Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

নারী উদ্যোক্তার টাওয়ার নির্মাণের টোপ হাতিয়েছেন পোনে দুই কোটি টাকা

প্রিন্ট সংস্করণ॥নুর মোহাম্মদ মিঠু

মার্চ ২৪, ২০১৯, ০৬:৫৬ পিএম


নারী উদ্যোক্তার টাওয়ার নির্মাণের টোপ হাতিয়েছেন পোনে দুই কোটি টাকা

পরিচয় থেকে প্রণয়। তবে পরিচয়টা যেমন তেমন হলেও নারী উদ্যোক্তা মাহফুজা আক্তার লাকির সাথে প্রণয়টাই যেন ভালো হয়ে উঠেনি জনৈক ইমরুল বাহার সুমন নামের এক ব্যবসায়ীর। উল্টো প্রণয় গিয়ে ঠেকলো মামলায়। হ্যাঁ পাঠক, অসংখ্য নারী উদ্যোক্তার প্রশংসনীয় গল্প আপনারা শুনেছেন গণমাধ্যমে। তবে রাজধানীর বুকে হাজারো নারী উদ্যোক্তার মধ্যে থেকে অর্থলোভী এক ভয়ঙ্কর নারী উদ্যোক্তা মাহফুজা রশিদ লাকির প্রতারণার ছোট্ট একটি গল্প তুলে ধরছি আজ। উদ্যোক্তা হওয়ার সুবাদে এ নারী তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত (কখনো কর্মচারী, কখনো কর্মকর্তা) নোমান হোসেন বনির মাধ্যমে জনৈক ব্যবসায়ী সুমনের ব্যক্তিগত অফিসে আসা-যাওয়া করতেন এবং সম্পর্ককে এমন উচ্চতায় নিয়ে যান- যাতে ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর টোপ দিয়ে হাতিয়ে নিতে পারেন মোটা অঙ্কের অর্থ। সবশেষে টাকা হাতানোর এ ধান্দায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা হাতিয়ে মামলার মাধ্যমে আইনি শক্তিকে ব্যবহার করে ব্যবসায়ী সুমনকে কোণঠাসা করে এখনো পর্যন্ত মোটামুটি সফলও হয়েছেন বটে। ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে সিটি গোল্ডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পাবনায় এ নারীর রয়েছে একটি এগ্র্রো প্রজেক্ট। এসব ছাড়াও নিজ জেলা পাবনায় তার নামে লাকি টাওয়ার নির্মাণে পুঁজি খাটানোর কথা বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঙ্কে সবমিলিয়ে হাতিয়ে নেন এক কোটি বিরাশি লাখ টাকা। অথচ লাকির ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে নিজের খাটানো পুঁজি থেকে লাভের হিসাব কষে ফলাফল শূন্য দেখে সহজ সরল ইমরুল বাহার সুমন লাকির কাছে টাকা ফেরত চান। টাকা চাওয়ার পর থেকেই সুমনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে লাকি জড়িয়ে যায় প্রতারণা ও সুমনের বিরুদ্ধে মামলা-মামলা খেলায়। অর্থ লোভী এ নারী উদ্যোক্তা এতটাই ভয়ঙ্কর- যার মাধ্যমে তিনি ইমরুল বাহার সুমনকে চিনেছেন তাকেও পর্যন্ত ছাড়েননি মামলার বেড়াজাল থেকে। ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর টোপ দিয়ে এক কোটি বিরাশি লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তা ফেরত না দেয়ার ফন্দি-ফিকির করে মামলার খেলায় মত্ত রয়েছেন এ নারী। হাসিমুখে কথা বলে টাকা আদায়ের পরই হয়ে উঠেছেন ভয়ঙ্কর। উদ্যোক্তা লাকির প্রতারণার শিকার ইমরুল বাহার সুমন বলেন, ২০১৫ সালে নারী উদ্যোক্তা মাহফুজা রশিদ লাকির সাথে নোমান হোসেন বনির মাধ্যমে পরিচিত হন তিনি। পরিচয়ের কিছুদিন পরই লাকি সুমনকে তার ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর কথা বলেন। লাকির অসংখ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে উল্লেখ করে পুঁজির সংকটের কথা বলেন সুমনকে। মুনাফার প্রস্তাব দিয়ে লাকি বিভিন্ন সময়ে সুমনের কাছ থেকে পুঁজি হিসেবে মোট এক কোটি বিরাশি লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ দীর্ঘদিন পর লাকির কাছ থেকে টাকা চেয়ে কোনোভাবেই ফেরত না পাওয়ায় আইনি আশ্রয় নেন বলেও জানান সুমন। কিন্তু আইনের আশ্রয় নেয়ার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা করেই চলেছেন তিনি। বারবার টাকা চাওয়ায় লাকি তাকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পান্থপথ শাখায় এক কোটি বিরাশি লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। অথচ প্রায় এক মাস পর সে চেক ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডস্থ মার্কেন্টাইল ব্যাংক শাখায় উপস্থাপন করলে সেটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফান্ড নাই মর্মে ডিজঅনার হয়ে ফেরত আসে বলেও জানান সুমন। সবশেষে উপায়ন্তর না পেয়ে বিভিন্নভাবে টাকা চেয়ে চাপ সৃষ্টি করলে লাকি টাকা পরিশোধ না করে উল্টো মিথ্যা মামলার আশ্রয় নেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা লাকির সাথে আমার টাকা লেনদেনের ঘটনার সঠিক তদন্ত করলে পুরো ঘটনাটির সত্যতা বেরিয়ে আসবে। ঘটনার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে পরিচয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে উভয়ের মধ্যে লেনদেনকৃত টাকা ফেরত চাইলে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পান্থপথ শাখায় চেকের মাধ্যমে সুমনের এক কোটি বিরাশি লাখ টাকা দেয়ার নাটক করে (চেক নম্বর- এসবিএ-৫৩৮৯৮০৮, এ/সি নং-০০৩০৩১০০৪৭৯৩৪) লাকি। যা মার্কেন্টাইল ব্যাংক ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোড শাখা থেকে ক্যাশ করতে গিয়ে ডিজঅনার হয়। অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকায় গত ২২-০৮-২০১৭ তারিখে ওই চেক ফেরত আসে। চেক ডিজঅনারের বিষয় ও পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে লাকি বরাবর লিগ্যাল নোটিস রেজিস্ট্রিযোগে পাঠানোর ৩০ দিনের মধ্যে সুমনের পাওনা টাকা পরিশোধের অনুরোধও করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক মাসেও জবাব না দেয়ায় সুমন ২০১৮ সালের শুরুতে ১ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে (২০০৬-সংশোধনী) এ ১৩৮ ধারায় লাকির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লাকি তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ৫টি মামলা দায়ের করে বলেও জানান সমুন। সুমন অভিযোগ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনসহ পিবিআই ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে দুটি মামলা একই ধারায় তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় পিবিআই আমার সাথে কথা না বলেই লাকির কাছ থেকে মোট অংকের ঘুষ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে অন্য মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। সুমন আরও জানান, আমার বিরুদ্ধে একই ধারার মামলায় বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। পিবিআইয়ের মামলায় বলা হয়েছে- ইমরুল বাহার সুমন লাকির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (দোকান) থেকে চেক চুরি করেছে আবার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মামলায় বলা হয়েছে- নোমান হোসেন বনি লাকির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (দোকান) থেকে চেক চুরি করেছে। অথচ লাকির ধানমন্ডিস্থ দোকান থেকে চেক চুরি হওয়ার কথা বললেও ধানমণ্ডি থানা পুলিশে অভিযোগ না করে রহস্যজনক কারণে পাবনার কেটি থানাতে সাধারণ ডায়েরি করে লাকি। এছাড়া লাকির চেক হারানোর বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেও অবগত করেননি বলে জানান তিনি। সবশেষে- আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে মাহফুজা রশিদ লাকি- এমন দাবি করেন ইমরুল বাহার সুমন।
ইমরুল বাহার সুমনের করা এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মাহফুজা রশিদ লাকির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ থাকায় তার কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। চেক চুরি মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. সাজাহান বলেন, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন এবং বলার মতো এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে খুব শিগগিরই তদন্ত কাজ শেষ হবে এবং পুরো ঘটনাটির প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।