আসলেই কী আ.লীগ বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে? নাকি দলের ব্যর্থতা। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দাবি— বিগত সময়ের চাইতে আ.লীগ সরকারের আমলেই মানুষ বেশি আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের কয়েকজন নেতার যাবজ্জীবন রায়ের পরে গণজাগরণ মঞ্চের তীব্র আন্দোলনে ফের নজিরবিহীন রায় এ সরকারের আমলেই হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে সরকার সংসদে বিল উত্থাপন করতে বাধ্য হয়েছে। কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আন্দোলনের দাবি নিয়ে দীর্ঘ সময় প্রেস ক্লাবের সামনে সাদা কাপড় পরে অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির অনুমোদন পেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক মূর্তি’ অপসারণে হেফাজতের টানা বিক্ষোভ ও আন্দোলনের একপর্যায়ে হেফাজতের দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে সরকার। গভীরত রাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক মূর্তি’ সরানো হয়েছে। এই সরকারের আমলেই নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের ইতিহাস তৈরি করেছেন শিশুরা। শিশুদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সড়ক আইন পাস করেছে এই সরকার। জনগণ ও সরকারকে জিম্মি করে পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনও অনেকের জানার বাইরে নয়। একদিন নয়, দুদিন নয়, টানা আন্দোলন করে মানুষের মুখে কালি মেখে পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করেছিল এই শ্রমিকরা। এ ছাড়া পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়াও ২০১৩ সালে শাপলাচত্বরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতে হেফাজতের নজিরবিহীন আন্দোলনে সরকারকে ধাক্কা দিতেও সফল হয়েছে হেফাজত। যদিও হেফাজতের দাবি নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিলো। এছাড়া ২০১৩-১৪ সালে টানা জামায়াত-শিবিরের অরাজকতা ও মানুষ পোড়া গন্ধে থমকে গিয়েছিল পুরো রাষ্ট্র। রামপাল নিয়ে বামপন্থিদের আন্দোলনও ছিলো উল্লেখযোগ্য। শুধু বিগত সময়ে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি! রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনে বিএনপিই বাধা। ক্ষমতাসীন দল নয়। এ নিয়ে আমার সংবাদের মুখোমুখি হয়েছেন ক্ষমতাসীন আ.লীগের শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, বিএনপি এখন মানুষের কাছ থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আগুন সন্ত্রাসের কারণে এ দলটি থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ, ক্যান্টনমেন্ট থেকে অবৈধ পন্থায় সৃষ্টি হওয়া এ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত। এ দলটি ক্ষমতায় গেলে বিদেশ থেকে ট্রাকে ট্রাকে অস্ত্র নিয়ে আসে, জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবায় দেশকে ক্ষতবিক্ষত করে, গ্রেনেডহামলা, বোমাহামলা করে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে, একাত্তরের ঘাতক রাজাকারদের নিয়ে ক্ষমতা পরিচালনা করে। আপাতত এ দলটির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিএনপি এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রেস কনফারেন্সের রাজনীতি করে বলেও অভিযোগ আ.লীগের প্রভাবশালী এ নেতার। ক্ষমতাসীন দল সব সময় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে বাধা দেয় আমার সংবাদের এমন প্রশ্নে শামীম ওসমান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। কারণ ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, শিশু-কিশোরদের আন্দোলনসহ অনেক কিছুই হয়েছে, কই সরকার তো বাধা দেয়নি। আসলে বিএনপি দেউলিয়া হয়ে এমন হাস্যকর অভিযোগ করছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার দেশটাকে কারাগারে পরিণত করেছে। গুম-খুন-অত্যাচার করে হাহাকার তৈরি করেছে। দেশের তরুণ-যুবকরা বাড়িতে ঘুমাতে পারে না। পুলিশের ভয়ে, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সমপ্রতি একটি অনুষ্ঠানে আরও তথ্য দিয়ে ফখরুল বলেন, দেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে ৯৮ হাজারোর বেশি মামলা দেয়া হয়েছে, আসামির সংখ্যা ২৫ লাখের ওপর। এভাবে তারা অবৈধভাবে টিকে থাকতে চাচ্ছে। এভাবেই তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজকে তারই আয়োজন তারা সম্পন্ন করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, এখন আমি বাড়িতে ঘুমাতে পারি না, আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। আমার পরিবার, দলের নেতাকর্মী এবং নাটোরের জনগণ আমাকে নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকেন। কখন আমাকে গ্রেপ্তার করে, কখন যে গুম হই।তবে ভিন্ন সূরে কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, রাজপথে লড়াই ও রক্ত দেয়া ছাড়া দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। লড়াই ও রক্ত ছাড়া বেগম জিয়াকে আপনি মুক্ত করবেন এ রকম যদি কেউ ভেবে থাকেন, তাহলে তা অসম্ভব। আমরা হলরুমে আলোচনা করতে আসি, কারণ আমরা নিরাপদ বোধ করি। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে- হরতাল ছাড়া এ দেশে গণতন্ত্র আসেনি, হরতাল ছাড়া আইয়ুব খানকে এ দেশ থেকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। আর সশস্ত্রবাহিনী ছাড়া ইয়াহিয়া খানকে উৎখাত করা যায়নি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলের মুখপাত্র মো. নাসিম ব?লে?ছেন, প্রেস ক্লাবে বক্তৃতা দিয়ে, ব্রিফিং করে আর যাই হোক দলকে বাঁচাতে পারবে না বিএনপি, এটা বলে দিলাম। বিএনপির বর্তমান পরিণতির জন্য তারা নিজেরাই দায়ী বলেও মন্তব্য করে নাসিম বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা জেলে রাখতে চাই না। কিন্তু এখানে আইন আদালতের বিষয় আমরা কী করব বলেন। আমরা সবসময়ই চাই। এ দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হোক। বিরোধী দলহীন দেশ আমরা চাই না। আমরা একসময় বিরোধী দল থেকেই ক্ষমতায় এসেছিলাম। ১৯৯৬ সালে আমরা বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করে রাস্তা-মাঠ কাঁপিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলাম।