Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএনপি ছেড়ে একলা পথে জামায়াত!

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

মার্চ ২৯, ২০১৯, ০৭:২৪ পিএম


বিএনপি ছেড়ে একলা পথে জামায়াত!

*বিএনপির দাবি, জামায়াত সরকারের প্রেসক্রিপশনে চলছে!
*খালেদার দলের অস্তিত্ব নষ্টে, হামলা-মামলা থেকে বাঁচতে, দলীয় সম্পদ টিকিয়ে রাখতে, জামায়াতের প্রকাশ্য রাজনীতির নয়া কৌশল
*সাত বছর পর পুরনো কৌশলে ফিরলে দল অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছে একটি অংশ
*খালেদার জোটে জামায়াত নেই— এ নিয়ে জামায়াত অথবা বিএনপির পক্ষ থেকে শিগগিরই ঘোষণা

জামায়াতের আরেকবার ডিগবাজি। দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে আর থাকছে না বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত দলটি। জোট ছেড়ে একলা চলা নীতি গ্রহণ করেছে দলটি। বিএনপি ও জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি— ইতোমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ডকে জামায়াতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, বিএনপি জোটের সঙ্গে জামায়াত আর থাকছে না। জামায়াত ইস্যু নিয়ে সমপ্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও দীর্ঘ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। জামায়াতও সমঝোতায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নয়া কৌশলে হাঁটছে। খালেদার জোটে জামায়াত নেই— এ নিয়ে জামায়াত অথবা বিএনপির পক্ষ থেকে শিগগিরই এমন ঘোষণা আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির দুজন হাইকমান্ড ও জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুলের কাছে স্পষ্ট বক্তব্য চাইলে কেউ আপাতত মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে। আমি বরাবরই জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে রাজনীতিতে অস্তিত্বসংকটে ভুগছিলো যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন নামে দল গঠনের দাবি জানিয়ে দলত্যাগ করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এর কয়েকদিনের মাথায় সংস্কারপন্থি নেতা শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুও বহিষ্কৃত হন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ফের আলোচনায় আসে দলটি। বিশেষ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং সংস্কারের পক্ষে তার খোলামেলা বিবৃতিতে দলের বিভিন্ন স্তরে বেশ নাড়া পড়ে। নতুন প্রজন্মের একটি অংশ ব্যারিস্টার রাজ্জাকের বিবৃতিকে গ্রহণ করে দলের চলমান আদর্শের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য দিতেও দেখা গেছে। বহুমুখী চাপে তখন জামায়াতে ইসলামীতে ভাঙন ও বদলে যাওয়া নিয়ে রাজনীতি থেকে কিছু সময় হারিয়ে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলো। একাধিক নামে বিভক্ত হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু দলের বড় একটি অংশের চাপে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে মত দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার। কলঙ্ক মুছে নতুনদের নিয়ে দল গঠনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো তা থেকে ফিরে আসা হয়েছে। দলটির আরও কয়েকজন নেতার মত— দুই নেতার ইস্যু নিয়ে দলটিতে এখন আর কোনো চাপ নেই। সামপ্রতিক সব ঝামেলা মোকাবিলা করতে সফল হয়েছে। বিভক্তির চিন্তা থেকেও ফিরে আসা হয়েছে। তৃণমূলেও দলের স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। পুরনো নীতিতেই জামায়াতে ইসলামী চলবে। তবে সব দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চেষ্টা করবে দলটি। দুই নেতাকে নিয়ে সামপ্রতিক ইস্যুর পর আগামী রাজনীতির জন্য নতুন কৌশলও হাতে নিয়েছে বলে মত দলটির। গত দুই সপ্তাহ আগে ঘরোয়াভাবে বিএনপিকে জামায়াত জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে আর জোটে থাকছে না দলটি। জামায়াতে ইসলামী আপাতত এককভাবেই রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড মুখ না খুললেও মধ্যম সারির এক নেতা যিনি সব সময় জামায়াতবিরোধী ছিলেন, ওই নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, রাজনীতিতে জামায়াতের ডিগবাজি নতুন কিছু নয়। এই দুঃসময়ে বিএনপিকে নতুন সংকটে ফেলতে জামায়াতে ইসলামী সরকারের প্রেসক্রিপশনে চলছে বলেও ধারণা করছেন তিনি। খালেদার দলে অস্তিত্ব নষ্টে এটি জামায়াতের রাজনৈতিক ফাঁদ, দাবি ওই নেতার। সাম্প্রতিক ইস্যু মনে করিয়ে বিএনপির ওই নেতা আরও বলেন, হামলা-মামলা থেকে বাঁচতে, দলীয় সম্পদ টিকিয়ে রাখতে একটি অংশের চাপে জামায়াত নতুন কৌশল তৈরি করেছে। জামায়াতের সাময়িক এ কৌশলে দলটি রাজনৈতিক চরিত্র নষ্ট করে ফেলছে। তবে এতে বিএনপি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজনৈতিক শক্তি মোকাবিলা করতে পারলে আগামীতে রাজনীতিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বীও আর কেউ থাকবে না বলে মনে করেন বিএনপির এ মাঠপর্যায়ের নেতা। ওই নেতা ইঙ্গিত দিয়ে আরও বলেন, শিগগিরই জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেয়া হলো— বিএনপির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসবে।বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের সংস্কারপন্থি নেতা আহসান হাবিবের (ছদ্মনাম) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এখন থেকে খালেদা জিয়ার জোটের সঙ্গে জামায়াত আর থাকবে না। তবে তিনি ক্ষুব্ধ! সংস্কারপন্থি এই জামায়াত নেতার ভাষ্য— কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিতে যদি বিএনপির সঙ্গ ত্যাগের সিদ্ধান্তে আসে তাহলে জামায়াতের আদর্শের মাথাকাটা যাবে! রাজনীতিতে আর জামায়াত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, ২০১২-১৩ সালে জামায়াতের ঘরোয়া বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাবনা এসেছিলো। তখন দলের কট্টরপন্থি একটি অংশ দাবি তুলেছিলো, কোনোভাবেই রাজনৈতিক সমঝোতায় জামায়াত মাথানত করবে না। সেই গোঁড়ামিতে জামায়াত এখন প্রায় অস্তিত্বসংকটে ভুগছে। এখন ওই কট্টরপন্থিরাই যদি সাত বছর পর পুরনো সিদ্ধান্তে ফিরে আসে তাহলে জামায়াত আর কখনোই রাজনীতিতে সফলতার মুখ দেখবে না। দলের এই ডিগবাজি নতুন প্রজন্মের কাছে উন্মোচিত হলে এই দলে কেউ আর সম্পৃক্ত হবে না।জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে, এমন একটি কথা শোনা যাচ্ছে। আমার সংবাদের পক্ষ থেকে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের কাছে জানতে চাইলে তারা কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য দেননি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, চলমান ইস্যুতে দল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জোটের আকার ছোট করা এবং বিএনপিকে পুনর্গঠন করা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে দলে আলোচনা চলছে। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, আমি বরাবরই জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। কারণ জামায়াত বিএনপির জন্য বড় দায় হয়ে পড়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আলোচনা থেকে জানা যায়, জামায়াত ছাড়তে হলে কীভাবে তা করা যায় এ নিয়ে আলোচনা চলছে।